মালটা। নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এক দেশ। নয়নাভিরাম সুন্দর দেশটিতে সারা বিশ্বের পর্যটকদের সমাগম। একে তো শেঙ্গেনভুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ, দ্বিতীয়ত বেতনকাঠামো আকর্ষণীয়। সব মিলিয়ে মালটায় দক্ষ শ্রমিকদের জন্য রয়েছে চাকরির সুযোগ। বসবাসের জন্যও মালটা চমৎকার জায়গা।
মালটা হচ্ছে পর্যটননির্ভর একটি দেশ। সারা বিশ্বের মানুষ আসেন এখানে। ফলে জায়গাটি একটি আন্তর্জাতিক নগরীতে পরিণত হয়েছে। আর তাই ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফলে শিক্ষিত ও পেশাজীবীদের চাকরি বা বসবাসের জন্য মালটা চমৎকার একটি দেশ। তাছাড়া এখানকার আবহাওয়া সবার জন্যই মানানসই। খুব গরমও নেই, শীতও নেই। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার কারণে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপ আমেরিকার লোকজন এখানে থাকতে বা বেড়াতে পছন্দ করেন।
হিসাবরক্ষক, ব্যাংক-বীমা কর্মী, ডাক্তার, নার্স, প্রকৌশলী, আইটি এক্সপার্ট, গেমিং এক্সপার্টের চাহিদা রয়েছে দেশটিতে। এছাড়া তারকা হোটেল, গেস্ট হাউজ, রেস্টুরেন্ট, বার; এগুলোতে কাজের চাহিদা আরও বেশি। রয়েছে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতেও কাজ করার সুযোগ। হেল্থকেয়ার, ক্লিনিং, মার্কেটিং, নির্মাণ; এসব ক্ষেত্রের কর্মী সংকট রয়েছে দ্বীপদেশ মালটায়। পর্যটন-নগরী হওয়ার কারণে এখানে রূপচর্চায় পারদর্শীদের জন্যও কাজের সুযোগ আছে। ভালো সুযোগ রয়েছে অভিজ্ঞ ড্রাইভারদের। এমনকি মোটরসাইকেল চালনায় অভিজ্ঞরাও এখানে ডেলিভারিম্যান হিসেবে কাজ করতে পারেন।
মালটায় বসবাসরত বাংলাদেশি আইনজীবী নাজমুল ইশতিয়াক জানান, দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে দেশটিতে। বাংলাদেশের দক্ষ পেশাজীবীরা সেই সুযোগ নিতে পারেন। এখানে রেসিডেন্সি পারমিট, পিআর বা পারমানেন্ট রেসিডেন্সি ও নাগরিকত্ব পাওয়ার সহজ সুযোগ রয়েছে। অদক্ষ কর্মী যারা, আসতে পারেন তারাও। এখানে এসে কেউ যদি চাকুরীর পাশাপাশি প্রফেশনাল কোনো কোর্স বা প্রশিক্ষণ নেন তাহলে তার বেতনও বাড়বে, নিজের ভবিষ্যতও নিশ্চিত করতে পারবেন। অদক্ষ বা অনভিজ্ঞ লোকদের জন্যও মালটায় কাজের সুযোগ আছে, সেক্ষেত্রে বেতন কিছুটা কম।
জানা গেছে, মালটায় অদক্ষ শ্রমিকেরা সর্বনিম্ন এক হাজার ইউরো বেতন পেয়ে থাকেন। ওভারটাইমের সুযোগ আছে। অবস্থা বা কাজের ধরণ ভেদে কেউ কেউ ফ্রি থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও পেয়ে থাকেন।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে নাজমুল ইশতিয়াক বলেন, অনেকেই মনে করেন মধ্যপ্রাচ্যের মতো এখানে ভিসা বিক্রি হয়। মনে রাখতে হবে এটি শেঙ্গেনভুক্ত ইউরোপের দেশ। মালটায় কেউ আসলেন মানে তিনি কিন্তু ২৯টি দেশে যাওয়ার পারমিশন পেলেন। এটার বিশাল একটা ভ্যালু রয়েছে। তাছাড়া ইউরোপের অন্যান্য দেশে যাওয়া এখন বিশাল দুঃসাধ্য ব্যাপার। আবার কিছু কিছু দেশে যাওয়ার ভিসা পাওয়া গেলেও সেখানকার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না, বেতনও খুব কম। সুতরাং মালটায় আসতে চাইলে এসব কিছু ভেবে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই আসা উচিত। এখানে আসলে ভবিষ্যৎ যেমন নিশ্চিত হয়ে যায়, সেজন্য খরচও করতে হয় তুলনামূলক বেশি।
মালটায় বসবাসরত স্পা বিশেষজ্ঞ সিলভিয়া টেইলর জানান, যুক্তরাজ্যে থাকার সময় তিনি বাংলাদেশিদের কাছ থেকে দেখেছেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে তার পজিটিভ ধারণা রয়েছে। তিনি জানান, বাংলাদেশের মেয়েরা পরিশ্রমী এবং মেধাবী। তারা সহজে যে কোনো কাজ আয়ত্ব করতে পারে। কথাপ্রসঙ্গে জানালেন, বাংলাদেশি নারীদের তিনি শিক্ষানবিশ হিসেবে নিতে আগ্রহী।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে মালটায় এখনো মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া কিছুটা সহজ। যদিও আগে তা আরও সহজ ছিল। বৈশ্বিক বাস্তবতায় আগামীতে আরও কঠিন হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানান, মালটাতে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে আসতে চাইলে সব মিলিয়ে ৬ থেকে ৯ মাস সময় লাগে। বাংলাদেশে ইতালি দূতাবাসের জন্য নির্ধারিত ভিএফএস সেন্টারে ভিসা আবেদন জমা দিতে হয়। কিন্তু ভিসা মূল্যায়ন করা হয় সরাসরি মালটা থেকে। স্বস্তির খবর হলো, আগে ভারত থেকে কাজটি হতো। বাংলাদেশিদের আবেদনের পেক্ষাপটে এই প্রক্রিয়া থেকে ভারতের সম্পৃক্ততা বাদ দেওয়া হয়েছে। যেমন রুমানিয়াসহ কয়েকটি দেশের ভিসা প্রসেস হয় ভারতে। ভারতে যাওয়ার ভিসা না পাওয়ায় সেসব এখন আটকে গেছে।
নাজমুল ইশতিয়াক ঢাকা বিজনেসকে জানান, বাংলাদেশ থেকে অনেকেই তাকে ব্যবসা বা বিনিয়োগ, চাকরি বা পারমিট-ভিসা বিষয়ে জানার জন্য ফোন করেন। কিন্তু বাস্তবিক ব্যস্ততায় আলাদা-আলাদাভাবে কথা বলার সুযোগ কম। তিনি বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি বা ব্যক্তিগতভাবে কেউ আসতে চাইলে তাদের ই-মেইলে যোগাযোগের (bdglobalcareer@gmail.com) পরমার্শ দেন। তাছাড়া বাংলাদেশ-মালটা বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনে সহযোগিতার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আছেন। আগ্রহীরা সংগঠনের ইমেইল: info@bmba.org.mt; Website: www.bmba.org.mt এবং হোয়াটস অ্যাপ নাম্বারে +35699241016 যোগাযোগ করতে পারেন।