২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



জানা-অজানা
প্রিন্ট

সুইচ ব্যাংক কী, গ্রাহক কারা

নুরজাহান নুর || ১৬ জুন, ২০২৩, ০৬:০৬ পিএম
সুইচ ব্যাংক কী, গ্রাহক কারা


আপনি হয়তো হলিউড বা বলিউডের একটি ক্রাইম থ্রিলার মুভি দেখছেন। একজন রাজনীতিবিদ বা এক গডফাদার জনগণের টাকা আত্মসাৎ করে ব্যাংকে রেখে দিয়েছে। মুভির নায়ক একজন পুলিশ অফিসার। চেষ্টা করছে টাকা সমেত গদফাদারকে পাকড়াও করার জন্য। কিন্তু বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। কারণ টাকা সুইচ ব্যাংকে। 

এই দৃশ্য দেখে আপনার মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগবে, কী এই সুইচ ব্যাংক? কোথায় আছে এই ব্যাংক? আপনার এসব প্রশ্নের জবাবেই আমাদের আজকের প্রতিবেদন। 

সুইচ ব্যাংক কী 

সুইচ ব্যাংক আসলে একক ব্যাংক নয়। ‘সুইচ’ শব্দটি এসেছে  ‘সুইজারল্যান্ড’ থেকে। অর্থাৎ সুইজারল্যান্ডের সব ব্যাংককে একত্রে সুইচ ব্যাংক বলা হয়। এর মাধ্যমে একটি ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক বোঝানো হয়। 

কিভাবে গড়ে উঠলো সুইস ব্যাংকিং ব্যবস্থা

সুইস ব্যাংকিংয়ের ইতিহাস অনেক পুরনো৷  ১৩ শতকের শুরুর দিকে ইউরোপের বিভিন্ন জায়গা থেকে  ব্যবসায়ীরা সুইজারল্যান্ডে এসে পৌঁছান। এই ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগ ছিলেন ইহুদি। বিশপ এডহেমার ফাবরি ১৩৮৭ সালে জেনেভার ব্যাংকারদের সুদের ব্যবসায়ের অনুমতি দেন। ইতালি, ফ্রান্স ও জার্মানির মতো  দেশগুলো থেকে অপেক্ষাকৃত ছোট দেশ সুইজারল্যান্ডের মধ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যের রুট হয়ে দাঁড়ায়। এর আগে, বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিল জেনেভা।  ১৬ শতকের দিকে জন কেলভিনের প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চভিত্তিক ধর্ম-সংস্কার ব্যাংকিং ব্যবসার গতিকে বৃদ্ধি করে এবং সুদ ব্যবসাকে পুরোপুরি বৈধতা দেয়। একইসময়ে সুইজারল্যান্ডের আশেপাশের অঞ্চলগুলোর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছিল। ওইসব অঞ্চল থেকে অনেকেই তাদের সব অর্থ সম্পদ নিয়ে সুইস অভিবাসী হতে শুরু করে। ১৭ শতকের শুরু থেকেই জেনেভাকে কেন্দ্র করে অনেকগুলো আর্থিক লেনদেনের প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।

১৭১৩ সালে গ্রেড কাউন্সিল অব জেনেভা ব্যাংকিংয়ের গোপনীয়তার নীতিমালা প্রকাশ করা হয়। এই নীতিমালায় একজন গ্রাহককে চরম গোপনীয়তার নিশ্চয়তা দেয়। ব্যাংকার তার গ্রাহক ব্যতীত আর কারও সঙ্গে কোনো তথ্য বিনিময় করতে বাধ্য নয়। ১৭১৩ সালের এই নীতিমালায় কর ফাঁকিবাজদের সুস্পষ্টভাবে ছাড় দেওয়া হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন৷ ১৭৪১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে সুইজারল্যান্ডের প্রথম ব্যাংক ওয়েগেলিন অ্যান্ড কোং প্রতিষ্ঠা হয়। ১৮৫৪ সালে ছয়টি ব্যাংক মিলে সুইস ব্যাংক করপোরেশন গঠন করে।  ১৯ শতকে ইউরোপের কমবেশি প্রত্যেকটি দেশেই যখন যুদ্ধের দামামা বাধছে, তখন বিত্তশালীরা তাদের অর্থ রাখতে সুইজারল্যান্ডকেই বেছে নেয়৷ ১৯৩৪ সালে ফ্রান্স সরকার ক্ষিপ্ত হয়ে প্যারিসের সুইস ব্যাংক শাখায় হানা দেয়। সব নথি জব্দ করে। বেশ কিছু কর ফাঁকিবাজকে তারা শনাক্ত করতে সমর্থ হয়৷

পরবর্তীকালে এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে সুইসরা ১৭১৩ সালের আইনকে আরও কঠোর করে দেয়৷ আর ওই সময় তৈরি হয় সুইস ফেডারেল ব্যাংকিং ল’ নামের নতুন আইন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে  ও যুদ্ধ চলাকালে কোনো দেশের ব্যাংকই জার্মান মুদ্রা গ্রহণ করতে রাজি হচ্ছিল না। আর তখনই জার্মানদের ভরসা হয়ে দাঁড়ালো সুইস ব্যাংকগুলো। একইসঙ্গে তারা নাৎসীদের লুট করা স্বর্ণ জমা রাখছিল। আবার ইহুদিদের সম্পদও গচ্ছিত রাখছিল। ১৯৯৭ সালে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সুইস ব্যাংক করপোরেশনের উত্তরাধিকারী ইউবিএস এবং ক্রেডিট সুইস ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার ইহুদি পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়। সাম্প্রতিক, সময়ে কিছু জার্মান রাজনৈতিক নেতা সন্দেহ করেছিলেন সুইস ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য জার্মানির প্রাদেশিক অর্থবিভাগে গুপ্তচর নিয়োগ করেছে। তবে এর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

সুইচ ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন কারা 

সিনেমায় দেখে দেখে অনেকেরই ধারণা যে শুধু অপরাধী, বিলিয়নিয়ার, দুর্নীতিবাজ বা সরকারি আমলাদের জন্যই শুধু সুইচ ব্যাংক। কিন্তু এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। যে কেউ চাইলে সুইচ ব্যাংকে হিসাব  খুলতে পারেন। এই ব্যাংক অন্যান্য সাধারণ ব্যাংকের মতোই। অর্থাৎ সাধারণ জনগণও চাইলে এই ব্যাংকে হিসাব খুলতে পারেন। সাধারণত ব্যাংকে অর্থ জমা রাখতে গেলে অর্থের উৎস জমা দেওয়া ছাড়াও কর জমার ছাড়পত্র, ব্যক্তিগত খুঁটিনাটি এবং বিদেশি হলে আগের অ্যাকাউন্ট বা লেনদেনের বিবরণ জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে অর্থ জমা রাখতে হলে গ্রাহকের অর্থের উৎস নিয়ে কোনো প্রশ্নই করা হয় না। ন্যূনতম ১৮ বছর এবং একটি বৈধ পাসপোর্ট থাকলেই সুইজারল্যান্ডের যেকোনো ব্যাংকে অর্থ জমা রাখা যায়। এরকম কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যে, গ্রাহককে খুব উচ্চবিত্ত বা আভিজাত্যপূর্ণ হতে হবে। মাত্র ৫ হাজার সুইস ফ্রাঁ থাকলেই যে কেউ একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে।

সুইস ব্যাংক কেন পছন্দের শীর্ষে 

ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে একজন গ্রাহক সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটি আশা করে, তা হলো গোপনীয়তা। যদি অবৈধ টাকা বা কালোটাকা হয় তবে গোপনীয়তাই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়৷ আর সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকিংয়ের সুনাম ঠিক এখানেই। ডাক্তারের সঙ্গে রোগীর বা উকিলের সঙ্গে মক্কেলের যে বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক ঠিক তেমনি সুইস ব্যাংকের সঙ্গে তাদের গ্রাহকদের সম্পর্ক চরম বিশ্বাসের। সুইস ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের ব্যক্তিগত কোনো তথ্য কাউকেই দিতে বাধ্য নয়। অনেকের ধারণা, সঞ্চিত অর্থের ওপর সুইস ব্যাংক প্রচুর মুনাফা দিয়ে থাকে। সুইজারল্যান্ড এর স্বনামধন্য ব্যাংক ইউবিএস খুব বেশি হলে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ মুনাফা দিয়ে থাকে তাও আবার ক্ষেত্রবিশেষে। গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্যের প্রকাশ ঘটলে সুইস আইন অনুযায়ী ব্যাংকের আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড ভোগ এবং ৪০০ সুইস ফ্রাঁ জরিমানা হতে পারে। এছাড়া, ক্ষতি বিবেচনা করে গ্রাহক ক্ষতিপূরণও পেতে পারেন।


এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে গ্রাহকের গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য সুইজারল্যান্ড আইন সবচেয়ে কঠোর।  সুইস ব্যাংকিং ব্যবসায় আফ্রিকার স্বৈরশাসক বা ল্যাটিন মাদক সম্রাট সবাইকেই চিহ্নিত করা হয়, একটি অদ্বিতীয় নম্বর দিয়ে। নম্বরটির বিপরীতে প্রকৃত ব্যক্তিটিকে সেটি ব্যাংকের হাতে গোনা কয়েকজন কর্মকর্তাই জেনে থাকেন। বছরের পর বছর ধরে সুইজারল্যান্ডের অর্থনৈতিক কাঠামো খুবই স্থিতিশীল। কোনো দেশের অর্থনীতি সে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করে। সুইজারল্যান্ড সর্বশেষ সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়েছিল ১৫০৫ সালে। 

ইউরোপের অন্য দেশগুলো যখন নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তারে মনোযোগ দিয়েছে, সেখানে সুইজারল্যান্ড নিজেদের অর্থনৈতিক কাঠামোকে করেছে অনেক শক্তিশালী। উনিশ শতকের প্রথম দিকে এই পৃথিবী দু’টি বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখি হয়, যার কেন্দ্র ছিল ইউরোপ। সেখানেও নিরপেক্ষ ছিল এই দেশটি। বর্তমানেও সুইজারল্যান্ডকে অত্যন্ত নিরাপদ রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই দেশের অর্থনীতি টালমাটাল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। 

উল্লেখ্য, সুইস ব্যাংকগুলোর ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্ধেকই আসলে বিদেশিদের।

সুইস ব্যাংক এবং অর্থপাচার

সুইস ব্যাংকের দুনিয়াজুড়ে খ্যাতির তুলনায় কুখ্যাতি হয়তো বেশি। আইনের সুযোগ নিয়ে সুইস ব্যাংকগুলো হয়ে উঠেছে কর ফাঁকির স্বর্গ। যদিও বর্তমানে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সুইস ব্যাংকগুলো কিছুটা শিথিল হয়েছে। বর্তমানে সুইস ব্যাংক সুস্পষ্ট প্রমাণের সাপেক্ষে কোনো তথ্য দিয়ে থাকে। এছাড়া জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ শক্তির নিষেধাজ্ঞায় কোনো কোনো স্বৈরশাসকের অ্যাকাউন্টও জব্দ করা হয়। ২০০৫ সাল থেকে অব্যাহত চাপের মুখে ২০১৩ সালে এসে সুইস সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তথ্য বিনিময়ের জন্য একটি আইন করে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফরাসি পত্রিকা ‘লা পারিয়েজে’ জানায়, কর ফাঁকির তদন্ত  হিসেবে ৪৫ হাজার ১৬১ জন গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে ফরাসি কর কর্তৃপক্ষ। এটা নিয়ে অবশ্য বেশ দর কষাকষি করতে হয়েছিল ফরাসিদের। গত বছর অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বা সংক্ষেপে ওইসিডি সম্মেলনে সুইজারল্যান্ড একটি চুক্তি স্বাক্ষর করার পরে ব্যাপারে সম্মত হয়েছিল। চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হলে ষাটটি রাষ্ট্র সুইস ব্যাংক থেকে তাদের নাগরিকদের তথ্য জানতে পারবে।

পাকিস্তানের কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের খবর অনুযায়ী, পাকিস্তান এবং আরও ২১টি রাষ্ট্র একই ধরনের চুক্তি করতে যাচ্ছে। চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হলে ৬০টি রাষ্ট্র সুইস ব্যাংক তাদের নাগরিকদের তথ্য জানতে পারবে। ২০১১ সালে সুইস ব্যাংক লিবিয়ার তৎকালীন শাসক গাদ্দাফি এবং তার ১৯ জন সহযোগীর সম্পদ রাতারাতি জব্দ করে এর আগে সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মিশরের ক্ষমতাচ্যূত প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের সম্পত্তিও জব্দ করেছিল। ধারণা করা হয় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও তার বিশাল সম্পত্তি সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত রেখেছেন। 

তিউনিশিয়ার ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক বেন আলীও বিশাল অঙ্কের অর্থ জমা রেখেছিলেন যা এখন ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলছে। সুইস ব্যাংক নিয়ে কথিত আছে, এখানে প্রচুর বেনামি অ্যাকাউন্ট আছে বাস্তবে কিন্তু এটি মোটেই সত্য নয়।

মুভি বা উপন্যাসের মতো এখানে বেনামি অ্যাকাউন্ট খোলা কখনোই সম্ভব নয়। আইনের কোনো মারপ্যাঁচ ছাড়াই একজন গ্রাহকের তথ্য সুইস ব্যাংক প্রকাশ করে, যখন কোনো গ্রাহক মৃত্যুবরণ করেন। বিগত ৬০ বছর ধরে কোনো গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো প্রকার লেনদেন না করা হয় এবং অর্থের পরিমাণ পাঁচশত সুইস ফ্রার বেশি হয়, তবে সেটা প্রকাশ করা হয়। যদি কোনো উত্তরাধিকারী সম্পত্তির দাবি না করে, তবে একবছর পর সুইস সরকার সেই সম্পদ নিজেদের কোষাগারে জমা করে নেয়।


 ১৯১৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল কনসর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেশন জার্নালিস্ট বা সংক্ষেপে আইসিআইজে তাদের ওয়েবসাইটে সুইসলিক শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ১৩০ জন সাংবাদিকের গবেষণা এটা বেরিয়ে এসেছে যে, এইচএসবিসি ব্যাংকের জেনেভা শাখা ১৮০ বিলিয়ন ইউরো কর ফাঁকি দিয়ে অনেক গ্রাহককেই লুকাতে সহায়তা করেছে।


এই রিপোর্ট প্রকাশ না করতে বিবিসির ওপর প্রচুর চাপ ছিল। অনেকেরই ধারণা সুইস আইন তৈরি করা হয়েছে কালো টাকার মালিকদের জন্য। এটি কিন্তু একদম ভুল। তবে হ্যাঁ, এটি সত্য লুকোচুরির এই আইনের ব্যবহার করে যাচ্ছে আমেরিকার ধনকুবের থেকে শুরু করে তামাম এশিয়ার কর ফাঁকিবাজরা। সুইসরা তাদের ব্যাংকিং ঐতিহ্য ধরে রাখতে যেমন তৎপর, তেমনি অন্যান্য রাষ্ট্রও চাপ দিয়ে সুইসদের তাদের আইন সংস্কার করাতেও তৎপর। বিগত সেপ্টেম্বর থেকে সুইস ব্যাংক ইউরোপ এবং এর বাইরের কিছু দেশের সঙ্গে পূর্ণমাত্রায় তথ্য বিনিময় শুরু করেছে। তাহলে কি সুইস ব্যাংকের গোপনীয়তার অধ্যায় শেষ হতে চলেছে? সত্যি কথা বলতে সময়ই সেটা বলে দেবে।

সুইস ব্যাংক এখন কতটা গোপন

অনেকেই বলছেন যে সুইস ব্যাংক আগের জৌলুশ হারিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা তা মানতে নারাজ। সম্প্রতি জার্মানিসহ কয়েকটি দেশ সুইস ব্যাংকের গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অপরাধীরা অবাধে অর্থ রাখছেন এখানে। ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক বলছে, সুইস ব্যাংকের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ২১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১০০ কোটি ডলার কর থেকে বঞ্চিত হয়। যদিও পানামা, বাহামা, কেইম্যান আইল্যান্ড বা ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের মতো ‘করস্বর্গ’ এখন সুইস ব্যাংকের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে অনেক অফশোর কোম্পানির ব্যাংক হিসাব এখনো সুইস ব্যাংকেই রাখা হচ্ছে।

সুইজারল্যান্ড কিন্তু সেই আর্টিকেল ৪৭ বাতিল করেনি। সুইস ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন তাদের ওয়েবসাইটে লিখে রেখেছে, ‘গোপনীয়তার অধিকার সুইস আইনব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, যা ফেডারেল সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত’।


সুইস ব্যাংকগুলো এখন অবশ্য বেশি নজর দিচ্ছে এশিয়াসহ উঠতি অর্থনীতির দেশগুলোর প্রতি। নতুন করে যেসব দেশে মধ্যবিত্তের সংখ্যা বাড়ছে, ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি, সেসব দেশের দিকেই এখন তাদের নজর। ফলে মোটেই ব্যবসা কমছে না সুইস ব্যাংকগুলোর। এই তো কিছুদিন আগেই দেখা গেল, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের রাখা অর্থও অনেক বেড়েছে। এখনো অর্থ গোপন রাখার বড় জায়গা সুইস ব্যাংক।



আরো পড়ুন