০৮ জুলাই ২০২৪, সোমবার



শিল্প-সাহিত্য
প্রিন্ট

পাঁচটি অণুগল্প

সাইফ বরকতুল্লাহ || ০৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১২:০০ এএম
পাঁচটি অণুগল্প


০১ .ডরোথি

ডরোথি,
অনেক দিন তোমার খোঁজ নেই। সেই করোনার শুরুর দিনগুলোতে প্রায়ই খবর নিতে, কী পড়ছি, কী লিখছি, কী মুভি দেখছি। তোমার প্রিয় কাজুও ইশিগুরোর ‘দ্য রিমেইন্স অব দ্য ডে’ উপন্যাস আর এটি অবলম্বনে তৈরি মুভির কথা মনে পড়ে গেলো। 

জানি না এখন কেমন আছো? তোমার ওখানে করোনার উৎসব।  লকডাউন তোমার শহর। কয়েকদিন হোয়াটসঅ্যাপেও না পেয়ে বিমর্ষ হয়ে পড়েছি। 

তুমি-ই তো আমার ডায়েরিতে লিখেছিলে, একদিন মানুষ মানুষ হবে। থেমে যাবে উদভ্রান্ত পৃথিবীর দুঃস্বপ্নের অগ্নিময় পাথর সময়।  তারপর একদিন পৃথিবীর ঠোঁট থেকে পাপের জমাট বিষাক্ত লালা ঝরে পড়বে মৃত্তিকার শরীর ছুয়ে শূন‌্যের ওপরে। এখন মানুষ স্রোতের বিরুদ্ধে, দানবীয় স্বার্থের অনিঃশেষ জীবনের দিকে।  মানুষের হৃৎপিণ্ড একেকটি দগ্ধ স্মারক।

প্রতিদিন রাতে শুয়ে শুয়ে জানালায় জ্যোৎস্নার আলো দেখি।  আর ভাবি, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ এখন শব্দহীন, দিকচিহ্নহীন।  প্রেমিকার স্পর্শ কিংবা চুম্বনও ফেরাতে পারে না—নতুন পৃথিবীর সবুজ হৃদয়।

যেখানেই থাকো, শান্তিতে থেকো..

ইতি

০২. ডেফুলিয়াপাড়া

ঠিক সীমানার কাছাকাছি ডেফুলিয়াপাড়া। চারপাশ দিগন্তজোড়া বন। যেদিকেই চোখ যায় শুধু বন আর গাছ। এই গাছ আর বন দেখে দেখে দিন কাটে। একদিন এক গাছের নিচে বসে ছিলাম। চারপাশ থেকে বাতাস এসে আনমনে করে দিলো। 

হঠাৎ মাথায় চক্কর। সাথে প্রচণ্ড বাতাস বইতে শুরু করলো। মনে হলো পৃথিবী এক্ষুণি ধ্বংস হয়ে যাবে।

০৩. বিষণ্ণ মুখগুলো আলোর সন্ধানে

দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। মধ্যরাত। অফিস থেকে ফিরেই দেখতে পেলো বউয়ের বিষণ্ণ মুখ। অভাবের সংসার। কদিন হলো বাসায় সবজি, পেঁয়াজ শেষ হয়ে গেছে। বড় ছেলের জ্বর। সপ্তাহখানেক আগে বউয়ের বড় বোনের সর্বনাশ হয়েছে। পরনে কাপড় পরিবর্তন করে হাত মুখ ধুয়ে সামান্য পরিমাণ রাতের খাবার খেলো। 

আকাশে চাঁদের আলোয় বারান্দা আলোকিত। আবরার খাওয়া শেষ করে বারান্দায় গেলো। বউ ততক্ষণে ঘুমিয়ে গেছে। চাঁদের আলোয় আবরার কিছুটা সময় বিমূর্ত।

০৪.আজ পূর্ণিমা

আজ পূর্ণিমা। এই রাতে হাওরে নৌকায় ঘুরতে চেয়েছিলো হাশিম। কিন্ত হাওরে পানির এত বেশি যে ঢেউয়ে নৌকার ব্যালেন্স রাখা কঠিন। নীলিমার মনটা বিষণ্ণ।

ঘোরার প্ল্যান কেনসেল হতেই চেঁচিয়ে উঠলো হাশিম। নীলিমা চাঁদের আলোয় ভাবনায় মত্ত। হঠাৎ বাতাস বইতে শুরু করলো। শাঁ শাঁ শব্দ।

০৫. অপারেশন

আবছা আবছা আলো। যখন চোখ খুললাম, দেখি সমস্ত শরীর ঘামে ভেজা। একজন নার্স এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার এখন কেমন লাগছে?’ 

আমি দেখি আমার চারপাশে আরো কয়েকজন ডাক্তার দাঁড়িয়ে, একজন স্যালাইন কতটুকু শরীরে পুশ হচ্ছে দেখছেন। আরেকজন আমার শরীর মুছে দিচ্ছেন। আমি শুধু তাকিয়ে আছি ওটির দেয়ালের দিকে। 

আবহাওয়া কেমন ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা। আউট ডোরে ত্রিশজনের মতো অপেক্ষায় রোগী । ডাক্তার আসতে আরও কিছুটা সময় বাকি। রোগীরা নানা গল্পে সময় পার করছেন। বাইরে থেকে আসা বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা ছুটাছুটিতে ব্যস্ত। পাশে ফিরে তাকাতেই তিনি বললেন, ‘ভাইয়া আপনার সেলাই দিয়েছে? আপনি কেমন আছেন?’ 

সৌভিক কিছুটা আশ্চর্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। কয়েক সেকেন্ড পর উত্তর দিলো, ‘হ্যাঁ, ভালো। না সেলাই দেয়নি। ’

ঠিক দশদিন আগে অপারেশন হয়েছে দুজনেরই। ওটিতে একবার তাকে দেখেছিল। কিন্তু কথা হয়নি। 



আরো পড়ুন