কবিতার গর্ভপাত
একদিন হারিয়ে যাবে জেনেও
থামেনি কবিতার কিছু গর্ভপাত!
প্রিয়ার অবহেলায় ভুলো মনে
একাকী নির্জনে মেঘলা আকাশ
তবুও চাঁদের আকাশ খুঁজে একাকার
পাঠকহীন কবিতার শুধু শুধু হাহাকার।
ঝরে পড়া হলুদ পাতার সমাহার
হয়ে যায় শুকনো পাতার মচমচে বীণা
তবুও ঝরে পড়া শিউলি আর বকুল
হৃদয়ের মালায় গেঁথে গেঁথে ব্যাকুল।
ক্ষতবিক্ষত জীবন বেদনার কাফেলায়
অগনন উদাম কিশোর-কিশোরীরা
তবুও সবুজ ঘাসের বিছানো চাদরে
অনাগত জীবনের মোহে ছুটচে নীরবে ।
একদিন হারিয়ে যাবো
থাকবো না কবিতার আসরে
কভুও ফিরে আর আসবো না
সেই রাতজাগা বাসরে ।
আজ চাই হৃদয়ের ফুল
নকল ফুলে একাকার হয়ে গেছে বেদী
হৃদয়ের ফুল আসল ফুল একটু পেতাম যদি
আমরা কি অনেক বেশী হৃদয়হীন হয়ে গেছি
আসো না আজ আমরা চোখ খুলে দেখি!
সারারাত কুয়াশায় ভিজে ভিজে
পলাশের মালা গাঁথেনি কেউ
লাল এক থোঁকা পলাশের গুচ্ছ
পড়ে আছে সবুজ ঘাসের বিছানায়!
আকাশটায় অনেক অনেক তারার মেলা
শ্বেত মিহিন অগনন কামিজ পরেছে তারা
কুমারী অন্জুলি ভরে গেছে রক্তিম আবিরে
দূর পথ নগ্নপদে হেঁটে হেঁটে এঁরা কারা!
নীল আকাশের অসীম সামিয়ানায়
পলাশ ঝরা ফাগুনের রাতে কি প্রাতে
লাল পলাশ পায়ে দলিয়ে ছুটচে যারা
লুটছে সবার মুখের গ্রাস কুকুর শিয়ালেরা!
এক অরণ্যের জীবন খুঁজে পেয়েছে যারা!
দেখছে কিন্তু সালাম বরকত জব্বর রফিকেরা!
আমার প্রিয় বাংলাদেশ
জানি একদিন সব মুছে যাবে
আমি যে হেঁটেছি কত এ ‘পথে
এই পুকুর পাড়ে দেখেছি ভয়ে ভয়ে
সাপ-বেজি যুদ্ধ ঝোপের আড়ালে
আকাশে তারা গুনেছি উঠোনে শুয়ে।
জানি একদিন সব মুঁছে যাবে
এই মাঠে খেলেছি কত সবার সাথে
কাঁচা পাকা আম খেয়েছি কত ডালে বসে
ধানের খড়ের ভিতরে লুকিয়েছি শীতের রাতে
কুড়িয়েছি কত তাল-বেল-কুল প্রভাতে ।
জানি একদিন সব মুছে যাবে
শালিক ছানা পুষেছি কত খাঁচায় রেখে
সবুজ ফড়িং ধরেছি কত তাকে খাওয়াতে
কত রাত শিয়ালের ডাকে ভীত হয়ে
ধরেছি মাকে আরও বেশি করে জড়িয়ে ।
জানি একদিন সব মুছে যাবে
পুকুরের মাছ শিকারে ব্যস্ত থেকে
সারা দিনে দুপুরে প্রভাতে কি রাতে
খালে-বিলে মাছ শিকারে কত না চেষ্টা
অনেক মাছ ধরেও মেটেনা যেন তেষ্টা ।
জানি একদিন সব মুছে যাবে
সাঁতার কেটেছি কত দল বেঁধে
গ্রীষ্ম- বর্ষা-শরৎ-হেমন্ত কি শীতে
কত যে ছিল এ’ সবের সাথী
ভালোবাসা অনেক আজো তাদের প্রতি।
জানি একদিন সব মুছে যাবে!