০২ জুন ২০২৪, রবিবার



অর্থনীতি
প্রিন্ট

সাক্ষাৎকার

চিন্তাভাবনা করে বিনিয়োগ করা উচিত: আতাউর রহমান

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ১৭ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৪:৩১ পিএম
চিন্তাভাবনা করে বিনিয়োগ করা উচিত: আতাউর রহমান মো. আতাউর রহমান


বর্তমান চিত্র দেখে আগামীর পুঁজিবাজার কোন অবস্থায় যাবে, তা বলা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এক্সেকিউটিভ ডিরেক্টর ও সিএফও মো. আতাউর রহমান। তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে মার্কেট মোটামুটি ভালো অবস্থায় ছিল। আরও কিছু দিন যাক। তারপর বলা যাবে চলতি বছরে বাজার কেমন হবে। অনেকগুলো কারণে দীর্ঘদিন শেয়ার মার্কেট স্থবির হয়েছিল। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে-রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, দেশে ডলার ক্রাইসিস, রিজার্ভ কমে যাওয়া, ইমপোর্ট লায়েবিলিটি পেমেন্ট ইত্যাদি। ফলে মার্কেট নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনাস্থার সৃষ্টি হয়েছিল।’ সোমবার (১৬ জানুয়ারি) ঢাকা বিজনেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

মো. আতাউর রহমান  বলেন, ‘কিছু মিডিয়া অনুমান করেছিল ২০২৩ সালে দেশে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা ভয় পাচ্ছিলেন মার্কেটে নতুন করে বিনিয়োগ করতে। পাশাপাশি অনেকেই ভয়ে তাদের বিনিয়োগ উঠিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু গেলো ডিসেম্বর, এক্সপোর্ট বেড়েছে, ফরেন রেমিটেন্সও বেশি আসছে। ফলে অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে বিনিয়োগকারীদের যে ভয় ছিল, তা কেটে গেছে। বাজার নিয়ে তাদের মনে আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। ফলে অনেকেই নতুন করে বিনিয়োগ করছেন। মার্কেটেও তার পজেটিভ প্রভাব পড়ছে।’

শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের এক্সিউটিভ ডিরেক্টর  বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠানের ডিসেম্বরে একাউন্স ক্লোজিং হয়েছে, তারা খুব শিগগিরই ডিভিডেন্ড ঘোষণা করবে। ফলে তাদের শেয়ারের প্রাইস বাড়বে। ডিভিডেন্ড ঘোষণা যখন আসবে, তখন শেয়ার মার্কেট আরও ওপরের দিকে যাবে। অন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠানের জুন ক্লোজিং, তাদেরও দ্বিতীয় প্রান্তিকের একাউন্সটা চলে আসবে চলতি মাসের শেষের দিকে। ফলে জানুয়ারিতেই বিনিয়োগকারীরা এসব দেখে আরও বিনিয়োগের ব্যাপারে ভালোভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।’

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি)-এর বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে শেফার্ডের এই পরিচালক বলেন, ‘বর্তমান কমিশন মার্কেটের উন্নয়নে অনেক ভালো ভালো উদ্যোগ নিয়েছে, নিচ্ছে। বিনিয়োগবান্ধব উদ্যোগ নিচ্ছে। কিন্তু মার্কেটে যখন একটি প্যানিক তৈরি হয়ে যায়, তখন কোনো কৌশলেই অনেক সময় কাজ করতে চায় না। বর্তমান কমিশন অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। বিশ্বের অন্যান্য শেয়ার মার্কেট যেভাবে ড্রাস্টিক্যালি কমে গেছে, আমাদের শেয়ার মার্কেটের সূচক, লেনদেন সেভাবে কমেনি। এখনও ৬ হাজারের ওপরে সূচক রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘শেয়ার মার্কেটে যতটা না তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে, তার চেয়ে বেশি আতঙ্কিত হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে তারা পুঁজিবাজারে বিনেয়োগ করবেন, না কি সঞ্চয়পত্র কিনবেন, না কি ব্যাংকে রেখে এফডিআর করবেন, না কি তারা ফ্ল্যাট কিংবা জমি কিনবেন;  এসব নিয়ে তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলেন। যেখানে বেশি প্রফিট আসবে, সেখানেই তারা ইনভেস্ট করার আগ্রহ দেখাবেন; এটাই স্বাভাবিক।’ তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগকারীরা ডিভিডেন্ড পাওয়ার আশায় বিনিয়োগ করে থাকেন। আর যারা অল্প সময়ে কেপিটাল গেইনের জন্য বিনিয়োগ করেন, তারা অনেক ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন অথবা লাভবান হতে পারেন। তাই বিনিয়োগকারীদের চিন্তাভাবনা করে বিনিয়োগ করা উচিত।’

মো. আতাউর রহমান  বলেন, ‘আমি গেম্লার শব্দটি বলতে চাই না। যাদের তথাকথিত গেম্লার বলা হয়, তারাও বিনিয়োগকারী। তারা অনেক বড় বিনিয়োগকারী হয়ে থাকে। তারা মুনাফা করার জন্য তারা বিনিয়োগ করে মার্কেটে। এখন যে বিনিয়োগ করবে সে তো প্রফিট করতে আগ্রহী হবেই। এটাই স্বাভাবিক। এখন তাদের এক্সপার্টিসরা যদি বিভিন্ন এনালাইসিস করে প্রফিট করে এবং মার্কেট থেকে বের হয়ে যায় তাতে আমি দোষের কিছু দেখছি না। এখন তারা যদি প্রফিট না করে লোকসানে পরতো, তাহলে কি আমরা তাদের গেম্লার বলতাম? তাদের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীর তালিকায় রাখতাম। আমি যে জিনিসটি বলতে চাই তা হলো, আমাদের বিনিয়োগকারীদের জ্ঞান, বুদ্ধি বিশ্লেষণ করে শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানের ফান্ডমেন্টাল ভ্যালুস আছে, আর্নিং পার শেয়ার (ইপিএস) ভালো, ডিভিডেন্ড দেয়, অতীত রেকর্ড ভালো, শেয়ার প্রতি প্রকৃত সম্পদ মূল্য ভালো, সেসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করতে হবে। গেম্লিং নিয়ে বিনিয়োগকারীদের ছোটাছুটি বা চিন্তা করার দরকার নেই।’

ডিভিডেন্ড প্রদান প্রসঙ্গে আতাউর রহমান বলেন, ‘২০২৩ সালের ৩০ জুন কত শতাংশ ডিভিডেন্ড দেওয়া হবে তা, এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। আমাদের রিটেইন্ড আর্নিংস কত আছে, আগামীতে কত প্রফিট হবে এবং নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো পার শেয়ার (এনওসিএফপিএস)সহ অন্যান্য বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে, কত শতাংশ ডিভিডেন্ড বিনিয়োগকারীদের দেবে। গত বছর ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেওয়া হয়েছিল। আশা করি, চলতি বছরে ডিভিডেন্ড দেওয়ার পরিমাণ ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ডের চেয়ে কমবে না।’

শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজে তার অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আতাউর রহমান বলেন, ‘প্রায় ২৪ বছর ধরে আমি শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সঙ্গে আছি। এই কোম্পানিকে আমার নিজের মনে হয়। ফিন্যান্সিয়াল কোনো ক্ষতিতে যেন কোম্পানি না পড়ে সেটি সব সময় খেয়াল রাখার চেষ্টা করি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের হিউজ ল্যান্ড আছে। যেগুলোকে ভালোভাবে ব্যবহার করে ব্যবসার সম্প্রসারণ করতে পারবো। তাছাড়া আমরা ভ্যালু এডেড প্রডাক্টগুলো অন্তর্ভুক্ত করছি। আশা করছি আগামী তিন বছর পর টেক্সটাইল সেক্টরে শেফার্ডের একটা আলাদা ইমেজ সৃষ্টি হবে। যা দেখে বিনিয়োগকারীরা গর্ববোধ করবেন। আমাদের সেলের পেছনে খুব একটা দৌড়াতে হয় না। বিদেশি অনেক বড় বড় বায়াররা শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজকে তাদের প্রডাক্টের ব্যাপারে নমিনেটেড করা আছে। যে কারণে দেশের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলো নমিনেশনের কারণে আমাদের কাছ থেকে কোয়ালিটি দেখে সুতা কিনে থাকে।  এতে আমাদের সেল ডে বাই ডে বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন