ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দিয়ে আর কতদিন চলবে দেশের দ্বিতীয় শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)? এই প্রশ্ন এখন সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের মনে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দীর্ঘ ২ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত এমডি দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে সিএসই। তবে কবে নাগাদ সংস্থাটিতে এমডি নিয়োগ দেওয়া হবে, সে বিষয়ে খোদ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে শুরু সিএসই কেউই জানে না। গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠান দুটির এই উদাসীনতা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মনে হতাশার সৃষ্টি করেছে।
সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বলছেন, সিএসই চলছে দেশের বৃহৎ একটি গ্রুপের কথায়। তাদের পছন্দের মানুষ সিএসই’র বর্তমান ভারপ্রাপ্ত এমডি গোলাম ফারুক। তাকে দিয়ে গ্রুপটি শেয়ারবাজারে ব্যবসা করছে। এ কাজে কমিশন সরাসরি গ্রুপটির পক্ষে কাজ করছে। যে কারণে সিএসইতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে গড়িমশি করছে কমিশন। এখানে বর্তমান কমিশনের কারও কারও স্বার্থ জড়িত।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্যপরিষদের সহ-সভাপতি আজাদ আহসান বাচ্চু ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘সিএসইতে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে গড়িমসি করা হচ্ছে। নির্বাচনের আগে এই পদে কাউকে নিয়োগ দেবে না কমিশন। কারণ বর্তমানে অনেক যোগ্য মানুষ আছে সিএসই এমডি হওয়ার। কিন্তু তাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না । এমনকি সিএসই তাদের নামও প্রস্তাব করছে না।’
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘বিএসইসি এই পদে লোক নিয়োগে সিরিয়াস না। যে কারণে সিএসইও এই ব্যাপারে সিরিয়াস হচ্ছে না। বর্তমান শেয়ারবাজারের নাজুক অবস্থায় এই পদে লোক নিয়োগে গড়িমসি করা উচিত নয়। দ্রুত এমডি নিয়োগ দেওয়া উচিত।’
ডিএসই-এর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) এম. সাইফুর রহমান মজুমদার ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদটি কমিশন শুধু শুধু জটিল করে ফেলেছে। এই পদে লোক নিয়োগে এত জটিলতার কিছু নেই। কাগজে কলমে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ক্ষমতা দেওয়া থাকলেও এর বাস্তবায়নে অনেক জটিলতার সৃষ্টি হয়। ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব ২ থেকে ৩ মাসের বেশি হওয়া উচিত নয়। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিভিন্ন বাধার সম্মুখিন হন। এতে করে স্টক এক্সচেঞ্জের কাজের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়ে যায়। যা পরবর্তী সময়ে শেয়ারাবাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।’
সিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম ফারুক ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আমি ২০২১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি। যোগ্য লোক না পাওয়ার কারণে সিএসইতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ হচ্ছে না। আর গত এক বছরে নতুন করে সিএসই এই পদের জন্য নতুন নাম প্রস্তাব করেনি কমিশনে। তবে এক বছর আগে সিএসই বোর্ড তিন জনের নাম প্রস্তাব করেছিল। কমিশন সেখান থেকে একজনকে সেলেক্ট করেছিল। কিন্তু সিএসই বোর্ড তাকে নিয়োগ দেয়নি।’ কেন তাকে নিয়োগ দেয়নি বা নতুন করে কেন নাম প্রস্তাব করা হচ্ছে না, সে ব্যাপারে গোলাম ফারুক কিছু বলতে পারেননি।
বিএসইসি’র মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘সিএসইতে কবে নাগাদ ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে, সে বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই। তবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদের জন্য সিএসই কয়েকজনের নাম পাঠালে, সেখান থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একজনের নাম অনুমোদন দেওয়া হবে। একবছর আগে একবার সিএসই তিন জনের নাম পাঠিয়েছিল। আমরা সেখান থেকে একজনকে সেলেক্ট করে অনুমোদন দিয়েছিলাম। কিন্তু সিএসই’র বোর্ড কেন তাকে নিয়োগ দিলো না, আমার জানা নেই। সিএসই যদি অনিয়মতান্ত্রিকভাবে তার নাম বাদ দিয়ে থাকে, অথবা তাকে নিয়োগ না দিয়ে থাকে, তবে তদন্ত করে সিএসই’র বোর্ডের বিরুদ্ধে কমিশন ব্যবস্থা নেবে।’
ঢাকা বিজনেস/এনই