২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



সর্বজনীন পেনশন: যে পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞরা

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ২৪ আগস্ট, ২০২৩, ০৮:০৮ এএম
সর্বজনীন পেনশন: যে পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞরা


বহুল আলোচিত সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, বিশ্বের অনেক দেশেই এই ধরনের পেনশন ব্যবস্থার প্রচলন রয়েছে বিভিন্ন নামে। আমাদের দেশে এই ব্যবস্থা চালু হওয়ায় এর আওতায় যারা থাকবেন, তাদের শেষ বয়সে জীবন পরিচালনায় অর্থের যোগানে আর তেমন কোনো দুশ্চিন্তা করতে হবে না।

অর্থনীতিবিদদের মতে, নিঃসন্দেহে বর্তমান সরকারের এটি একটি ভালো উদ্যোগ। তবে যারা নির্দিষ্ঠ সময় পর্যন্ত প্রিমিয়াম বা চাঁদা দিয়ে এই পেনশনের আওতায় আসবেন, তারা আদৌ তাদের প্রিমিয়াম দেওয়ার মেয়াদ শেষ করতে পারবেন কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বর্তমান জীবন পরিচালনা করতেই যদি সাধারণ মানুষ হিমশিম খায়, তবে তারা প্রিমিয়াম দেওয়ার মেয়াদ কিভাবে শেষ করবেন? সরকারকে এই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। চাঁদা দেওয়ার বিষয়টি খুব সহজ করে দিতে হবে। তারা আরও বলেন, চাঁদা নিয়ে সেই টাকা সরকারকে লাভজনক কাজে বিনিয়োগ করতে হবে; যেন পেনশনারদের পেনশন দিতে সমস্যা সৃষ্টি না হয়।

বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বজনীন এই পেনশনে ৪টি স্কিম থাকবে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের জন্য। স্কিমগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাসী। দেশের ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সবাইকে এই প্রকল্পের আওতায় আনার লক্ষ্যে এ সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। চারটি স্কিমে ব্যক্তির ৬০ বছর পূর্ণ হলে মিলবে এই সুবিধা। 

প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘প্রবাস’, বেসরকারি কর্মচারী-প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্ম ও অ-প্রাতিষ্ঠানিক কর্মীর জন্য ‘সুরক্ষা’ এবং স্বল্প আয়ের ব্যক্তিদের জন্য ‘সমতা’। পেনশন স্কিমে অংশ নিতে সুবিধাভোগীকে মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দিতে হবে। মাসিক চাঁদা ধরা হয়েছে সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। পেনশন সুবিধা পেতে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে। পাস হওয়া ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২৩’ অনুযায়ী, ১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিক নির্ধারিত হারে চাঁদা পরিশোধ করে ৬০ বছর পূর্তির পর আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। 

বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন। এ ছাড়া বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা পরিশোধ করে পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত বিবেচনা করা হয়েছে। তবে পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে কেউ মারা গেলে তার নমিনি মাসিক পেনশন পাবেন। এ ছাড়া চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে মারা গেলে তার জমা করা অর্থ মুনাফাসহ নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মকর্তা আতাউর রহমান ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‌‘কানাডা, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ধরনের পেনশনের ব্যবস্থা রয়েছে। এখন দেখতে হবে যে সমস্ত ম্যানেজমেন্ট এই ধরনের পেনশনগুলো দেখভাল করবেন, তারা কতটুকু সততার সহিত করবেন। এসব ম্যানেজমেন্টকে তাদের সততা সুনিশ্চিত করতে হবে। যার পেনশনের চাঁদা দেওয়া শেষ হবে; সে যেন খুব সহজেই প্রত্যেক মাসে তার একাউন্টে প্রাপ্য টাকাটা পেয়ে যান। তাকে যেন এই টাকা পেতে কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়। এই বিষয়টি সরকারকে সুনিশ্চিত করতে হবে।’

সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘সর্বজনীন পেনশনের আওতায় থাকা ব্যক্তিরা শেষ বয়সে অনেক উপকৃত হবেন। প্রতিনিয়ত দেশ ডিজিটালাইজড হচ্ছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে তারা তাদের প্রাপ্য অর্থ পাবেন। দুশ্চিন্তার কারণ নেই। আগে যেমন কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের পেনশনের অর্থ পেতে অনেক সময় বেগ পেতে হতো, এখন কিন্তু সেই পরিস্থিতি আর নেই। দেশ ডিজিটালাইজড হওয়ার কারণে সরকারি চাকরিজীবীরাও পেনশন খুব সহজেই পেয়ে থাকেন। আর যখন সর্বজনীন পেনশন দেওয়া শুরু হবে, তখন দেশ আরও গতিশীল ও ডিজিটালাইজড হবে। ফলে বেসরকারি চাকরিজীবী থেকে শুরু করে স্বল্প আয়ের মানুষ যারাই এই পেনশনের আওতায় থাকবেন, তারা খুব সহজেই তাদের প্রাপ্য অর্থ পাবেন বলে আমি মনে করি।’

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘খুব সহজ শর্তে যেন মানুষ এই পেনশনের প্রিমিয়াম দিতে পারেন সেই ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। এর সঙ্গে যেসব ম্যানেজমেন্ট জরিত তাদের মধ্যে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। শেষ বয়সে এই পেনশনের আওতায় থাকা পেনশনাররা যেন টাকা পেতে কোনো ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন না হন। আর এই পেনশন দিতে যাতে সমস্যা না হয় সেজন্য সরকারকে লাভজনক কাজে তাদের প্রিমিয়ামের টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।’

ঢাকা বিজনেস/এম



আরো পড়ুন