২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

পুঁজিবাজারকে স্বাভাবিক গতিতে ফেরাতে যা করতে হবে

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ১২ আগস্ট, ২০২৩, ১১:০৮ এএম
পুঁজিবাজারকে স্বাভাবিক গতিতে ফেরাতে যা করতে হবে


বিভিন্ন কারণে প্রতিনিয়তই শেয়ার বাজার নিম্নগামী হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, শেয়ার বাজারের এই করুণ দশা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি যুযোপযোগী পলিসি তৈরি করতে হবে।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহে (৬ আগস্ট-১০ আগস্ট) মোট লেনদেন গত সপ্তাহের তুলনায় আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। পাশাপাশি বাজার মূলধনও কমে গিয়েছে। আর বেশিরভাগ কোম্পানির লেনদেন অপরিবর্তিত ছিল।

ডিএসই সূত্র বলছে, বিদায়ী সপ্তাহে মোট লেনদেন কমেছে ৩০ দশমিক ১১ শতাংশ। গত সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৯৬৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। বিদায়ী সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৭১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৮৯২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। গত সপ্তাহে প্রত্যেক দিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫৯২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহে প্রত্যেক দিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪১৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে লেনদেন কমেছে ১৭৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।  

গত সপ্তাহের মতো চলতি সপ্তাহেও ৪০৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন করেছে ডিএসইতে। এর মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৩৫টি। ১৪৪টির লেনদেন কমেছে। ২০৬টি শেয়ার দর অপরিবর্তিত ছিলো। আর ১৮টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের কোন লেনদেন হয়নি।

এদিকে ডিএসই সূত্রে আরো জানা গেছে, ডিএসই’র প্রধান সূচকসহ সবগুলো সূচক নিম্নগামী ছিলো বিদায়ী সপ্তাহে। প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) গত সপ্তাহে ছিলো ৬ হাজার ৩২৯ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট। আর বিদায়ী সপ্তাহে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৯৭ দশমিক ২৫ পয়েন্ট। এক্ষেত্রে ডিএসইএক্স কমেছে ৩২ দশমিক ৬১ পয়েন্ট। ০ দশমিক ৫২ শতাংশ কমেছে। ডিএস৩০ সূচক গত সপ্তাহের তুলনায় কমেছে ৯ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট। অর্থাৎ ০ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমেছে। গত সপ্তাহে ডিএস৩০ সূচক ছিলো ২ হাজার ১৫২ দশমিক ৫২ পয়েন্ট। আর বিদায়ী সপ্তাহে তা এসে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৪২ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট। ডিএসই শরিয়াহ্ (ডিএসইএস) সূচক গত সপ্তাহে ছিলো ১ হাজার ৩৭২ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট। আর বিদায়ী সপ্তাহে তা এসে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬৮ দশমিক ০৫ শতাংশ। এক্ষেত্রে ডিএসইএস কমেছে ৪ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট। অর্থাৎ ০ দশমিক ৩৬ শতাংশ কমেছে।

এদিকে, ডিএসই সূত্রে আরো জানা গেছে, ডিএসইতে বাজার মূলধন কমেছে ৫ হাজার ৮৭১ কোটি ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯৪৬ টাকা। অর্থাৎ ০ দশমিক ৭৫ শতাংশ কমেছে। গত সপ্তাহে বাজার মূলধন ছিলো ৭ লাখ ৮১ হাজার ৩৭০ কোটি ৫৩ লাখ ৯০ হাজার ৪২৬ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭৫ হাজার ৪৯৯ কোটি ৪৭ লাখ ১৪ হাজার ৪৮০ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে টপটেন গেইনারের তালিকায় থাকা প্রথম তিনটি কোম্পানি হচ্ছে-এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি, ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেড এবং অ্যারামিট লিমিটেড। আর টপটেন লুজারের তালিকায় থাকা প্রথম তিনটি কোম্পানি হচ্ছে দেশবন্ধু পলিমার লিমিটেড, সিএপিএমআইবিবিএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড এবং কনটিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে জানা গেছে, সিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছে ৩৩ কোটি ১২ লাখ ৯১ হাজার ১৭৫ টাকা। গত সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিলো ৬১ কোটি ৭২ লাখ ৩ হাজার ৭৭ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ২৮ কোটি ৫৯ লাখ ১১ হাজার ৯০২ টাকা।

সিএসইতে গত সপ্তাহের তুলনায় প্রত্যেকটা সূচক কমেছে বিদায়ী সপ্তাহে। প্রধান সূচক সিএএসপিআই কমেছে ০.৪৮, সিএসই৩০ সূচক কমেছে ০.০৬ শতাংশ, সিএসসিএক্স কমেছে ০.৪৭ শতাংশ, সিএসই৫০ সূচক কমেছে ০.১৯ শতাংশ, সিএসআই কমেছে ০.২৫ শতাংশ এবং সিএসইএসএমইএক্স কমেছে ২.৩৮ শতাংশ। বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইতে ২৬০টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে আংশ গ্রহণ করেছিল। এরমধ্যে দর বেড়েছে ২৮টির, কমেছে ১২২টির, অপরিবর্তিত ছিলো ১১০টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের।

এদিকে সিএসইতে টপটেন গেইনারের তালিকায় থাকা শীর্ষ তিনটি কোম্পানি হচ্ছে- আমবি ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, হামিদ্রি লিমিটেড এবং অ্যারামিট লিমিটেড। আর টপটেন লুজারের তালিকায় থাকা শীর্ষ তিনটি কোম্পানি হচ্ছে-সিএপিএমআইবিবিএল ইসলামিক মিউচ্যুয়াল ফান্ড, প্রাইম ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং দেশবন্ধু পলিমার লিমিটেড।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি আজাদ আহসান বাচ্চু ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আসছে জাতীয় নির্বাচনকে লক্ষ্য করে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিত অস্থির হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি বাজারে ফ্লোরপ্রাইজ তুলে দেওয়ার একটা গুজব রটেছে। যে কারণে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী সাইড লাইনে বসে আছে। তারা নতুন করে বিনিয়োগ করছে না। পাশাপাশ অবৈধভাবে পাচার হওয়া বাংলাদেশিদের টাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে  বাজেয়াপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এমন একটি খবর প্রচার হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এসব কারণে শেয়ার বাজারে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি বাজার নিম্নমুখী হচ্ছে।’

ডিএসই এর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই বাজারের পলিসিতে সমস্যা রয়েছে। বাজারের গভীরতা নেই বললেই চলে। বাজারে ফান্ড আসছে না। এসব কারণে শেয়ারবাজার নাজুক অবস্থায় রয়েছে। সহজেই এই বাজার ভালো হওয়ার নয়। এই বাজারকে ভালো করতে হলে পলিসি ঠিক করতে হবে। বাজারের গভীরতা বাড়াতে হবে। তারল্য সংকট দূর করতে হবে। নতুন নতুন ফান্ড নিয়ে আসতে হবে বাজারে।’

বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও ডিএসইতে সদ্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে অনুমোদন পাওয়া এটিএম তারিকুজ্জামান ঢাকা বিজনেস বলেন, ‘শেয়ার বাজারে সুশাসনের অভাব রয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবেই বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।’

ঢাকা বিজনেস/এনই



আরো পড়ুন