২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



যে কারণে হিলিতে রাজস্ব ঘাটতি

আনোয়ার হোসেন বুলু , হিলি (দিনাজপুর) || ১৪ জুলাই, ২০২৩, ১১:০৭ এএম
যে কারণে হিলিতে রাজস্ব ঘাটতি


দিনাজপুরের হিলি বন্দরে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। গত অর্থ বছরে এনবিআরের  রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল  ৬০৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আর রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪২৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) কাস্টম কর্মকর্তা ও আমদানিকারকসহ বন্দর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। 

হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কিছুদিন আগে বেশির ভাগ ব্যাংক এলসি বন্ধ রাখে। যে কয়টি ব্যাংক এলসি খুলছে তাও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এতে আমদানিকারকেরা চাহিদা মতো পণ্য আমদানি করতে পারেননি। তাই রাজস্ব আদায় পূরণ হয়নি।’ 

হিলি কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জামিল হোসেন বলেন, ‘হিলিবন্দরের আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে যে একমাত্র রাস্তাটি রয়েছে, সেটি সড়ক ও জনপদ (সওজ)’র আওতায়। প্রায় ৩ বছর থেকে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী আছে। পণ্যবাহী ট্রাকগুলো মাঝে মাঝে উল্টে যায়। এতে মালামাল ক্ষতিগ্রস্তসহ ট্রাকের ক্ষতি হয়। লোকসান গুনতে হয় আমদানিকারক ও ভারতীয় ট্রাক মালিকদের।  তাই ব্যাবসায়ীরা নিরুৎসাহিত হয়ে অন্য বন্দর ব্যবহার করছেন। এতে বিগত বছরেগুলোর চেয়ে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে।’

পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আগে  প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ ভারতীয় পণ্যবাহী গাড়ি বন্দরে প্রবেশ করতো। কিন্তু গত অর্থ বছরে এলসি জটিলতা, রাস্তাঘাটের সমস্যার কারণে ভারত থেকে ৮০ থেকে ১০০ গাড়ি প্রবেশ করছে।’

হিলি কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গেলো অর্থ বছরের প্রথম জুলাই মাসে ৪২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়। আগস্ট মাসে ৪৯ কোটি ৬ লাখ টাকার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয় ৩৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সেপ্টম্বর মাসে ৪২ কোটি ১৪ লাখ টাকার বিপরীতে আদায় হয় ৩৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। অক্টোবরে ৫৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৩৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়। নভেম্বর মাসে ৫৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বিপরীতে আদায় হয় ৪৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ডিসেম্বর মাসে ৫০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয় ২৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। জানুয়ারি মাসে ৪৯ কোটি ৭১ লাখ টাকার বিপরীতে আদায় হয় ২৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ফেব্রুয়ারী মাসে ৪৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকার বিপরীতে আদায় হয় ২৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। মার্চ মাসে  ৪৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার বিপরীতে ৫৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এপ্রিল মাসে ৬২ কোটি ৩৭ লাখ টাকার বিপরীতে আদায় হয় ৩৪ কোটি ১২ লাখ টাকা। মে মাসে ৪১ কোটি ২৫ লাখ টাকার বিপরীতে আদায় হয় ২৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা জুন মাসে ৬২ কোটি ৬১ লাখ টাকার বিপরীতে ৪০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা আদায় হয়। 

হিলি কাস্টমস ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) মো. বায়জিদ হোসেন ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘গেলো অর্থ বছরে বেশি শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি কম এবং শুল্কমুক্ত পণ্য আমদানি বেশি হয়েছে। সেই সাঙ্গে বিগত বছরগুলোতে যেখানে ১৮ লাখ মেট্রিক টন থেকে ২৫ লাখ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে, সেখানে গত অর্থ বছরে ১২ লাখ ৫০০ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। অর্থাৎ বিগত অর্থ বছরগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে আমদানি কম হয়েছে। ফলে রাজস্ব আদায়ে লক্ষমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি।’  

ঢাকা বিজনেস/এনই



আরো পড়ুন