প্রতিদিনই প্রায় বিভিন্ন কাজে আমাকে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। যেহেতু আমি মধ্যবিত্ত, সেহেতু আমার যাতায়াতের একমাত্র ভরসা গণপরিবহণগুলোই। এই বাসগুলোতে চড়ে বিভিন্ন রকমের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়।
আজ একটা প্রয়োজনে মিরপুর ১১ থেকে শ্যামলী যাচ্ছিলাম বাসে। হটাৎ বাসে বেশি ভাড়া নেওয়ায় প্রতিবাদ করেন এক যুবক। বিষয়টি নিয়ে বাসচালক-কন্ডাক্টার ও ওই যুবক তর্কে জরিয়ে পড়েন। উতপ্ত বাক্য বিনিময়ের এক পর্যায়ে বাস চালক লাঠি বের করে ওই যুবককে মারতে উদ্যত হন। তখন অন্য যাত্রীরা প্রতিবাদ করায় বাসচালক থেমে যান, আর ওই যাত্রীও নেমে যান।
আরেকটি ঘটনা শেয়ার করি, বেশ কয়েকদিন আগে বাসে বসেই আরেকটি ঘটনা দেখেছিলাম। ঘটেছিল একটা শিক্ষার্থীর সঙ্গে। ওই শিক্ষার্থী তার পরিচয় দেওয়ার পরও বেশি ভাড়া চাইলেন হেল্পার। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থী-হেল্পারের মধ্যে তুমুল তর্ক শুরু হয়। শেষপর্যন্ত হেল্পারের কথাই মেনে নিতে বাধ্য হন শিক্ষার্থী। অতিরিক্ত ভাড়া দিতে বাধ্য হন তিন, সঙ্গে বিনা পয়সায় অপমানিতও হলেন হেল্পারের কাছে।
গণপরিবহনে এমন যাত্রী-হয়রানির ঘটনা নতুন নয়, এগুলো এখন নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা। কখনো দ্বিগুণ, কখনো তিনগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। মঙ্গলার (১৩ সেপ্টেম্বর) কয়েকটি গণমাধ্যমে দেখলাম, শুধু ঢাকার গণপরিবহনগুলো থেকেই প্রতিদিন ১৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়। আর এর প্রতিবাদ করতে গেলে যাত্রীকে পড়তে হয় নানা রকম বিড়ম্বনায়। এমনকি চালক-হেল্পারের আক্রমণ-হত্যার শিকারও হতে হচ্ছে প্রতিবাদকারী যাত্রীদের।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদ করায় তর্কের জেরে গণপরিবহনগুলোতে অন্তত ২৫টি যাত্রী লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে। এতে বাস থেকে ফেলে ১৪ যাত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন ১০ জন যাত্রী। এতে করে গণপরিবহন ব্যবহারে যাত্রী সাধারণের মাঝে ভীতি বাড়ছে।
গণপরিবহনগুলোতে সরকার ভাড়া নির্ধারিত করে দেয়। সম্প্রতি আবার গত এক বছরে দুই বার জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে সরকার গণপরিবহনের ভাড়াও সমন্বয় করে বাড়িয়ে দেয়। তারপরও তারা এ নির্দেশনা না মেনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। এতে গণপরিবহন ব্যবহারকারী সাধারণ যাত্রীরা ক্ষোভ জানিয়েছেন।
সম্প্রতি মোসলেম উদ্দিন নামে এক যাত্রী বলেন, ‘সরকার এক টাকা বাড়াইলে এরা বাড়ায় ১০টাকা। সরকারের উচিত নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এসব গাড়ির লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর শাস্তি দেওয়া।’
এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, ‘শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস। কিন্তু তারা মাঝে মাঝে হাফ পাস থেকেও ৫/১০ টাকা বেশি নেয়। প্রতিবাদ করলে বলে সরকার ভাড়া বাড়াইছে। এইটাই ভাড়া।’
গণপরিবহরে বেশি গণপরিবহনে ভাড়া বেশি নেওয়া প্রসঙ্গ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরকে ‘যাত্রী কল্যাণ সমিতি’র মহাসচিব মোজাম্মেল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘যানবাহনের চালক, সহকারী ও ভাড়া আদায়কারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মালিকের দৈনিক জমা, জ্বালানির উচ্চ মূল্য, সড়কের চাঁদাবাজি, গাড়ির মেরামত খরচ ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে তারা এমন ভাড়া নৈরাজ্য চালাতে বাধ্য হচ্ছেন।’
কিন্তু এর শেষ কোথায়, কবে বন্ধ হবে গণপরিবহনে এসব নৈরাজ্য? নিম্ন আয়ের মানুষেরা এক প্রকার বাধ্য হয়েই দিচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। গণপরিবহনের এসব অযাচিত ভাড়া বাড়ার কারণে জীবনযাত্রার মানের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সরকারের উচিত গণপরিবহনগুলোতে নির্ধারিত ভাড়া কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা। যারা এমন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে।
লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী