০১ জুলাই ২০২৪, সোমবার



পর্যটকের ঢলে হোটেল মালিকদের মুখে হাসি

বাসু দাশ, বান্দরবান || ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ০৮:৫২ পিএম
পর্যটকের ঢলে হোটেল মালিকদের মুখে হাসি


টানা ছুটিতে ভ্রমণপ্রেমীদের ভিড়ে মুখর হয়ে উঠেছে পর্যটন নগরী বান্দরবান। জেলার মেঘলা, নীলাচল, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরি, তমাতুঙ্গীসহ সব দর্শনীয় স্থানে এখন পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। দীর্ঘদিন পর আশানুরূপ পর্যটকের আগমন ঘটায় খুশি হোটেল মোটেল রিসোর্টের মালিকসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

সাপ্তাহিক সরকারি ছুটি শুক্র ও শনিবারের সঙ্গে যোগ হয়েছে বড়দিনের ছুটি। সব মিলিয়ে তিন দিনের টানা ছুটিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে বান্দরবানে। আর তাদের নিরাপত্তায় কাজ করছে জেলা প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশ। টানা ছুটিতে ভ্রমণপিপাসুদের ভালো সাড়া পেয়েছেন বান্দরবান হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা। ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বরের সাপ্তাহিক ছুটি এবং ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের ছুটিতে অগ্রিম হোটেলের কক্ষ বুকিং করেছিল পর্যটকরা। ফলে বান্দরবানের অধিকাংশ হোটেলের সব কক্ষ বুকড হয়ে গেছে।

প্রতিবছর শীত মৌসুমে পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন শত শত পর্যটক। তবে গত ১৭ অক্টোবর থেকে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার কারণে এবছর শীত মৌসুমে তেমন একটা পর্যটকের আগমন না ঘটলেও সাপ্তাহিক ছুটি ও বড়দিন উপলক্ষে টানা ৩ দিনের ছুটি থাকায় প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটেছে বান্দরবানে। 

যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততা ভুলে কোলাহল মুক্ত পরিবেশে পরিবার পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে পর্যটকরা চাঁন্দের গাড়িতে করে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে। জেলার মেঘলা নীলাচল প্রান্তিক লেক, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরি, নীল দিগন্ত, রেমাক্রি, নাফাখুম, তমাতুঙ্গীসহ সব দর্শনীয় স্থান এখন ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। কেউ বা ছুটে যাচ্ছেন ঝরনার সৌন্দর্য দেখতে, আবার কেউ বা ছুটে যাচ্ছেন সুউচ্চ পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে।

ঢাকা থেকে বান্দরবানে আসা পর্যটক মিনহাজ বলেন, ‘পরীক্ষা শেষে নিরিবিলি প্রকৃতির সঙ্গে সময় পার করতে বান্দরবান চলে আসছি।’ 

হোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, সারাবছর পর্যটকের আনাগোনা থাকলেও নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে তা কয়েকগুণ বাড়ে। কিন্তু চলতি বছরে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের অধিকাংশ সময় পার হয়ে গেলেও তেমন পর্যটকের সাড়া ছিল না। তবে সাপ্তাহিক ও বড়দিনের ছুটি মিলে এই তিন দিনের টানা ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটকের সাড়া পেয়েছেন তারা। এর মধ্যে শুক্রবারের জন্য অধিকাংশ হোটেলের শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। এছাড়া আগামী ২৪ ডিসেম্বর ৮০ শতাংশ ও ২৩ ডিসেম্বর প্রায় ৮০ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বরাদ্দ নিয়ে রেখেছেন ভ্রমণ প্রত্যাশীরা।

এদিকে পর্যটন কেন্দ্র নিলাচল ও মেঘলা দেখা গেছে হাজারো পর্যটকের ভিড়। কেউ এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ মেঘ দেখতে ব্যস্ত। পর্যটন মৌসুমে বিনোদন প্রেমীদের চাপ বাড়ায় প্রতিটি স্পটে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট। 


কুমিল্লা থেকে সপরিবার আগত পর্যটক আজিজুল রহমান বলেন, ‘বছরের শেষে ছুটি কাটাতে বান্দরবান এসেছি প্রকৃতিকে উপভোগ করতে।’

জেলা শহরের হোটেল হিল্টনের ম্যানেজার মো. আক্কাস উদ্দীন বলেন, ‘শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) হোটেলের সব কক্ষই অগ্রিম বরাদ্দ নিয়ে রেখেছেন পর্যটকরা। এছাড়া টানা এই তিন দিনের ছুটিতে ২৪ ডিসেম্বর ৮০ শতাংশ ২৩ ডিসেম্বর ৬০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে।’

হোটেল অরণ্যর মালিক জসিম উদ্দীন বলেন, ‘ডিসেম্বরে আমাদের পর্যটক মৌসুম শুরু হলেও প্রথম দিকে পর্যটকের তেমন সাড়া পাইনি। শুক্রবার থেকে যে টানা ছুটি ছিল সেটাতে আমাদের হোটেলে বুকিং হয়েছে। এতে আমরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবো।’

হোটেল গার্ডেন সিটির স্বত্বাধিকারী মো. জাফর উল্লাহ বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে পর্যটকের ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে, হোটেলে কোনো সিট খালি নেই।’

বান্দরবান ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত সুপার নকিবুল ইসলাম বলেন, ‘টানা তিন দিনের ছুটিতে হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম হতে পারে। তাই আমাদের একাধিক টিমও কাজ করছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা সবসময়ই সজাগ আছি।’

জেলায় পর্যটকদের সেবায় রয়েছে শতাধিক হোটেল মোটেল রিসোর্ট গেস্ট হাউস। এ ছাড়াও, পর্যটক পরিবহনে রয়েছে ৪ শতাধিক চাঁন্দের গাড়ি, ২ শতাধিক নৌযান, সব মিলিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জেলার ২৫ হাজার মানুষ পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ অক্টোবর থেকে বান্দরবানের ৫টি উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণে জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকলে ৩টি উপজেলায় প্রত্যাহার করা হয়, রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি আছে।

ঢাকা বিজনেস/এম



আরো পড়ুন