১৮ মে ২০২৪, শনিবার



যে কারণে হিলিবন্দর দিয়ে ফল আমদানি হয় না

আনোয়ার হোসেন বুলু, হিলি (দিনাজপুর) || ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩, ০৪:৩২ পিএম
যে কারণে হিলিবন্দর দিয়ে ফল আমদানি হয় না


দিনাজপুরের হিলিবন্দর দিয়ে বিভিন্ন পণ্য আমদানি হলেও ফল (আপেল, আনার, আঙ্গুর, কেনু, আম ও কমলা) আমদানি হচ্ছে না সাত বছর ধরে। তাই হিলি বাজারের ফল বিক্রেতাদের বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে আমদানি করা ফল হিলিতে এনে বিক্রি করতে হয়। এতে লেবার ও  পরিবহন খরচ মিলিয়ে প্রতিকেজি ফলে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি পড়ে। এর প্রভাব পড়ে খুচরা বাজারে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, হিলি বন্দর দিয়ে ফল আমদানিতে কোনো বাধা নেই। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নীতিমালা মেনে আমদানি করা যাবে। 

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ক্রেতারাও বাধ্য হয়ে বেশি দামে এসব ফল কিনছেন। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা বলছেন, ফল আমদানিতে শুল্ক নির্ধারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কিছু জটিলতা ও দূরত্বের কারণে আমদানিকারকেরা হিলি বন্দর দিয়ে ফল আমদানিতে উৎসাহিত হচ্ছেন না। 

হিলি বাজারের ফল বিক্রেতরা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আগে এই বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত ফল ঢাকাসহ সারাদেশে সরবরাহ করা হতো। আর এখন বেনাপোল, সোনামসজিদ, ভোমরা বন্দর দিয়ে আমদানি করা ফল (আপেল, আনার, আঙ্গুর, কেনু, কমলা) হিলিতে আনতে হচ্ছে। তবে আমরা ঢাকা থেকে আনি না। আমরা বিরামপুর থেকে আনি। আমাদের মহাজন বিভিন্ন বন্দর থেকে এসব ফল নিয়ে এসে বিরামপুরে মজুত করেন।’  

আরেকজন ফল বিক্রেতরা মো. আতিয়ার রহমান বলেন, ‘হিলি বন্দর দিয়ে ফল আমদানি না হওয়ায় অন্য বন্দরের আমদানি করা ফল আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে লেবারসহ পরিবহন খরচ বেশি পড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে। আমরা প্রতিকেজি আঙ্গুর ২৫০ টাকা, কমলা ২০০ টাকা, মাল্টা ২০০ থেকে ২২০ টাকা, আনার ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। হিলি বন্দর দিয়ে এসব ফল আমদানি হলে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কম হতো।’ 

হিলি বন্দরের কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ মেসার্স খাঁন অ্যান্ড সন্স এজেন্সির মালিক মো. এনামুল হক খাঁন বলেন, ‘২০১৭ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভারত থেকে আমদানিকৃত ভারতীয় ট্রাকের চাকার ওপর ভিত্তি করে পণ্যের ওজন নির্ধারণ করে দেওয়ায় আমদানিকারকেরা এই বন্দর দিয়ে ফল আমদানিতে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছেন। এর ফলে প্রায় ৭ বছর ধরে এই বন্দর দিয়ে কোনো ধরনের ফল আমদানি হচ্ছে না।’ 

তিনি বলেন, ‘এনবিআরের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমদানিকারকেরা ভারতীয় ৬ চাকার ট্রাকে ১৬ মেট্রিক টন আর ১০ চাকার উপরের ট্রাকে ২০ মেট্রিক টন কমলা, কেনু ,মাল্টা, ৬ চাকার ট্রাকে ১৭ মেট্রিক টন আর ১০ চাকার উপরের ট্রাকে ২০ মেট্রিক টন আঙ্গুর, ৬ চাকার ট্রাকে ১৭ মেট্রিক টন আর ১০ চাকার উপরের ট্রাকে ২৪ মেট্রিক টন আনার, আপেল, ৬ চাকার ট্রাকে ২০ মেট্রিক টন আর ১০ চাকার উপরের ট্রাকে ২৪ মেট্রিক টন আম আমদানি করতে পারবেন।  সেই অনুযায়ী শুল্ক পরিশোধ করতে হবে।’ 


এনামুল হক খাঁন আরও বলেন, ‘৬ চাকার ট্রাকে এনবিআরের বেঁধে দেওয়া পরিমাণ ফল আমদানি করা সম্ভব না হলেও শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। এ কারণেই আমদানিকারকেরা হিলি বন্দর দিয়ে ৭ বছর ধরে ফল আমদানি করছেন না।’ 

হিলি কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বন্দর বিষয়ক সম্পাদক মো. রবিউল ইসলাম সুইট বলেন, ‘যেসব বন্দর দিয়ে ফল আমদানি করা হয়, প্রায় আমদানিকারই ঢাকার। আর ফল সাধারণত আসে ভারতের নাসিক, নাগপুর, দিল্লি, কাশ্মির ও কলকাতা থেকে। ওইসব এলাকা থেকে হিলি বন্দরের দূরত্ব বেশি। তাই পরিবহন খরচ বেশি পড়ে আমদানিকারকদের। যেমন কলকাতা থেকে হিলি বন্দরের দূরত্ব প্রায় ৩৫০ কিলো মিটার। আর বেনাপোল, সোনামসজিদ, ভোমরা বন্দরের দূরত্ব ৮০ থেকে ১৫০ কিলোমিটারের মধ্যে। তাই ওইসব বন্দর দিয়ে পরিবহন খরচ কম পড়ে। আবার পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে ওইসব বন্দর থেকে ফলবাহী বাংলাদেশি ট্রাক ৪ থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছাতে পারে। আর হিলি বন্দর থেকে ফলবাহী ট্রাক ঢাকা পৌঁছাতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা সময় লাগে। এরফলে আমদানিকারকেরা ফল আমদানিতে অনীহা প্রকাশ করছেন।’ 

হিলি শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা শুকান্ত দাশ ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘হিলি বন্দর দিয়ে ফল আমদানি বন্ধ নেই। তবে আমদানিকারকেরা হয়তো বাড়তি সুবিধা নিতে না পারায় এই বন্দর দিয়ে ফল আমদানি করছেন না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নীতিমালা অনুসরণ করে আমদানিকারকেরা ফল আমদানি করলে আমরা সবধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত।’ 

ঢাকা বিজনেস/এম



আরো পড়ুন