০১ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার



চলছে ধান কাটা, বাড়ছে বন্যার শঙ্কা

তানভীর আহমেদ, সুনামগঞ্জ || ০২ মে, ২০২৪, ০৫:৩৫ এএম
চলছে ধান কাটা, বাড়ছে বন্যার শঙ্কা


হাওর-বাওড়ের জেলা সুনামগঞ্জে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল শঙ্কা প্রকাশ করায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা।  

এ বছর বোরো ধান রোপণের শুরু থেকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার ছোট-বড় ১৩৭ হাওরে  ইতোমধ্যে ৯২.০৮ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়েছে। বাকি যেটুকু রয়েছে, সেগুলো কেটে তুলতে সাপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ৩ মে থেকে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওড় এলাকায় (সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নেত্রকোনা) ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের শঙ্কা রয়েছে। এই অবস্থায়, হাওড় এলাকার ফসল রক্ষায় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে কৃষি বিভাগ।

নিদের্শনা মতে, বোরো ধান ৮০ শতাংশ পরিপক্ব হয়ে গেলে দ্রুত সংগ্রহ করে নিরাপদ ও শুকনো জায়গায় রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া দ্রুত পরিপক্ব সবজি সংগ্রহ, কলা ও অন্যান্য উদ্যানতাত্ত্বিক ফসল এবং সবজির জন্য খুঁটির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। শেষ মুহূর্তে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এমন পূর্বাভাসে জমির পাকা ধান কাটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন হাওড় পাড়ের অসংখ্য কৃষক। 

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে ও জেলার উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাত হলে পাহাড়ি ঢল নেমে আগাম বন্যা দেখা দেয় হাওরে। ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে কিংবা বাঁধ উপচে হাওরের ফসল তলিয়ে ফেলে। ২০১৭ সালের হাওর-বিপর্যয়ের সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। সে বছর হাওর থেকে একেবারে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল তাদের। শেষ সময়ে পাহাড়ি ঢল নামার আতঙ্কে বুক কাঁপছে কৃষকদের। 

কৃষি বিভাগের ভাষ্য, এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। নির্বিঘ্নে হাওরের পুরো ধান কৃষক গোলায় তুলতে পারলে গত বারের চেয়ে এবার আরও ১১০ কোটি টাকার বেশি ধান উৎপাদিত হবে। গত বছর ৯ লাখ ৬ হাজার ৬৪৯ মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হয়েছিল। এবার ৯ লাখ ১৩ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ হাজার ১১০ কোটি টাকা।’

শান্তিগঞ্জ উপজেলার কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, ‘এ বছর আমরা দেখার হাওরে ২৬ কিয়ার জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। এই মৌসুমে কয়েকবার বৃষ্টি হওয়ায় ধানের ভালো ফসল হয়েছে। ধান কাটা প্রায় অর্ধেক হয়েছে, এই মুহূর্তে ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যার পূর্বাভাসে কিছুটা আতঙ্কে আছি। ভারী বৃষ্টি হলে আমাদের নিচু এলাকার হাওরের পাকা ধান তলিয়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোনো কারণে যদি পাকা ধান কেটে তুলতে না পারেন, বিশাল ক্ষতির মুখে পড়বেন। তার মতে আবহাওয়া যদি এভাবে আরও ৪ থেকে ৫ দিন ভালো থাকে তাহলে সব ধান গোলায় তুলতে পারবেন।’ 

তাহিরপুর উপজেলার বৃহত্তর শনির হাওরের কৃষক লোকমান মিয়া বলেন, ‘প্রতি বছরই কোনো না কোনো সময় আগাম বন্যা দেখা দেয়। অনেক সময় পাহাড়ি ঢল আর আগাম বন্যায় পুরে হাওরের ধান তলিয়ে যায়। এবারও সেই বন্যার আতঙ্ক নিয়ে হাওরের অর্ধেকের বেশি ধান কাটা শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় দুই একের মধ্যে বন্যা হওয়ার শঙ্কায় চিন্তায় আছি। পাহাড়ি ঢল আসলে নদীর পানি উপচে হাওরে তলিয়ে যেতে পারে।’ 

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরের কৃষক ফজলু মিয়া বলেন, ‘মেঘ বৃষ্টির দিন আইছে, চারদিকে শুধু বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলের খবর পাওয়া যাচ্ছে। কৃষকরা ভয়ে আছেন, যদি পাহাড়ি ঢল নামে, তাহলে বিশাল ক্ষতি হবে। এবছর উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান বেশিরভাগ হাওরে রোপণ করায় ধান দেরিতে পেকেছে, তাই হাওরে ধান দেরিতে কাটা পড়ছে। এক সপ্তাহ সময় পেলে ধান কাটা শেষ হবে। ’

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘জমির ধান ৮০ ভাগ পেকে গেলে দ্রুত কর্তন করা ও ধান শুকিয়ে নিরাপদ স্থানে রাখার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন হাওরে কৃষক-শ্রমিকদের পাশাপাশি ফসিল  মাঠে কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিনে ধান কাটা হচ্ছে। আশা করছি এক সাপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা শেষ হবে।’

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, ‘এ সপ্তাহে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। সে ক্ষেত্রে নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি যেতে পারে। এতে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।’  



আরো পড়ুন