সুন্দরবনে স্যাটেলাইট ট্যাগ বসানো চারটি কুমিরের মধ্যে একটিকে শত কিলোমিটার ঘুরে চিতলমারীর একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার (১২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় খুলনা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের একটি দল কুমিরটি উদ্ধার করে। এর আগে লবণ পানির কুমিরের আচরণ ও গতিবিধি গবেষণার জন্য সুন্দরবনে চারটি কুমিরের গায়ে স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে অবমুক্ত করা হয়েছিল। উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলনা বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা তন্ময় আচার্য।
অবমুক্ত করা চারটি কুমিরের মধ্যে তিনটি সুন্দরবনের ভেতরে ঘোরাঘুরি করলেও এই কুমির মোংলা, রামপাল, মোরেলগঞ্জের পানগুছি পিরোজপুরের কচা, শরণখোলার বলেস্বর নদী অতিক্রম করে মধুমতি নদী সংলগ্ন বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার কলাতলা ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকার একটি পুকুর অবস্থান করছিল।
চিতলমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইকরাম হোসেন জানান, গতকাল (১১ এপ্রিল) বৃহস্পতিবার রাতে ওই এলাকার মধুমতি নদী সংলগ্ন রাস্তায় কুমিরটিকে দেখতে পায় স্থানীয়রা। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়রা কুমিরটি দেখার জন্য রাস্তায় ভিড় জমায়। এক পর্যায়ে কুমিরটি নদীতে না ফিরে রাস্তার পার্শ্ববর্তী একটি পুকুরে অবস্থান নেয়। শনিবার সকাল থেকে ওই কুমিরটিকে দেখতে শত শত উৎসুক জনতা পুকুরটিকে ঘিরে রেখেছে। কুমিরটির নিরাপত্তার জন্য ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ওই স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।
ওসি আরও জানান, বিষয়টি বনবিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানালে সন্ধ্যার পরে খুলনা বন্য প্রাণ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের একটি বিষেশজ্ঞ দল কুমিরটি উদ্ধার করে।
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানান, গত ১৩ মার্চ সর্বপ্রথম দুটি কুমির অবমুক্ত করা হয়েছিল। এরপর গত ১৬ মার্চ স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে আরও একটি কুমিরের সঙ্গে এই কুমিরটিকেও অবমুক্ত করা হয়েছিল সুন্দরবনের হারবাড়িয়া পয়েন্টে। কুমিরের গায়ে স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে নদীতে অবমুক্ত করার কাজটি যৌথভাবে করেছে বন বিভাগ ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)। তাদের সহযোগিতা করছে জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিআইজেড)।
হাওলাদার আজাদ কবির আরও বলেন, ‘সুন্দরবনের কুমির কোথায়, কিভাবে বিচরণ করে, তা নিয়ে এর আগে বিস্তারিত কোনো গবেষণা হয়নি। আমরা প্রতি বছরই সুন্দরবনে কুমিরের কৃত্রিম প্রজনন ঘটিয়ে অবমুক্ত করে থাকি। এ পর্যন্ত বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র থেকে প্রায় ২০০ কুমির সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়েছে। তবে তাদের গতিবিধি ও পরবর্তী সময়ে তারা কোথায় যায়, সেসব গবেষণা কখনো করা হয়নি। সে কারণেই স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে এই গবেষণাটি করা হচ্ছে।
ঢাকা বিজনেস/বাপ্পা/