২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



টাঙ্গাইলে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত চাষিরা, ২০ হাজার মৌবাক্স স্থাপন

আব্দুল্লাহ আল নোমান, টাঙ্গাইল || ২১ জানুয়ারী, ২০২৩, ০২:৩১ পিএম
টাঙ্গাইলে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত চাষিরা, ২০ হাজার মৌবাক্স স্থাপন


টাঙ্গাইলে সর্বত্রই সরিষার আবাদ হয়েছে। সরিষা ক্ষেতের চারপাশে সারিবদ্ধভাবে মৌবাক্স স্থাপন করা হয়েছে। এসব পালিত মৌমাছি সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌবাক্সে জমা করছে। মৌ চাষিরাও এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। এসব মধু দেশ-বিদেশে সরবরাহ হচ্ছে। এদিকে, মধুর দাম কম থাকায় কাঙ্ক্ষিত আয় নিয়ে দুশ্চিতায় রয়েছেন মৌ চাষিরা। তবে, চাষিদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

সরেজমিনে দেখা যায়, ক্ষেতের পাশে স্থাপন করা হয়েছে সারি সারি মৌবাক্স। সেখানে কাজে ব্যস্ত মৌ চাষিরা। নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। আবার সেখান থেকেই মধু বিক্রিও করা হচ্ছে। 

মৌ চাষিরা বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মধুর দাম বৃদ্ধি না করে আরো কমানো হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মধুও কম পাওয়া যাচ্ছে এবং দামও কম। যে পরিমাণে খরচ হচ্ছে সে তুলতায় মধু বিক্রি করে লাভবান হওয়া যাচ্ছে না। কোম্পানি থেকে মধুর দাম কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার কারণে আমরা ঠিকমতো মধু বিক্রি করতে পারছি না। বিক্রি করতে না পারলে সামনের দিনগুলো চলা আমাদের খুবই দুষ্কর হয়ে যাবে। আবহাওয়া খারাপ থাকায় আমাদের উৎপাদন কম হচ্ছে, একইসঙ্গে মাছিও নষ্ট হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে সরকারি সহযোগিতা না থাকায় নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।  


সাতক্ষীরা থেকে আসা মৌ চাষি জহিরুল ইসলাম খোকন বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এবার মধুর সংগ্রহ কম হচ্ছে। এবার মধুর দামও কম। পাশাপাশি আবহাওয়া খারাপ থাকায় মৌ মাছিগুলো বের হয় না। এতে আমরা কাঙ্ক্ষিত মধু পাচ্ছি না। ৪০টি বাক্স থেকে মাত্র ৫ থেকে ৬ মণ মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। আমি ৮ বছর ধরে এ ব্যবসা করছি। আমাদের দাবি মধুর দাম বৃদ্ধি করা হোক।’ 

বাঘিল ইউনিয়নের পাইকমুড়িল গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন আলম বলেন, ‘এবার প্রায় ৫ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। সরিষা আবাদের পাশেই মৌবক্স স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে এক গাছ থেকে আরেকটি গাছে পরাগায়ণের সৃষ্টি হয়। এতে ফলন বৃদ্ধি পায়।’ 

জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, জেলায় এবার সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫২ হাজার হেক্টর। আর উৎপাদন হয়েছে ৫৮ হাজার ১২০ হেক্টর। এতে ৬ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে বেশি সরিষা আবাদ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। এবার ৭০ হাজার মেট্রিক ট্রন সরিষা উৎযাপন হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের।  


এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাসার বলেন, ‘সারাদেশের মধ্যে টাঙ্গাইল জেলা সরিষা আবাদে দ্বিতীয়। সরিষা আবাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি এবার মৌ চাষিরা সরিষা ক্ষেত্রের পাশে প্রায় ২০ হাজার মৌ বক্স স্থাপন করেছে। মৌচাষের মাধ্যমে সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করায় ফলন বেড়ে যায়। এজন্য মৌ চাষিদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। বিগত বছরগুলো কৃষকরা মৌ চাষে বাঁধা দিলেও বর্তমানে বাঁধা দেওয়ার প্রবণতা খুবই কম।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌ চাষ করলে সরিষার পরাগায়ণের ফলে আবাদ শতকরা ২০ থেকে ৩০ ভাগ ফলন বৃদ্ধি পায়। সরিষা ফুলের মধু যেমন খাঁটি, তেমনি সুস্বাদু। মধু উচ্চমাত্রার প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক হওয়ায় এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি ও ক্রেতাদের কাছে। কৃষি বিভাগসহ স্থানীয় লোকজন মৌ চাষিদের সহযোগিতা করছে।’ 

ঢাকা বিজনেস/এম



আরো পড়ুন