মীর রবি ||
২৪ নভেম্বর, ২০২৩, ০৭:৪১ এএম
ভাওয়াইয়া
তিস্তার ধূ-ধূ বালু উড়িয়ে কোথায় কার কণ্ঠে ওঠে ভাওয়াইয়া, ও মইষাল বন্ধু একবার মোর পানে চাও। বাটা ভরা পান দেমো, মোক একখান ভাবের গান শুনিয়্যা যাও।
এপার-ওপার ভাঙনের সুর ওঠে, জলকোলাহলে বিরহী ঢেউ তোলে ভাওয়াইয়া। গানের কথা বান্দে জলকাতর নদীর কান্নায়। যৈবতী কন্যার জলে ভেসে যায় সুখ-দুঃখ। মনপাড়ে পরে থাকে শুধু হাহাকার।
গ্রীষ্মরোদে ফেটে যায় জমিন, ফসলি মাঠের মতো পরিত্যাক্ত হয় গানের খাতা। তৃষ্ণার্ত গলায় আর কোনো সুর বাজে না, বিচ্ছেদী হাওয়ায় দূরে মিলে যায় উত্তরে সংসার। অভাবী দিনে বাজে না আর রাখালের বাঁশি, ভাওয়াইয়ার সুরের মতো হারায় আমাদের কাহিনী।
জরিনার বৈশাখ
জরিনার ভাঙা চালার ফাঁকে বৈশাখ আসে না, ঝড় আসে। শহুরে বর্ষ নয়, অলীক ঈলিশের গন্ধ এসে মেশে পান্তা পেঁয়াজে। রোজকার সকাল- দুটো ভাঁজা মরিচ, কখনো শুকনো লঙ্কা পোড়া কিংবা একটু পাটশাক অথবা আলু ভর্তায় তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে। জরিনার বৈশাখজুড়ে থাকে ক্ষুধার গল্প। কালবৈশাখীর দুঃস্বপ্নে বিধ্বস্ত স্বপ্ন পরে থাকে জলহীন নদীপাড়, নিখোঁজ নদীর মতো একদিন জরিনাও নিখোঁজ হয়- নিখোঁজ হয় গুম আবহাওয়া!
আমাদের বৈশাখ গুম হয়, গুম হয় লোকায়োজন। সকল ক্ষুধা এসে গ্রাস করে মন ও মনন। মঙ্গল শোভাযাত্রায় টেপা পুতুাল হয়ে হয়তো জরিনারাও ফেরে, শুধু পুলিশি পাহারায় ফেরে না জরিনার শৈশবী বৈশাখ।
চরকাব্য
চরের কালো কালো মেয়েরাই আমাদের মেয়ে, শ্যামা বর্ণের মেয়েদের ঘিরে ছেলেদের রূপকথা ডুব দিয়ে আসে মরা গাঙে। কালো-শ্যাম রঙে রটে যায় কালির কাব্য, এ চর ও চর ঘুরে বাতাসে ভাসে উত্তেজক গল্প। জোছনা ঘেরা বাদামের জমিন আরও সবুজ হয়ে উঠলে আমাদের কালো ছেলেরা আরও ঘন হয়ে আসে, নতুন জাগা চরে সঞ্চিত করে জল-বালুচরে জলকেলি হয় মরিচিকাভ্রমে। বানের স্রোতের মতো ছোটে ভ্রুন। কালো ছেলেরা, কালো শ্যামা মেয়েরা আদরে আদরে ফসলে ভরে তোলে চরের জমিন। মাঠে মাঠে আবার দাগ টানা হয়, কাটা হয় আগাছা-হাসি রাশি দুয়ারে দুয়ারে নতুন ফসলের মতো আবার হেসে ওঠে পোয়াতী মা।
বালিকার পেটে চাঁদ খেলা করে, প্রসবের বেদনা নিয়ে কেউ মরে গেলে নিশ্চুপ চর বানের দুঃখে ডোবে। কারো ঘরে দুর্বল ছেলেটা হাঁটতে শিখলে ফিরে আসে উৎসব, এপার-ওপার বাইচের নৌকা ভাসে। এভাবে একালে সেকাল চরগুলো ঘিরে জীবনের গল্প মহাকালে মেশে।
শেয়ার করুন