অলঙ্কার ও জমি বিক্রির টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা উচিত নয় মনে করছেন এই খাত-সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এমনিতেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ এই খাতে যে টাকা খোয়া গেলে কেউ পথে বসে যাবেন, তেমন অর্থ বিনিয়োগ করা উচিত নয়। কিন্তু অনেক বিনিয়োগকারী না বুঝে অতি প্রয়োজনীয় অর্থ বিনিয়োগ করেন। এতে লাভবান না হলে তার ব্যক্তি জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয়। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ বন্ধ হয়ে যায়। অনেকে আত্মহত্যার পথ পর্যন্ত বেছে নেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার অধ্যাপক ড. রুমানা ইসলাম এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘যে টাকা ব্যাংকে পড়ে থাকলে সমস্যা নেই, সেই টাকাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে। অনেকে জমি, অলঙ্কার বিক্রি বা বন্ধক দিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন। সেটি করা যাবে না। ২০৪১ সালে আমরা একটি উন্নত দেশে পরিণত হবো। সেখানে ক্যাপিটাল মার্কেটের ভূমিকা থাকবে। সঞ্চয়ের কিছু অংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে। এখনই ভবিষ্যৎ গড়ার সময়। তাই আগে সঞ্চয় করতে হবে, পরে খরচ করতে হবে। আমার যদি এক লাখ টাকার সামর্থ্য থাকে, তবে আমি ৫০ হাজার টাকার ঝুঁকি নেবো। এক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকার ঝুঁকি নেওয়া যাবে না।’
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্যপরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘অলঙ্কার বা জমি বিক্রি করে কখনোই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। যে পুঁজি খোয়া গেলেও তেমন কোনো সমস্যা হবে না, সেই টাকা বিনিয়োগ করা উচিত পুঁজিবাজারে। তবে বর্তমানে পুঁজিবাজারের নাজুক পরিস্থিতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করা উচিত। দীর্ঘদিন কয়েক বছর ধরে পুঁজিবাজারে ভালো মানের কোম্পানি তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। যে-সব কোম্পানি গত কয়েকবছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে, সেগুলোর ৮০ শতাংশই কাগজে কলমের কোম্পানি। যে কারণে শেয়ারবাজারের আজ এই দৈন্যদশা। দৈন্যদশা বাজারে উচিত বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে অলস টাকা বিনিয়োগ করা।’
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে কোনো টাকা বিনিয়োগ করে বা করবে সেটা আসলে বোঝা মুশকিল। আমি তাদের এই ব্যাপারে সাজেশন্স দিতে পারি না।’
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘সাধারণত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে যারাই বিনিয়োগ করবে, তাদের প্রত্যেকেরই উচিত জেনে-বুঝে বিনিয়োগ করা। এখানে অনেকেই না বুঝে বিনিয়োগ করেন। যে কারণে বেশিরভাগ সময়ই তারা ক্ষতির শিকার হন। লাভবান হওয়া দূরের কথা, অনেক সময় তারা আসল টাকাই বাজার থেকে ওঠাতে পারেন না। আর অলঙ্কার ও জমি বিক্রি করে কখনেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। কমিশন এ ব্যাপারে বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম করে যাচ্ছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বিনিয়োগকারীদের মাঝে সচেতনতা বাড়ানোই প্রোগ্রামের মূল উদ্দেশ্য।’
ঢাকা বিজনেস/এনই/