চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারীদের আমরণ অনশন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। এদিকে অনশন কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে ৯ জন কর্মচারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। তবে চাকরি স্থায়ী করার লিখিত আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এদিকে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের নেতারা।
মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) রাত সোয়া ১১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অনশনে অসুস্থ হয়ে ৪ জন কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে এবং ৫ জন সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এর আগে, গত সোমবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ অনশন কর্মসূচি শুরু হয়।
অসুস্থ কর্মচারীরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সুফিয়া কামাল হলের হল এটেন্ডেন্ট নূর নাহার, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের হল এটেন্ডেন্ট আবু রায়হান, শহীদ রফিক জব্বার হলের গার্ড সেলিম, শেখ হাসিনা হলের মালি শরিফুল ইসলাম, শেখ হাসিনা হলের পরিচ্ছন্নতাকর্মী রিতা আক্তারসহ আরও ৪ জন।
এদিকে, সোমবার সকাল থেকে অনশন কর্মসূচি চললেও সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো কর্তাব্যক্তি তাদের সঙ্গে দেখা করতে যাননি বলে জানান আন্দোলনকারীরা। পরে রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান এবং চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ ঘটনাস্থলে গিয়ে অনশনরতদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে চাকরি স্থায়ী করার লিখিত আশ্বাস না পাওয়ায় অনশন কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে পাকা সড়কের ওপর তীব্র শীতে রাতযাপন করেন অনশনকারীরা।
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সঙ্গে আলোচনায় বসেন অনশনকারী কর্মচারীদের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল। এ সময় তারা চাকরি স্থায়ী করার বিষয়ে লিখিত আশ্বাস দিতে উপাচার্যকে অনুরোধ করেন। তবে লিখিত আশ্বাস দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নতুন হলের স্থায়ী পদগুলোতে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে মৌখিক আশ্বাস দেন উপাচার্য। ফলে উপাচার্যের মৌখিক আশ্বাসে রাজি না হয়ে অনশন কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন কর্মচারীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির সাতজন ও চতুর্থ শ্রেণির ১৪৯ জন কর্মচারী ‘দৈনিক মজুরি’ ভিত্তিতে কর্মরত আছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন না থাকায় তাদের নিয়োগ স্থায়ী করা সম্ভব হচ্ছে না।
শেখ হাসিনা হলের মালি শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, তিনি লিখিত আশ্বাস দিতে রাজি হননি। তাই অনশন চালিয়ে যাওয়ায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন পর্যন্ত ৯ জন কর্মচারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবে চাকরি স্থায়ী করার লিখিত আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের অনশন চলবে।’
সামগ্রিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে সশরীরে দেখা করতে উপাচার্যের দপ্তরে গেলেও তিনি দেখা করতে রাজি হননি। তবে এর আগে উপাচার্য গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যারা আন্দোলন করছেন তারা মূলত চতুর্থ শ্রেণীর অস্থায়ী কর্মচারী। নতুন হলগুলোতে তারা আবেদন করলে আমরা সর্বোচ্চ বিবেচনা করবো।’
উজ্জল/এম