২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার



শিল্প-সাহিত্য
প্রিন্ট

ভিন্ন রুটে পদযাত্রা

চন্দনকৃষ্ণ পাল || ১০ জানুয়ারী, ২০২৩, ১১:০১ এএম
ভিন্ন রুটে পদযাত্রা


তুমি মানো কিংবা নাই মানো
এই স্নিগ্ধ সকালটি একান্তই আমার।

এখানে কারো চোখ রাঙানি নেই,
নেই অনুরোধ কোনো তদ্বিরের
ঘুমভাঙা পাখিদের কলকাকলি মগজকে প্রকৃত শান্তির
বাণী শুনিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত
হাইরাইজের গায়ে এখনো একটু অন্ধকার লেগে আছে
হারিয়ে যাওয়ার আগে জানান দিচ্ছে—রৌদ্র ঝলসিত দিনে ভালো থাকিস।
পুব আকাশের গায়ে কী এক অসাধারণ রঙের প্রলেপ লাগছে 
যার নাম জানা নেই বলে কোনো আফসোস নেই আমার
আমি জানি পৃথিবীর সব কিছু জেনে নেওয়া আমার কম্ম নয়।
আর পাশে শুয়ে থাকা সুপ্তির ঘুমতৃপ্ত শান্ত মুখ 
আর এই সকালের স্নিগ্ধতা একাকার হয়ে গেছে বলেই
এই স্নিগ্ধ  সকালটি একান্তই আমার
সেটা তুমি মানো কিংবা নাই মানো।

ভিন্ন রুটে পদযাত্রা
অচেনা এই গোপাট ধরে হেঁটে যাই সকাল দুপুর সন্ধ্যে
নিবন্ধন করা দলিলাদি মূল্যহীন হয়ে যায় সহসাই
আমি চড়ে বসি ভিন্ন রুটের বাসে!
শাহবাগ-কাঁটাবন-জিগাতলা ছেড়ে এসে শংকরে থামি।

বাংলা একাডেমি অবাক তাকিয়ে রয়
তার চত্বর ছেড়ে হেঁটে যাই শাহবাগ পানে
প্রকৃত রুটের বাস অবাক তাকায়,আমি চড়ি ভিন্ন রুটে
গরমভাতে ফুঁ দিয়ে ভর্তা মেখে গলাধকরনের কথা পাল্টে যায়—
ক্ল্যাসিক হোটেলের নান আর সব্জিতে অবলীলায় মগ্ন হয়ে যাই
সাথে গাঢ় দুধ মেশানো এক কাপ চা!

আজকাল এই হয়,হচ্ছে।
ভবিতব্য বুঝি এর নাম?

জায়গা বদল
উনিশ বছর ধরে জমে ওঠা যত জঞ্জাল
সব কিছু ভ্যানে তুলে আজ আবার জায়গা বদল
রিকশায় পরিজন, মুখে মাখা বিষাদ আবীর
পুরনো সে স্থাপনার জন্য ভালোবাসা?

আমি তো উদ্বাস্তু এক, আজ এখানে
কাল আবার অন্য স্থাপনায়
দুহাতে পারিনি আমি লুটে নিতে অর্থ বিত্ত ধন
ঘাড়ে ঋণের বোঝা, প্রতি মাসে সুদের দহন
পোড়ায় রাত্রি-দিন অভাবের লাল চোখ ঐ...।

অনেকের বিদ্রুপে আহত হই নিয়মিত,তারপরও
এই হাত এগোয় না বিত্তের নকশা কাটা নিটোল জমিনে
তুলে নিতে কিছু শস্য কণা...।

খুব বেশি বাকি নেই,
জানি আমি বিদায়ের দিন এলো আঁধারকে নিয়ে
তারপর?
তারপর সব কিছু গাঢ় অন্ধকারেই হবে যে বিলীন।

অলকানন্দার ব্রিজে ধূসর সকাল
খুব সাজানো গোছানো ছিলো স্বর্ণ বিকেল
আজ ভোরে এসে দেখি সব কিছু ছড়ানো ছিটানো
কার হাত ভেঙে চুরে রেখে গেছে সদাহাস্য এই প্রিয় মুখ
কার মনে হিংসার অন্ধকার সারাক্ষণ মেতে থাকে 
ভেবে ভেবে সারা হই জবাব মেলে না!

সবুজের মখমলে ছাওয়া ছিলো তার চারপাশ
তার সাথে পাখিদের নানা রঙ কথা,
কথাই তো,পাখিদের নিজেদের কথা
তার সাথে মিশে আছে  আমাদের হিংস্রতার রেশ
তা না হলে তীব্র চৈত্র দিনে কুয়াশা মেলবে কেনো 
নিজেদের ডানা?

ধ্বংসের প্রান্ত ছুঁয়ে থেমে আছে স্বপ্নের দিন 
তার গায়ে কুয়াশা রোদন,ঘুম ভেঙে কী দেখি?
এমন তো হতে পারে না জেনে আরো বেশি
ঝাপসা দেখতে থাকি এই দুই চোখে-
আমার অলকানন্দা ব্রীজে ঝড়ের তাণ্ডব রেখে
যারা গেছে লাভের বখরা নিয়ে আনন্দের পথে
তাদের জন্য আজ অভিশাপ রেখে যাই
বজ্রপাতের কাছে তারা ঠিক নতজানু হবে
তার আর খুব দেরি নেই...

নিমাই শিববাড়ি
বিলাশ পার হলেই আজ আর ছায়া নেই
ধূসরতার স্থায়ী আবাস দশদিকে
ন্যাড়া পাহাড়গুলো বেকুবের মতো তাকায়
আর অভিশাপ দেয় দুপেয়ে পশু গুলোকে!
পিচঢালা পথে পথে টেম্পুরা বিষ ছড়ায়

আঠারো ঘণ্টা প্রতিদিন 
দুপেয়েরা আহ্লাদিত
চোরাই পণ্যে নিজেরা টিলা হয় পাহাড় হয়
আর শিবঠাকুর ধ্যান ভেঙে 
দুপেয়ের কর্মকাণ্ড দেখেন 
হয়তো এক ফালি হাসিও তার
জঙ্গুলে মুখায়বয়বে ফুটে ওঠে কখনো সখনো।

হাজার একর জমি লুটেপুটে
এখন ঢেঁকুর তুলে ঘৃণ্য মহাজন 
তার চোখে আরো লোভ দেখি
লোল পড়ে জিহ্বা থেকে
চেটে খেতে চায় আরো ধানী জমি
শিবের পুকুর, পুকুরের পাড়, মন্দির
সব...সব কিছু...
নিমাই শিববাড়ি, শিবের পুকুর
একদিন শূন্য হয়ে যাবে?



আরো পড়ুন