আজ ২২ জুলাই। কবি কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের ১৯০তম জন্মবার্ষিকী। তিনি ১৮৩৩ সালের ২২ জুলাই তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের নদীয়া জেলার কুমারখালীতে (বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলা) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা লোকসংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক।
হরিনাম মজুমদার জনসমাজে কাঙাল হরিনাথ নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি বাউল সংগীতের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন। বাল্যকালে কৃষ্ণনাথ মজুমদারের ইংরেজি স্কুলে কিছুদিন অধ্যয়ন করেন কিন্তু অর্থাভাবে প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যাশিক্ষা আর বেশিদূর অগ্রসর হয়নি। কিন্তু সারাজীবন অবহেলিত গ্রাম বাংলার শিক্ষা বিস্তারের জন্য এবং শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। শিক্ষার প্রসারে তিনি সবসময় ছিলেন নিবেদিত প্রাণ।
১৮৫৫ সালের ১৩ জানুয়ারি হরিনাথ তার কয়েকজন বন্ধুর সাহায্যে কুমারখালী গ্রামে একটি দেশীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং বিদ্যালয়ে বেশ কিছুদিন বিনা বেতনে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তী সময়ে তাঁর সহায়তায় ১৮৫৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর কৃষ্ণনাথ মজুমদার কুমারখালীতে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি প্রায় ১৮টি বই রচনা করেছিলেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘বিজয় বসন্ত’, ‘কবিতা কৌমুদী’।
কাঙাল হরিনাথ বহু সহজ-সুরের গানও রচনা করেন এবং নিজের তৈরি দলবল নিয়ে তিনি গান গেয়ে বেড়াতেও পছন্দ করতেন। তৎকালীন সময়ে হরিনাথের গানগুলো অনেক লেখক ও সংগীত বোদ্ধাদের মন জয় করে এবং ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে। তারমধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অন্যতম। সাহিত্যকর্মে তার সুযোগ্য শিষ্যদের মধ্যে অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, দীনেন্দ্রনাথ রায়, জলধর সেন প্রমুখ পরবর্তী জীবনে যথেষ্ট খ্যাতি ও সুনাম অর্জন করেছিলেন। ‘হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হলো’ গানটি তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা।
‘‘হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হল পাড় কর আমারে।
তুমি পাড়ের কর্তা জেনে বার্ত্তা তাই ডাকি তোমারে।।
আমি আগে এসে ঘাটে রইলাম বসে।
যারা পরে এল আগে গেল আমি রইলাম পরে।।’’
তাঁর মৃত্যুতে (১৬ এপ্রিল, ১৮৯৬) ইন্ডিয়ান মিরর পত্রিকা মন্তব্য করেছিল যে, ‘নদীয়া জেলাবাসী একজন মহান ব্যক্তিত্বকে হারালো’। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কুষ্টিয়ায় তাঁর স্মরণে ‘কাঙাল হরিনাথ জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করে।
ঢাকা বিজনেস/এইচ