০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের কাছে স্বদেশ মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসনের দাবি জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা।
বুধবার (১২ জুলাই) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলাপকালে রোহিঙ্গারা বলেছেন, ‘ক্যাম্পে আশ্রিত জীবন অনেকটা বন্দিজীবন। এমন জীবন চাই না, দ্রুত স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরতে চাই।’ এ জন্য মিয়ানমারকে জোর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে স্বদেশে ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের জোরাল ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা।
এসময় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের কাছে ক্যাম্পের শিক্ষাব্যবস্থা, খাদ্য ও নিরাপত্তা বিষয়েও আলাপ করেছেন।
পরিদর্শনকালে প্রতিনিধি দলের প্রধান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ারের হাতে রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়েরের নেতৃত্বে একদল রোহিঙ্গা একটি আবেদনও দেন। সেখানেও প্রত্যাবাসনের দাবি জানানো হয়।
এর আগে উজরা জেয়ারের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি বুধবার (১২ জুলাই) সকাল ৯টায় বিমানযোগে কক্সবাজার পৌঁছান। সেখান থেকে সড়কপথে রওনা দেন উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দিকে। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে প্রতিনিধি দল উখিয়া বালুখালী ৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইউএনএইচসিআর-পরিচালিত রোহিঙ্গাদের রেজিস্ট্রেশন সেন্টার পরিদর্শন করেন। ওখান থেকে হেঁটে একে একে পুষ্টি কেন্দ্র, ডব্লিউএফপি পরিচালিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এরপর ১১ নম্বর ক্যাম্পের কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে একদল রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। বৈঠকে ১০ নারী ও ১০ পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে আলাপকারী ১১ নম্বর ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘প্রতিনিধি দলটি ক্যাম্পের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। তাদের জানানো হয়েছে ক্যাম্পে শিক্ষার ব্যবস্থা কম। অল্প লেখাপড়ার সুযোগ থাকলেও উচ্চশিক্ষার সুযোগ নেই। নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না বলে জানানো হয়েছে।’
মো. ইউসুফ নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘প্রতিনিধিরা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে রোহিঙ্গাদের মতামত জানতে চেয়েছেন। রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের আশ্রিত জীবনকে বন্দিজীবন বলে জানিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহল মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের অনুরোধও জানানো হয়েছে।’
মোহাম্মদ ইদ্রিস নামে একজন রোহিঙ্গা জানান, প্রতিনিধিদলকে খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে রোহিঙ্গারা আপত্তি জানিয়েছেন। খাদ্য সহায়তা যেন আগের মতো দেওয়া হয় এমন দাবিও জানানো হয়।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ‘প্রতিনিধি দলটির কাছে তারা নিহত মাস্টার মুহিবুল্লাহর সংগঠনের নেতা পরিচয় দেওয়ার পর কথা বলেন। এসময় যে চিঠিটি দেওয়া হয়েছে, যেখানে রোহিঙ্গাদের নানা দাবি রয়েছে। বিশেষ করে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বদেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানানো হয়।’
প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু, ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও দক্ষিণ এশিয়ায় শরণার্থী বিষয়ক সমন্বয়কারী ম্যাককেঞ্জি রোয়েসহ ১০ সদস্য ছিলেন।
তাফহীম/এইচ
