১২ মার্চ ২০২৫, বুধবার



কদর নেই মাছ ধরার ফাঁদের

তোফায়েল হোসেন জাকির, গাইবান্ধা || ১০ জুলাই, ২০২৩, ০৪:৩৭ এএম
কদর নেই মাছ ধরার ফাঁদের


নদী-নালা ও খাল-বিলবেষ্টিত গাইবান্ধায় বর্ষাকালে চারদিকে নজর কাড়ে থৈ থৈ পানি। এসব পানি ধীরে ধীরে হাটুজলে নেমে আসে। আগেকার এমন সময়ে বিভিন্ন ফাঁদ বসিয়ে ধরা হতো নানা প্রজাতির ছোট-বড় মাছ। এখন আর দেশি প্রজাতির এসব মাছ তেমন চোখে পড়ে না। ফলে মাছ ধরার দারকি, টেপি, পলো, খলাইসহ এসব উপকরণের কদর দিন দিন কমে যাচ্ছে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, সম্প্রতি গাইবান্ধার নলডাঙ্গা, মীরপুর, শোভাগঞ্জ, ভরতখালী, কামারজানি, দারিয়ারপুর হাটসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে ক্রেতাদের জন্য অপেক্ষা করছেন বিক্রেতারা। কিন্তু আগের মতো ক্রেতা নেই।    

 উপকরণ বিক্রেতারা জানান, একসময় গ্রাম-বাংলায় বর্ষাকালে নীচু জমি ও খাল-বিল সেচে মাছ ধরা হতো। কিন্তু দুই দশক ধরে অধিকাংশ প্রজাতির দেশীয় মাছ হারিয়ে গেছে। ফলে চিরায়িত সেই দৃশ্য আগের মতো এখন আর চোখে পড়ে না। তবে আষাঢ় শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে কিছুটা রোদে পুড়ে হাটু পানিতে মাছ ধরার চিত্র দেখা মেলে। কাদা-পানিতে নেমে মাছ ধরা অন্যতম বিনোদনও বটে। 

জানা যায়, ওই সময়ে গাইবান্ধা জেলার নদী-নালা, ও খাল-বিল এলাকার তীরে বসবাসকারী মানুষ জমির আইলের ফাঁকে দারক বা অন্যান্য ফাঁদ বসিয়ে হরেক রকম ছোট ছোট মাছ ধরতেন। এমনকি পেশাদার জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। খাল-বিল ছিল তাদের জীবিকার প্রধান উৎস। এমন মাছই মানুষের আমিষ ও পুষ্টির চাহিদা মিটাতেন। 

দারিয়ারপুর এলাকার বৃদ্ধ কলিম উদ্দিন ব্যাপারি বলেন, ‘একসময়ে নদী-নালা ও বিলের হাটুপানিতে নেমে কিশোর, যুবক ও বৃদ্ধসহ সব বয়সের মানুষ মাছ ধরার মিছিলে মেতে উঠতো। এখন নদী-নালাগুলো মরা খালে পরিণত হয়েছে। মরা খালের পানিতে দেশি প্রজাতির মাছের প্রজনন ক্ষমতা থাকে না। এ কারণে ছোট মাছ যেন সোনার হরিণ হতে চলেছে। আগের মতো অহরহ মাছ পাওয়া যায় না এখানকার খাল-বিলে।’

নলডাঙ্গার নছিমন বেওয়া (৬০) বলেন, ‘খাল-বিলের পাঁচ মিশালী মাছের স্বাদ অন্যতম। মাংসের চেয়ে এ মাছ দিয়ে ভাত খেতে অনেকটাই মুখরোচক। কিন্তু ছোট ছোট মাছ কমে যাওয়ায় সেই রান্নার ঘ্রাণ এখন আর নাকে আসে না।’


আরেক প্রবীণ ব্যক্তি আমান উল্লাহ্ বলেন, ‘আগে এমনভাবে বিভিন্ন জাতের দেশীয় মাছ ধরা গেলেও, এখন আর সেইদিন নেই। হারিয়ে গেছে নানা জাতের মাছ। তাই হাটু পানিতে নেমে জমে উঠে না মাছ ধরার উৎসব।’

দারিয়াপুর হাটে আসা মাছের উপকরণ বিক্রেতা আজগর আলী বলেন, ‘দারকি, টেপি, পলো, খলাইসহ এসব উপকরণ নিজে তৈরি করে হাট-বাজারে বিক্রি করি। কিন্তু এই পেশায় এখন ভাটা পড়েছে। খাল-বিলে দেশি মাছ তেমন না থাকায় এসব ফাঁদ বিক্রি হচ্ছে কম।’ 

কামারজনি এলাকার পেশাদার জেলে নবির হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন ফাঁদ পেতে মাছ শিকার করাই আমার পেশা। ছোট ছোট মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করা হতো। যা দিয়ে পরিবারের মৌলিক চাহিদা মিটতো। এখন আর খাল-বিলে এসব মাছ তেমন পাওয়া যায় না। ফলে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত আছি।’

গাইবান্ধা জেলা মৎস্য জরিপ কর্মকর্তা গোলাম জীলানী বলেন, ‘উন্মুক্ত জলাশ্বয়ে কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরা ও পোনা ধরার ব্যাপারে অভিযান চালানো হচ্ছে। দেশি প্রজাতির মাছ প্রজনন বাড়াতে নানা ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে।’ 

ঢাকা বিজনেস/এইচ



আরো পড়ুন