দেশের শীর্ষ একটি পত্রিকার অন-লাইনে গিয়ে কিছুটা বিব্রত হলাম। সাইট ওপেন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি বিজ্ঞাপন, ওর স্যালাইন কোম্পানির। বিজ্ঞাপনের সাইজ ছোট হলেও সেটি নিউজ পড়তে দিচ্ছিল না। বিজ্ঞাপনের ওপরের দিকে ডান কোণে একটি ক্রস চিহ্ন ছিল, সেখানে বারবার প্রেস করার পরও বিজ্ঞাপনটি যাচ্ছিল না। ওটা ফিক্সড।
তার ঠিকে নিচেই ছিল একটি মোবাইলফোন অপারেটরের বিজ্ঞাপন। নিচের বিজ্ঞাপনটি দেখা যাচ্ছিল না। ওপরের বিজ্ঞাপন সেটিকে ঢেকে দিয়েছিল। নিচের বিজ্ঞাপনটিরও ওপরের ডান পাশে ক্রস চিহ্ন ছিল। কিন্তু সেটিও রিমুভ বা সরানো যাচ্ছিল না।
একই বিজ্ঞাপন দেখলাম দেশের শীর্ষ একটি ইংরেজি পোর্টালে। সেখানেও ওর স্যালাইনের বিজ্ঞাপন ছিল। তবে এর ডান কোণের ক্রস চেপে সরানো গেলো।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনলাইন পত্রিকার পুরো স্ক্রিনজুড়ে শুরুতেই একট বিজ্ঞাপন আসে। জোর করে সরাতে হয়, না হয় মিনিমাম ১০ সেকেন্ড অপেক্ষা করতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্রস চিহ্নে চাপ না দিলে তা যায় না।
দুটো বিজ্ঞাপনের কারণে নিউজ পড়া যাচ্ছিল না। বিরক্ত লাগছিল। আর ওই দুটি ব্র্যান্ডের ওপর গিয়ে ক্ষোভটা পড়ছিল। কারণ পত্রিকাগুলো টাকার জন্য বিজ্ঞাপন নেবেই। আপনি যেভাবে দিতে বলবেন, সেভাবেই দেবে। এমনকি জ্যাকেট পোস্ট (পত্রিকার প্রথম এবং শেষ পাতা জুড়ে) বিজ্ঞাপন দিলেও তাদের ‘না’ নেই। বরং ইনকামের আনন্দে তারা আত্মহারা হবেন। বিজ্ঞাপনের লোকগুলো বাহবা পাবেন। সংবাদমাধ্যম টিকে থাকে মূলত এই বিজ্ঞাপনের কারণেই।
ভাবনা বিষয়, পাঠকরা এসব কিভাবে নিচ্ছেন। যিনি বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন পকেটের টাকা খরচ করে; মূল ভাবনাটা তারই। তাকে ভাবতে হবে, এই বিজ্ঞাপনে পাঠক আকৃষ্ট হবেন, নাকি বিরক্ত হবেন। যদি পাঠক ওই পণ্য, ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আকৃষ্ট হন, সেটা অবশ্যই ভালো। বিজ্ঞাপনের লক্ষ্য তাই হওয়া উচিত। সেজন্যেই দাতারা বিজ্ঞাপন দেন। কিন্তু তারা যদি বিরক্ত হন, সেটা কি হিতে বিপরীত নয়?
একজন পাঠক হিসেবে আমি যেটা করি বা ভাবি, সেটাই বলছি।
পোর্টাল অন করলেই পুরো স্ক্রিনজুড়ে বিজ্ঞাপন এলে হোঁটচ খাই। কনে দেখতে গিয়ে তার বুড়ো নানি বা দাদিকে দেখার মতো অবস্থা। তখন ভাবি, ওই পত্রিকা দেখবো কি দেখবো না। কখনো অন্য পোর্টালে চলে যাই। আবার কখনো ক্রস চিহ্ন চেপে সেটাই দেখার চেষ্টা করি। কিন্তু কনের দাদি-নানিকে দেখার মতো মনে রাখি, কোন ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনটি দেখলাম। মনে মনে তাকে একটা ‘না ভোট’ দিয়ে রাখি। নিউজ বা ভিউজের ভেতরে চলে গেলেও মনে মনে একটা বিরক্তি কিছুটা সময় থেকেই যায়।
এটি শুধু আমার কথা বললাম। জানি না অন্য পাঠকদের মনেও একই ভাবনা কি না। সেটি যদি হয় তাহলে ব্র্যান্ডিংয়ের পরিবর্তে ডি ব্র্যান্ডিং হচ্ছে বলেই আমার ধারণা। সুতরাং গাঁটের পয়সা খরচ করে বিজ্ঞাপন দেওয়ার আগে চিন্তা করুন কী করছেন, কেন করছেন।
লেখক: সম্পাদক, ঢাকা বিজনেস