১৮ মে ২০২৪, শনিবার



ভোজদত্ত ঈদগাহ মাঠে ১২ বছর ধরে ১৪৪ ধারা

টাঙ্গাইল সংবাদদাতা || ২৮ জুন, ২০২৩, ০৮:০৬ পিএম
ভোজদত্ত ঈদগাহ মাঠে ১২ বছর ধরে ১৪৪ ধারা


দুই গ্রামের বিরোধকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে একটি ঈদগাহ মাঠে ১৪৪ ধারা জারি করেছেন জেলা প্রশাসক। উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের ভোজদত্ত গ্রামের ঈদগাহ মাঠে ঈদুল-আজহার দিন ১৪৪ ধারা জারি করেন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার। এতে ঈদের দিন বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) সকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এ ধারা বলবৎ থাকবে। এতে ঈদের দিন ওই মাঠে নামাজ আদায় করতে পারবেন না মুসল্লীরা। এ নিয়ে টানা ১২ বছর ধরে ঈদগাহ মাঠে ১৪৪ ধারা জারি করে আসছে প্রশাসন। 

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ঘাটাইল উপজেলার ভোজদত্ত ও পাশ্ববর্তী কালিহাতী উপজেলার বীরবাসিন্দা গ্রামের সীমানা সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে ঈদের নামাজ আদায়কে কেন্দ্র করে উভয় গ্রামের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় গত সোমবার (২৬ জুন) ১৪৪ ধারা জারির আদেশপত্র জারি করেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রট। এতে করে ঈদগাহ মাঠের ৪০০ গজের মধ্যে সব প্রকার সমাবেশ, স্লোগান, শোভাযাত্রা, মিছিল, পিকেটিং, মাইক্রোফোন ব্যবহার এবং সর্ব সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। তবে বসবাসরত জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যহত থাকবে। আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

স্থানীয়রা জানান, ঈদগাহ মাঠের বয়স প্রায় ২০০ বছর। মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মূলত বিরোধ দুই গ্রামের মধ্যে। গ্রাম দু’টি ঘাটাইল উপজেলার ভোজদত্ত ও পাশ্ববর্তী কালিহাতী উপজেলার বীরবাসিন্দা। ভোজদত্ত ঈদগাহ মাঠের আধিপত্য নিয়ে ঘাটাইল উপজেলার ভোজদত্তসহ আশেপাশের ৫টি গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী কালিহাতি উপজেলার বীরবাসিন্দা গ্রামের লোকদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয় ২০১২ সালে। বিরোধ নিরসনে ওই বছর ২১ নভেম্বর দুই উপজেলার তৎকালীন ইউএনওর উপস্থিতিতে বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে বীরবাসিন্দা গ্রামের আব্দুল গফুর নামে এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। এ অবস্থায় যেকোনো সংঘর্ষ ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় ওই বছরের ২৬ নভেম্বর ঈদুল আজহার দিন জেলা প্রশাসকের নির্দেশক্রমে স্থানীয় প্রশাসন ভোজদত্ত ঈদগাহ মাঠের আশেপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। ঈদের সপ্তাহখানেক পর ১ ডিসেম্বর আহত গফুর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরে এ নিয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন গফুরের ছেলে মোস্তফা কামাল। মামলায় আসামি করা হয় ১৭ জনকে। পরবর্তী সময়ে পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন পাঠায় ১৩ জনের নামে। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। ওই হত্যাকাণ্ডের পর দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে বিরোধ আরও বেড়ে যায় এবং উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় প্রত্যেক ঈদেই ভোজদত্ত ঈদগাহ মাঠে জেলা প্রশাসকের নির্দেশক্রমে ১৪৪ ধারা জারি করে আসছে প্রশাসন।

এ ব্যাপারে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিয়া চৌধুরী বলেন, ‌‘ঈদগাহ মাঠ নিয়ে ঘাটাইল ও কালিহাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী দুই গ্রামের মধ্যে বিরোধের কারণে এই ধারা জারি করে জেলা প্রশাসক। পরে আমরা তা বাস্তবায়ন করি।’ 

নোমান/এইচ



আরো পড়ুন