পেঁয়াজের পর এবার আদার দামও হুহু করে বাড়ছে। সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, প্রায় একমাস ধরে পেঁয়াজের দাম যেমন বাড়ছে, তেমনি আদার দামও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। আর অন্যান্য সবজি তো বরাবরের মতোই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। শনিবার(২৭ মে) রাজধানীর কাওরান বাজার, গুলশান-১ কাঁচাবাজার, মিরপুর-১৩ নম্বর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ মার্কেট ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, ডলার সংকটের কারণে চাহিদামতো আদা আমদানিতে এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। বাজারে সাধারণত চীনা আদার সরবরাহ থাকলে অন্যান্য আদার দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকে। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে এলসি স্বল্পতায় চীনা আদা আমদানি একেবারে বন্ধ রয়েছে। আর থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমারের আদা অল্প পরিমাণে আমদানি হচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়তই এই মশলাজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে দাম আরও বাড়তে পারে।
এদিকে সব ধরনের কাঁচাসবজি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে গত সপ্তাহের মতো। খুচরা সবজি বিক্রেতারা বলছেন, তারা সব ধরনের সবজি বাড়তি দামে কিনছেন। এ কারণে তারাও বাড়তি দামে বিক্রি করছেন।
খুচরা বিক্রেতারা প্রতিকেজি ইন্দোনেশিয়ার আদা ৩৫০ টাকা, মিয়ানমারের আদা ৩০০ টাকা, থাইল্যান্ডের আদা ৪০০ টাকা ও ভিয়েতনামের আদা ২৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। ১০ থেকে ১৫ দিন আগেও প্রতি কেজি মিয়ানমারের আদা ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা, ইন্দোনেশিয়ার আদা ১৬০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আড়তদাররা প্রতিপাল্লা (৫ কেজি) মিয়ানমারের আদা ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন। অথচ গত ১০ থেকে ১৫ দিন আগেও প্রতিপাল্লা মিয়ানমারের আদা বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়।
এদিকে বাজারে প্রতি কেজি ৪০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। প্রতিকেজি পটল ৬০ টাকা, পেঁপে ৮০ টাকা, ঢেড়স ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, করলা ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। করলার মতো উসতাও একই দামে বিক্রি হচ্ছে। আলু প্রতিকেজি ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ১২০ টাকা, ঝিংগা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, সব ধরনের বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ৭০ থেকে ৮০ টাকা, শসা ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা, চিচিংগা ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিচ ফুলকপি ৫০ টাকা, লাউ ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মিরপুর-১৩ নাম্বারের বাসিন্দা মুক্তা। এই গৃহিনী প্রায় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ মার্কেটে বাজার করতে আসেন। তিনি ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘২/৩ দিনের ব্যবধানে সবজির দাম বেড়ে গেছে। প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়তি। যে যার মতো করে বিক্রি করছেন। আমরাও চাহিদা থাকায় তা কষ্ট করে কিনছি। এসব বলে লাভ নেই। কে শোনে কার কথা।’
সবজি বিক্রেতা মো. ইসমাইল ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আমরা আড়ত থেকে বাড়তি দামে কিনে নিয়ে আসি। আমাদের বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়। আর কাঁচাসবজির দাম কখনোই স্থির থাকে না। আমরা একই দাম দিয়ে সব সময় কিনতে পারি না।’
এদিকে মাংস, বয়লার মুরগি, কক ও ফার্মের ডিম আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা, খাশির মাংস ১ হাজার ১০০ টাকা, বয়লার মুরগি ২০০ টাকা থেকে ২১০ টাকা, সোনালি কক ৩০০ টাকা থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের লাল ডিমের প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। মাছের বাজারেও স্বস্তি নেই। প্রতি কেজি রুই মাছ ২৮০ টাকা থেকে ৩৪০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ টাকা, মাঝারি আকারের পাবদা ৪৫০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা, পাঙ্গাস ২০০ টাকা, ইলিশ ৭০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা, হাইব্রিড কই ২৮০ টাকা ও হাইব্রিড শিং ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আদার আড়তদার মো. শফিকুল ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা চাহিদা অনুযায়ী আদা আমদানি করতে পারছেন না। কারণ বর্তমানে ডলারের সংকট রয়েছে। ফলে তারা চাহিদা অনুযায়ী আদার এলসি খুলতে পারছেন না। চীনা আদার আমদানি একেবারেই বন্ধ। অন্যান্য আদা স্বল্প পরিমাণে আমদানি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে আদার দাম আরও বাড়বে। তাই এখনই আদার দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে পর্যাপ্ত এলসি খোলার অনুমতি দিতে হবে।’
ঢাকা বিজনেস/এনই