নিত্যপণ্য পেঁয়াজ ও আলুর দামের লাগান টানা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন সাধারণ ক্রেতারা। তারা বলছেন, যতই দিন যাচ্ছে, ততই পণ্য দুটির দাম হু-হু বেড়েই চলেছে। এছাড়া, সবজি, মাছ ও মাংসেরও দামও সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। শনিবার (২০ মে) রাজধানীর কাওরান বাজার, হাতিরপুল কাঁচাবাজার, মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজার, বনানী কাঁচাবাজার ও গুলশান-২ কাঁচাবাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, পবিত্র-ঈদুল ফিতরের পর থেকে প্রতিনিয়ত পেঁয়াজ ও আলুর দাম বেড়েই চলেছে। ঈদের আগেও প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। আর এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। একই সময়ে যে আলু ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেই আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।
ক্রেতারা বলছেন, প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে। দুই থেকে তিন দিনের ব্যবধানে পণ্যের দাম বাড়ছে। বিশেষ করে সবজির বাজার অধিকাংশ সময়ই অস্থির থাকে। আজ একদাম, তো কাল আরেক দাম। বাজারে যে টাকা নিয়ে যাওয়া হয়, তা দিয়ে চাহিদামতো কেনাকাটা করা যায় না। বাধ্য হয়েই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, আমদানি বন্ধ থাকায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি রেোজার সময় বৃষ্টিতে কৃষকের পেঁয়াজ উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। রোজায় টানা ১০দিন বৃষ্টি ছিল। এই সময়ে কৃষকের অনেক পেঁয়াজ পচে গেছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ হচ্ছে না। যে কারণে পণ্যটির দাম বেড়েই চলেছে। এছাড়া কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল আলু কোল্ড স্টোরেজে মজুত করে রেখেছে। কৃত্রিমভাবে তারা বাজারে আলুর সংকট সৃষ্টি করেছে। যে কারণে এই পণ্যটিরও দাম প্রতিনিয়তই বাড়ছে।
সরেজমিন ঘুরে আরও জানা গেছে, প্রতিকেজি লম্বা ও গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেড়স ৪০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, উসতা ৫০ টাকা, ঝিংগা ৬০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, পেঁপে ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি হালি কাঁচাকলা ৩০ টাকা, লেবু ৪০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি কাকরোল ৭০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, দেশি রসুন ১৪০ টাকা, বিদেশি রসুন ১৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ১২০ টাকা, ধনে পাতা ১৫০ টাকা ও প্রতি পিচ লাউ ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মো. কামরুল। একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। তিনি ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘কাঁচা সবজিসহ তিন-চারটি পণ্য অল্প করে কিনেছি। তাতেই প্রায় ৭০০ টাকা খরচ হয়ে গেছে। প্রায় সব জিনিসের দাম বাড়তির দিকে। বর্তমান বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের জন্য অনেক কষ্টকর হচ্ছে।’
খুচরা পেঁয়াজ-আলুবিক্রেতা আলিম শেখ ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘দেশে আলু, পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই। ইচ্ছাকৃতভাবে অসাধুচক্র এসব পণ্য মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। বাজারে তারা এই পণ্যদুটির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখছে না। তারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কোটিপতি হচ্ছে। আর আমরা খুচরা বিক্রেতা ও সাধারণ ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
এদিকে সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ টাকা, বকরির মাংস ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বয়লার মুরগি ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকা, সোনালি কক ২৮০ টাকা থেকে ৩৩০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।
ফার্মের লাল ডিম প্রতিডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা থেকে ১৬০ টাকা, প্রতি ডজন সাদা ফার্মের ডিম ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, সবজি, মাংসের মতো মাছের বাজারেও নিম্নবিত্তদের নাগালের বাইরে প্রায় চলে যাচ্ছে। প্রতিকেজি পাঙ্গাস মাছ ২২০ টাকা, শোল মাছ ৭৫০ টাকা, দেশি মাগুর ৬০০ টাকা, হাইব্রিড শিং ৪০০ টাকা, বোয়াল ৫৫০ টাকা, রুই মাছ আকারভেদে ২৩০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা এবং টেংরা মাছ ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বনানীর সবজি-বিক্রেতা নজরুল ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘কাঁচাসবজির দাম কখন বাড়ে, আবার কখন কমে, আমরা নিজেরাও জানতে পারি না। আমরা যখন পাইকারিভাবে কিনতে যাই, তখন বুঝতে পারি পণ্যের দাম কমেছে বা বেড়েছে। ১৫ দিন আগে কাঁচামরিচ ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি। দুই দিন আগে কাঁচা মরিচ ১৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এখন আবার দাম কমে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের আড়তদার কালাম শেখ ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘পেঁয়াজ বিদেশ থেকে আমদানি না হওয়া পর্যন্ত দাম বাড়তেই থাকবে। দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি যখন আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে ঢুকবে, তখন দাম কমে আসবে। আমদানি না করা পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম বাড়তেই থাকবে।’
আলুর আড়তদার মো. হানিফ ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘কৃত্রিমভাবে আলুর সংকট তৈরা করা হয়েছে। অসাধু চক্র হাজার হাজার বস্তা আলু অনৈতিকভাবে কোল্ড স্টোরেজে মজুত করে রেখেছে। তারা আলু বাজারে ছাড়ছে না। চাহিদামতো বাজারে আলু আসছে না। যে কারণে আলুর দাম বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকে আলুর দাম আরও বাড়বে।’
ঢাকা বিজনেস/এনই