বাজারে যখন আম শেষের পথে ঠিক সেই সময় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে গাছে গাছে ঝুলে আছে রসালো মিষ্টি চিয়াংমাই, চাকাপাত, ব্লাক স্টোন, রেড পালমার, মিয়াজাকি, ব্রুনাই কিংসহ বাহারি জাতের সব আম। আমের ভারে নুয়ে পড়া গাছগুলোর কাছে গেলেই মুগ্ধ হবেন যে কেউ।
রসালো মিষ্টি দেশি-বিদেশি জাতের এই আম বাগানটি গড়ে তুলেছেন উপজেলার দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়নের আলতি বুরুজবড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আবু বক্কর শেখ। প্রায় ৩০ বছর ধরে নার্সারী ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি। সেখান থেকেই অনুপ্রেরিত হয়ে নিজের ৪ বিঘা জমির উপর গড়ে তুলেছেন প্রায় ৫০ প্রজাতির দেশি-বিদেশি আমের বাগান। মাত্র দুই বছর আগে লাগানো গাছগুলো থেকে ফলনও পেয়েছেন ভালো। তার প্রায় প্রতিটি গাছে আম ধরেছে ২০ কেজি থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত।
বাগান মালিক মো. আবু বক্কর শেখ বলেন, ‘দুই বছর আগে নিজের চার বিঘা জমিতে দেশি-বিদেশি ৬০০ আম গাছ লাগিয়েছিলাম। এক একটা গাছের দাম ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। বাগানে সব থেকে বেশি থাইজাতের বিভিন্ন ভ্যারাইটির আম গাছ আছে। প্রতিটি গাছে প্রায় ১ মনের কাছাকাছি আম হয়েছে। এবছর আম ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি করেছি।’
বাগান মালিক বলেন, দেশি আমের চেয়ে এই বিদেশি আমে লাভ বেশি। কারণ বাজারে আম এখন শেষের পথে, ঠিক এই সময়েই চিংয়াংমাই ও চাকাপাতসহ বিদেশি সব আম পাকতে শুরু করেছে। যেখানে দেশি আম সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ১০০ টাকয় বিক্রি হয়। বিদেশি আম একটু দেরিতে পাকার কারণ এর বাজার মূল্য ভালো পাওয়া যায়।’
আবু বক্কর শেখ আরও বলেন, ‘আমের পাশাপাশি গাছগুলো থেকে গ্রাফটিং কলমের চারার অনেক চাহিদা রয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকেই আমার কাছে অর্ডার দিচ্ছেন, তাদের কাছেও চারা সরবরাহ করেছি। এছাড়া আমার নার্সারিতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রয়েছে। আমার এই আম বাগান করতে ব্যায় হয়েছিলো ৩ লক্ষ টাকা। এ বছর যে ফল হয়েছে তা বিক্রি করে আমার মূল টাকা উঠে এসেছে।’
বাগান পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত শহিদুল শেখ বলেন, ‘এ বছর আমাদের বাগানে বিদেশি গাছ গুলোতে বাম্পার ফলন হয়েছে। অনেকেই বাগান থেকে আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া চাহিদা থাকায় আমরা ইতোমধ্যে প্রায় ৮ হাজার গ্রাফটিং চারা তৈরি করেছি। আরও ৪ থেকে ৫ হাজার চারা করা হবে।’
নার্সারিতে গাছ কিনতে আসা মোরেলগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা শাকিল মাহমুদ বলেন, ‘আমি নিজেও একজন সখের বাগানি। আমরা সাধারণত বাড়ির আঙ্গিনায় বা আশপাশে সখের বসে বিদেশি আম বা অন্যান্য গাছ লাগিয়েছি। অধিকাংশ সময় দেখা যায় এসব বিদেশি গাছে ফল হয় না। তাই বাণিজ্যিক ভাবে বাগান তৈরি ইচ্ছা থাকলেও কখনও করা হয়নি। তবে বক্কর ভাইয়ের বাগান দেখে আমারও ইচ্ছা হয়েছে বিদেশি আম গাছ দিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে বাগান তৈরি করার। তাই তার বাগানে এসেছি চারা সংগ্রহ করতে।’
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চিয়াংমাই ও চাকাপাত হচ্ছে থাইল্যান্ডের বিখ্যাত জাত। ইতিমধ্যে এই জাতগুলো দেশের কৃষি উদ্যোক্তা ও গাছপ্রেমীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আম বাগান করতে আগ্রহী নতুন উদ্যোক্তাদের আমরা এই জাতগুলো নিয়ে বড় পরিসরে বাগান তৈরির জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। কারণ এই জাতগুলোতে লাভ বেশি। এ ধরনের আম নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কিছুটা দেরিতে হওয়ার কারণে বাজারে ভালো মূল্য পাওয়া যায়।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘যারা চিয়াংমাই ও চাকাপাত দিয়ে আম বাগান করেছেন তারা এখনো ভালো মূল্য পাচ্ছেন। এছাড়া আমবাগানে বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়। যে কারণে আমরা কৃষি বিভাগ নতুন উদ্যোক্তা ও চাষীদের পোকামাকর দমনে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি সার্বিক সহায়তা করে যাচ্ছি।’
ঢাকা বিজনেস/এমএ/