২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



সংসারে মায়েদের অর্থনৈতিক ভূমিকা

নুরজাহান নুর || ১৪ মে, ২০২৩, ০৩:০৫ পিএম
সংসারে মায়েদের অর্থনৈতিক ভূমিকা


‘মা’ শব্দটি অনেক মধুর। প্রতিটি শিশু আধো বোলে যখন কথা বলতে শেখে,  তখন প্রথম শব্দই উচ্চারণ করে ‘মা’। নিজের সন্তানকে ছোট থেকে বড় করতে নিজের সর্বস্ব বিসর্জন দেয়। সবাই মায়েদের স্নেহ-মমতা-ভালোবাসা নিয়েই কথা বলে। কিন্তু সংসারে অর্থনৈতিক দিকেও কিন্তু মায়ের অবদান রয়েছে। এই কথা কেউ স্বীকার করতে চায় না। একজন গৃহকর্মে নিপুণা বধুকেও মাঝে মাঝে শুনতে হয়, ‘সারাদিন তো বাসায়ই থাকো, পারলে কটা টাকা রোজগার করে দেখাও তো। টাকা কামানো কতো কষ্টের তার তুমি কি বুঝবে?’ কিন্তু কখনো কারও এই কথা ভাবার অবকাশ হয়নি যে, সংসারের সচ্ছলতায় মা ও ভূমিকা রাখে। 

একজন নারীর কাছে তার স্বামী-সংসার গুরুত্বপূর্ণ। তবে, সংসারে সন্তানের আগমন নারীকে নতুন করে কর্মোদ্যম করে তোলে। সংসারের কাজ, সঙ্গে সন্তানের দেখভাল করা, সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করা, তাকে বড় করা-সব কাজ একজন মা একাই সামলে নেন। অনেক মা আছেন যারা চাকরি আর ঘরের কাজ একসঙ্গে সামলে নেন। কিন্তু যারা চাকরি করেন না, তারাই বা কম কিসে? একটি ঘর একা সামলানো চাট্টিখানি কথা তো নয়! ঘর সামলানোর অর্থাৎ ঘরের কাজ করার জন্য যদি একজন লোক রাখতে হয়, তাহলে তাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হবে। অথবা ওই নারী যদি ঘরের কাজে যতটুকু সময় দেয়, ততটুকু সময় যদি সে চাকরিতে দেয়, মাস শেষে টাকা কিন্তু সে উপার্জন করতে পারে। কিন্তু একজন নারী অর্থাৎ একজন মা সারাদিন বিনা পারিশ্রমিকে ঘরের কাজ করে যায়। বিনিময়ে চান একটি সুখী পরিবার, সন্তানদের সুখ। 

আমাদের মায়েরা যেমন সন্তানের জন্য বুকের সবটুকু স্নেহ ভালোবাসা যেমন নিঃশেষে উজাড় করে দেন, আর কোনো দেশের মায়েরা বুঝি এত মমতা ও স্নেহ ঢেলে দেন না। বাঙালি মায়েরা শাড়ির আঁচলে সন্তানকে ঢেকে রাখেন। এ দেশের আটপৌরে মায়েরা এক সময় সন্তানের জন্য পিঠা বানিয়ে শিকেয় ঝুলিয়ে রাখতেন। রাতে কুপি বাতি জ্বালিয়ে ভাত নিয়ে ছেলের ফেরার আশায় বসে থাকতেন। উৎকর্ণ হয়ে থাকতেন ওই বুঝি ছেলের পায়ের আওয়াজ শোনা যায়।

সংসার-সন্তানের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়া প্রতিটি মা কে জানাই মা দিবসের শুভেচ্ছা। ভালো থাকুক পৃথিবীর সব মায়েরা। দুধে-ভাতে থাকুক মায়েদের সন্তানেরা।

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ূয়া ছেলে গভীর রাতে দূর এলাকা থেকে ফিরেছে। মা নিজের ঘুম, সুখ বিসর্জন দিয়ে মাটির চুলায় ছেলেকে দু’মুঠো ভাত রেঁধে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রচণ্ড গরমে ছেলে ঘেমে নেয়ে উঠেছে। মমতাময়ী মা তালের পাখা নিয়ে বাতাস করে চলেছেন যাতে সে একটু আরামে ঘুমাতে পারে। ছেলে দূরের শহরে চাকরি করে। মা তার কথা ভাবেন। সেই কবে ছেলেটা গেছে। গ্রীষ্ম যায়, বর্ষা আসে। তারপর একদিন কুমড়োর ফুলে ফুলে নুয়ে পড়ে লতা। মা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাবেন, তুই কবে আসবি খোকা! 

বাঙালি মায়ের এ চিরন্তন ছবি বিশ্বের আর কোথাও মেলে না। এখন অবশ্য সময় পাল্টে গেছে। প্রযুক্তি আমাদের জীবনে অনেক পরিবর্তন এনেছে। এখন সন্তানের জন্য মায়েদের কষ্ট-দুঃখ-দুশ্চিন্তা অনেক কমে গেছে। দূরে থাকা ছেলের কুশল জানার জন্য এখন আর মাকে চিঠির অপেক্ষায় থাকতে হয় না। মোবাইল ফোন কথা বলা সহজ করে দিয়েছে। একটু চেষ্টা করলে স্কাইপে সন্তান-মায়ের দেখা-কথা দুই-ই হতে পারে। কিন্তু সন্তানের জন্য মায়ের উদ্বেগ-দুশ্চিন্তা আগেও যেমন ছিল আজো তেমনি আছে। সন্তান আর পরিবারের জন্য মায়েরা এসন নিঃস্বার্থভাবে করে যান। বিনিময়ে কখনো কিছু চান না। 

তাই,  সংসারে মায়েদের অর্থনৈতিক দিক থেকে ভূমিকা নেই, এই কথা বলা মোটেই যৌক্তিক না। সংসার-সন্তানের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়া প্রতিটি মা কে জানাই মা দিবসের শুভেচ্ছা। ভালো থাকুক পৃথিবীর সব মায়েরা। দুধে-ভাতে থাকুক মায়েদের সন্তানেরা।

লেখক: সংবাদকর্মী



আরো পড়ুন