২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

ধান-সংকটে আশুগঞ্জ মোকাম, বিপাকে বেপারি-শ্রমিকেরা

মো. আজহার উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া || ২৭ মার্চ, ২০২৩, ১২:০৩ পিএম
ধান-সংকটে আশুগঞ্জ মোকাম, বিপাকে বেপারি-শ্রমিকেরা


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ধানের মোকামে ধানের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী ধান কিনতে পারছেন না অনেক চালকল মালিক। ধানের অভাবে বেশ কিছু চালকল বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন, ধান বেপারিরা। আর ধানের বেচাবিক্রি না থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন স্থানীয় শ্রমিকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শত বছরেরও বেশি সময় ধরে আশুগঞ্জ উপজেলা সদরের মেঘনা নদীর পাড়ে বসছে ধানের বাজার। মূলত এই মোকামই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রায় দুই শ চালকলে ধানের জোগান দেয়। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত  ধান কেনাবেচা হয় মেঘনা নদীর ভিওসি ঘাটের এই বাজারে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও আশপাশের অন্তত সাত জেলার কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে আশুগঞ্জ মোকামে নিয়ে আসেন বেপারিরা। নতুন ধানের মৌসুমে মোকামে দৈনিক অন্তত এক লাখ মণ ধান কেনাবেচা হয়। আর বাকি সময় কেনাবেচা হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার মণ ধান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চালকলগুলো থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলায় চাল সরবরাহ করা হয়।

ভিওসি ঘাটে নোঙর করা নৌকা থেকে ধানের বস্তা ট্রাকে তোলার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন কয়েকশ শ্রমিক। তবে এখন ধানের আমদানি কমে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অধিকাংশ শ্রমিক। গত একমাস ধরে মোকামে ধানের আমদানি কমে গেছে। আগে দৈনিক ৫০ থেকে ৬০টি ধানবোঝাই নৌকা এলেও এখন তিন থেকে চারটি আসে। তবে আমদানি ধানের অধিকাংশই বিআর-৩৯ ও বিআর-৪৯ জাতের। আর চালকল মালিকদের চাহিদা পুরনো বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ জাতের ধান। মূলত বাজারে এই দুই জাতের চালের চাহিদা থাকায় অন্য জাতের ধান কেনায় আগ্রহ কম চালকল মালিকদের।

আশুগঞ্জ মোকামে বর্তমানে বিআর-২৮ জাতের ধান প্রতি মণ কেনাবেচা হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৪৬০ টাকা, বিআর-২৯ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩২০ থেকে ১ হাজার ৩৩০ টাকা এবং বিআর-৩৯ জাতের ধান ১ হাজার ২৩০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা ও বিআর-৪৯ জাতের ধান কেনাবেচা হচ্ছে ১ হাজার ২৭০ থেকে ১ হাজার ২৮০ টাকা দরে। তবে মোকামে বেচাকেনা কম হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বেপারিরা।

আশুগঞ্জ মোকামের শ্রমিক রফিক মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন ধানের বস্তা নৌকা থেকে ট্রাকে তুলে দিয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করি। এ টাকা দিয়েই পরিবার চলে। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মোকামে ধানের নৌকা কম আসছে। ফলে কাজ কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ২০০ টাকা আয় করতেই কষ্ট হচ্ছে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার তেলিকান্দি গ্রামের ধান বেপারি কাউসার মিয়া বলেন, ‘দুই মাস আগে  ১ হাজার ৩০০ টাকা মণ ধরে বিআর-৩৯ জাতের ধান কিনেছি । কিন্তু এখন মোকামে এই ধানের বেচাকেনা একেবারেই কম। মিল মালিকরা এই ধান নিচ্ছেন না। বর্তমান বাজারদরে বিক্রি করলে  বড় অঙ্কের লোকসান হবে। 

কয়েকজন চাল ব্যবসায়ী জানান, বছরের এ সময়টাতে ধানের আমদানি কিছুটা কম থাকে। তবে এখন যে পরিমাণ ধান আসছে মোকামে, তারচেয়ে বেশি আসতো আগে। মূলত বিআর-৩৯ ও বিআর-৪৯ জাতের চাল প্রত্যেক চালকলেই কম-বেশি পড়ে আছে। এছাড়া চালের কেনাবেচাও কিছুটা কম। তাই পুরনো বিআর-২৮ বা বিআর-২৯ জাতের ধান না পাওয়ায় মোকাম থেকে ধান কিনছেন না ব্যবসায়ীরা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আশুগঞ্জ উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হেলাল সিকদার বলেন, ‘রমজান মাসে চালের চাহিদা কিছুটা কম থাকে। এজন্য এখন চালের বাজার স্থিতিশীল। কিন্তু মোকামে আমদানি কম হওয়ায় ধানের দাম বেশি। এ দরে ধান কিনে চাল তৈরিতে খরচ পড়বে বেশি। এতে লোকসান গুনতে হবে। বাধ্য হয়ে ধানের সংকটে ছোটখাটো বেশ কয়েকটি মিল বন্ধ রাখা হয়েছে।’

হেলাল সিকদার বলেন, ‘ক্রেতাদের চাহিদা বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ জাতের চালের। কিন্তু এ দুই জাতের ধানের আমদানি নেই মোকামে। ফলে অন্য ধান কিনছেন না মিল মালিকরা। তবে এপ্রিল মাসের শেষ দিকে বাজারে নতুন মৌসুমের ধান উঠবে। তখন চাহিদা অনুযায়ী সব ধানই পাওয়া যাবে।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/




আরো পড়ুন