ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ মোকামে নতুন ধান উঠেছে। প্রতিদিনই আসছে শুকনো ধান। ফলে বাড়তে শুরু করেছে দামও। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি বস্তায় দাম বেড়েছে ১ থেকে ১৫০ টাকা।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মেঘনা নদীর তীরবর্তী বিওসি ঘাটে দেশের পূর্বাঞ্চলের হাওরবেষ্টিত অঞ্চলের ধানে জমজমাট। বিস্তীর্ণ এলাকার মোকামজুড়ে থরে থরে রাখা আছে ধানের বস্তা। এছাড়া, নদীর তীরে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ধানবাহী নৌকা এসে ভিড় করেছেন। শ্রমিকরা সেখানে ধান ওঠা-নামায় ব্যস্ত। বেপারিরাও কাঙ্ক্ষিত দাম হাঁকাচ্ছেন। বনিবনা হলে ঘাটেই ধান কেনা-বেচার কাজ শেষ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিওসি ঘাটের এই মোকামে বৃহত্তর সিলেট, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জসহ অন্তত ৭টি জেলা থেকে ধান আসছে। মৌসুমের শুরুতে চিটাসহ নানা কারণে মোকামে ধানের সংকট থাকলেও শেষ দিকে এসে বেড়েছে সরবরাহ। একই সঙ্গে শুকনো ধানের আমদানি বেড়েছে। ফলে বেড়েছে ধানের দাম। বেড়েছে কেনাবেচাও।
মোকামে ধান নিয়ে আসা বেপারিরা জানান, বর্তমানে মোকামে (বিআর ২৮) জাতের ধান ১ হাজার ১৫০ টাকা, (বি আর-২৯ জাতের) ধান ১ হাজার ৫০ টাকা এবং (মোটা জাতের) ধান ৯২০/৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও এসব জাতের ধান ভেজা থাকায় ১ থেকে ১৫০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছিল। বেপারিরা আরও জানান, বর্তমানে দাম কিছুটা বাড়ায় তাদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে কোনো সিন্ডিকেট যেন কৌশলে ধানের দাম কমিয়ে বেপারিদের আর্থিক ক্ষতি করতে না পারে, সেজন্য প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
মিল মালিকরা জানান, ভেজা ধান থেকে চালের উৎপাদন কম হয়। তাই এই ধানের দামও কম থাকে। তবে শুকনো ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন বেপারিরা। তারা আরও জানান, মোকামে ধানের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় পুরো মোকামে প্রতিদিনই বিশাল কর্মযজ্ঞের দেখা মেলে। ক্রেতা-বিক্রেতা, শ্রমিকসহ সবাইকেই দিনব্যাপী ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে। বর্তমানে মোকামে আসা ধানের আদ্রতা খুবই ভালো। সময়ের সঙ্গে ভালো ধানের আমিদানির ওপর নির্ভর করে ধানের দাম আরও বাড়বে।
জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি বাবুল আহমেদ বলেন, ‘প্রতিদিন মোকামে ধান আমদানি হচ্ছে। বিক্রিও হচ্ছে। তাপমাত্রা বাড়ায় ধানের আর্দ্রতাও ভালো। তাই বেপারিরা ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। এতে ধানের দাম আরও বাড়বে।’
বাবুল আহমেদ বলেন, ‘মোকামে সিন্ডিকেট বলতে কিছু নেই। এখানে প্রকাশ্যেই কেনা-বেচা হয়। খাদ্য বিভাগ, চালকল মালিক সমিতি নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছে। তবে কিছু কিছু মিল মালিকরা রয়েছেন, যারা নিয়মবহির্ভূতভাবে ধান অতিরিক্ত মজুদ করে রাখেন। যা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই প্রশাসনের কাছে দাবি অতিরিক্ত মজুদ ঠেকাতে প্রশাসন যেন মনিটরিং কার্যক্রম আরও জোরদার করে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর খাদ্য কর্মকর্তা কাউসার সজীব জানান, ‘বাজার মনিটরিংয়ে জেলায় ১৬ টিম কাজ করছে। যার মধ্যে ৪ টিম আশুগঞ্জ মোকামের কার্যক্রম মনিটরিং করছে। এখানে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য থাকার কোনো সুযোগ নেই। কোনো মধ্যস্বত্বভোগীর কারণে মোকামে ধান নিয়ে আসা বেপারিরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে মনিটরিং কার্যক্রম চলছে। এছাড়া, অতিরিক্ত মজুদ ঠেকাতে মনিটরিং টিমগুলো বিভিন্ন মিল প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করছে। এদিকে ৭ মে থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় সরকারিভাবে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। আশা করছি, মোকামে ধানের দাম আরও বাড়বে।’
ঢাকা বিজনেস/এনই/