ঈদযাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধুসেতু পূর্বপার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৩ কলোমিটার এলাকায় যানজটের আশঙ্কা করছেন পরিবহন চালকেরা। তবে বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার যানজট যাতে না হয়, সে বিষয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর দুই একটি ঈদ ছাড়া প্রায় প্রতি বছরই ঈদের আগে মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধুসেতু পূর্বপার পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। এই সাড়ে ১৩ কিলোমিটার এলাকা যানজট মুক্ত করতে দুই লেনের এ সড়কটিকে চারলেনে রুপান্তরিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে এলেঙ্গা অংশে মহাসড়কের বেশ কিছু অংশের কাজ চলমান রয়েছে। এই অংশটকুু ঈদের আগে নির্মাণ হলে যান চলাচল কিছুটা সুবিধা পাবে। তবে বাকি অংশে যানজটের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
পুলিশ, পরিবহন চালক এবং সংশ্লিষ্টরা বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে উত্তরবঙ্গসহ ২৪ জেলার যানবাহন চলাচল করে। এতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যানবাহনগুলো মহাসড়কের এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেন সুবিধা নিয়ে দ্রুত চলে আসতে পারে। তবে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সড়কটি দুই লেনের। এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু সেতুটিও দুই লেনের। এতে যানবাহন চার লেনের সুবিধায় দ্রুত এলেঙ্গা পর্যন্ত এসে আটকে যায় দুই লেনের মুখে। সেখান থেকেই যানবাহনগুলো ধীর গতিতে চলে যানজটের শুরু হয়।
বঙ্গবন্ধু সেতু টোল প্লাজা সূত্র জানায়, স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ হাজার যানবাহন সেতু পারাপার হয়। ঈদের আগে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার যানবাহন পারাপার হয়। গত ঈদযাত্রায় একদিনে ৫৩ হাজারের বেশি যানবাহন পারাপার হয়। স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক যানবাহন পারাপার হওয়ায় দুই লেনের সড়কে যানজট লেগে যায়।
জানা যায়, প্রতিবছরই ঈদকে সামন রেখে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী সড়কে লক্করঝক্কর এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি বের করে। এসব গাড়ি হঠাৎ করেই মহাসড়কে বিকল হয়ে যায়। এতে উভয় পাশের গাড়ি থেমে পড়ে। এক পর্যায়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় চালকের অদক্ষতা, সড়ক দুর্ঘটনা এবং গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় যানজট হয়।
চালক মাসুদ ও হায়দার আরী খান বলেন, ‘এলাঙ্গায় মহাসড়কের কাজ এবং সেতুর টোল প্লাজায় সঠিক তদারকি থাকলে হয়তো এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষ নিবিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবে। এছাড়া এলাঙ্গার কাজ শেষ করতে না পারলে যে গাড়ির জট বাধবে, সেটি অনেক দীর্ঘ হবে।’
ব্দুল মোনেম গ্রুপের প্রজেক্ট ম্যানেজার রবিউল আওয়াল বলেন, ‘এলেঙ্গা থেকে গাড়ির যানজট লেগে অচল হয়ে যায় বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত। আমাদের উপর সড়ক ও জনপদ বিভাগ চাপ দিয়েছে ঈদের আগে ১২ কিলোমিটার সড়কে দুই লেনের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। আমরা আশা রাখি ঈদের আগে শেষ করতে পারবো।’
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, ‘ঈদ যাত্রায় মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা দুটি লেন থাকবে। এ ছাড়াও ৩টি টোল আদায়ের বুথ বাড়ানো হবে। সেতুর উভয় পাশেই ২০টি লেনে টোল আদায় করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঈদে ছুটি কম হলে যানবাহনের চাপ বাড়বে। এবার ঈদযাত্রায় ছুটি কম থাকায় যানবাহনের চাপ বেশি হবে। তবে আমরা সবকিছু নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ‘এ বছর নতুন করে যানজট হওয়ার আরেকটি ঝুঁকি বাড়ছে। এলেঙ্গাতে যে ফুটওভার ব্রিজ ছিল, সেটি অপসারণ করা হয়েছে। এর ফলে রাস্তা পারাপারে বিঘ্ন সৃষ্টি হবে। আর এই বিঘ্নতার কারণে সড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি। এ ছাড়াও ঈদকে কেন্দ্র করে এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত আমরা এক লেন করে দিবো। উত্তরবঙ্গের যানবাহন ঢাকামুখী যানবাহন ভূঞাপুর লিংক রোডে পার করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘মহাসড়কে যানজট নিরসনের জন্য ৭ শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েত থাকবে। মহাসড়কে জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ এবং ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ কাজ করবে।’
ঢাকা বিজনেস/এইচ