২৯ জুন ২০২৪, শনিবার



অর্থনীতি
প্রিন্ট

পুঁজিবাজারের নেতিবাচক লেনদেনের নেপথ্যে দুই কারণ

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ২৩ মার্চ, ২০২৩, ০৮:০৩ পিএম
পুঁজিবাজারের নেতিবাচক লেনদেনের নেপথ্যে দুই কারণ


পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনের জন্য দুই কারণে দুষছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে এই দুই কারণ হলো, তারল্য সংকট ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে অনাগ্রহ। সমাধান হিসেবেও তারা দুই কারণকে নিয়ামক মনে করছেন। তাদের মতে, ডিভিডেন্ডের ওপর থেকে ট্যাক্স প্রত্যাহার ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বিনিয়োগ করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। 

তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) বর্তমান নেতিবাচক অবস্থা থেকে মার্কেটকে কিভাবে ভালো করা যায়, সেব্যাপারে তেমন সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারেনি।

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে মূল্য সূচক ও লেনদেন উভয়েই কমেছে। আর সিএসইতে সূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে।  

সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই নেতিবাচক ধারায় চলছে শেয়ারবাজার। এই খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে ভালো মানের কোনো কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও)-তে আসেনি।  অতালিকাভুক্ত অনেক ভালো মানের কোম্পানি রয়েছে, যেগুলোকে তালিকাভুক্ত করার ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো উদ্যোগও তারা দেখছেন না। তাদের অভিযোগ, দুর্বল কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করছে বর্তমান কমিশন। একে তো বৈশ্বিক পরিস্থিতি নাজুক, দেশেরসহ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল; তারওপর দুর্বল কোম্পানিকে তালিকাভুক্তির অনুমতি দিয়ে বাজারকে তলানিতে নিয়ে গেছে বর্তমান কমিশন। বাজারের এই উদ্ভুত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কমিশনের কাছেও কোনো যৌক্তিক জবাব নেই।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) ডিএসই প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) ছিল ৬ হাজার ২১৫ দশমিক ৩০ পয়েন্ট। এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে যা ছিল ৬ হাজার ২২০ দশমিক ২৪ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইএক্স কমেছে ৪ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট। অর্থাৎ ০ দশমিক ০৮ শতাংশ কমেছে ডিএসইএক্স। ডিএসইএক্স শরিয়াহ্ ইন্ডেক্স বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিলো ১ হাজার ৩৫৩ দশমিক ২৫ পয়েন্ট। আর এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে যা ছিলো ১ হাজার ৩৫৬ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইএক্স শরিয়াহ্ ইনডেক্স কমেছে ৩ দশমিক ৬০ পয়েন্ট। অর্থাৎ, ০ দশমিক ২৭ শতাংশ কমেছে।

ডিএসই৩০ ইনডেক্স বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ২ হাজার ২১৮ দশমিক ০২ পয়েন্ট। এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে যা ছিল ২ হাজার ২১৮ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে সূচক কমেছে ০ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট। অর্থাৎ ০ দশমিক ০৩ শতাংশ সূচক কমেছে। আর বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭৬২ কোটি ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৯ টাকা। আর এর আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৫৪০ কোটি ১০ লাখ ২৭ হাজার ৯৪০ টাকা।  সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৩০ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

এদিকে সিএসই সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইতে সিএএসপিআই সূচক ছিল ১৮ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৪ হাজার ৭৯৮ পয়েন্ট। এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে যা ছিল ১৮ হাজার ৩৫২ দশমিক ৭ হাজার ১৭৭ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে সূচক কমেছে ০ দশমিক ১১৮৬ শতাংশ। সিএসই৩০ সূচক বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ১৩ হাজার ৩৬৪ দশমিক ১ হাজার ৩৬১ পয়েন্ট। এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে যা ছিল ১৩ হাজার ৩৩৩ দশমিক ৯ হাজার ২১২ পয়েন্ট। এক্ষেত্রে সূচক কমেছে ০ দশমিক ২২৬৬ শতাংশ। আর বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৬৪ কোটি ১৪ লাখ ৬৭ হাজার ৮৮৪ টাকা। এর আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছে ৫৭ কোটি ১৩ লাখ ৫৮ হাজার ৩১৮ টাকা।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষেদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘এক্সপোজার লিমিটের ভেতরে বন্ডে বিনিয়োগ, লভ্যাংশের ওপর সরকারের ট্যাক্স আরোপ, বড় বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ না করে সাইড লাইনে বসে আছেন। ফলে শেয়ার মার্কেট নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। মার্কেটকে ঠিক করতে হলে লভ্যাংশের ওপর ট্যাক্স প্রত্যাহার করতে হবে। কারণ কোম্পানির দেওয়ার লভ্যাংশের ওপর সরকার ট্যাক্স আরোপ করলে বিনিয়োগকারীরা কম লভ্যাংশ পায়। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা মার্কেটে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বড় বিনিয়োগকারীদের মার্কেটে বিনিয়োগ করতে হবে। এবং বন্ডে বিনিয়োগকে এক্সপোজার লিমিটের বাহিরে রাখতে হবে। তবেই মার্কেট ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের যে সক্ষমতা, তা তারা প্রয়োগ করছে না। তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী বিনিয়োগ করতে হবে। অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ কমে যাওয়ার ভয়ে নতুন করে বিনিয়োগ করছে না মার্কেটে। মার্কেটের স্বার্থে তাদের এগিয়ে আসতে হবে।’

ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘তারল্য সংকটের কারণে মার্কেটের পরিস্থিতি খারাপ। এই পরিস্থিতি থেকে কবে নাগাদ উত্তরণ ঘটবে সে ব্যাপারে নতুন করে কিছু বলার নেই।’

সিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম ফারুক ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অর্থনৈতিক টালমাটাল ও সামনে পলিটিক্যাল ক্রাইসিস হওয়ার আশঙ্কার কারণে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করছে না মার্কেটে। ফলে মার্কেটে নেতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে।’ কবে নাগাদ কিভাবে এ থেকে উত্তরণ ঘটবে, সেব্যাপরে তিনি কোনো দিক নির্দেশনা দিতে পারেননি। তবে তিনি এও বলেছেন, ‘হঠাৎ করেই মার্কেট ভালো হয়ে যেতে পারে।’

বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘মার্কেটকে খারাপ করার পেছনে যেমন কমিশনের হাত নেই, তেমনি ভালো করার পেছনেও কমিশনের ভূমিকা নেই। তবে দুই এক্সচেঞ্জ যদি মার্কেট ভালো করতে কোনো দিক-নির্দেশনা কমিশনের কাছে চায়, সেক্ষেত্রে আমরা তাদের সহায়তা করবো। প্রয়োজনে নতুন পলিসি আরোপ করবো।’



আরো পড়ুন