শেয়ার বিক্রির চাপ বেশি থাকায় গত সপ্তাহের তুলনায় সদ্যবিদায়ী সপ্তাহ (২৭ মার্চ-৩০ মার্চ, ২০২৩)-এ সূচক ও লেনদেন উভয়েই কমেছে। তবে সূচক ও লেনদেন কমলেও বাজার মূলধন বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামীতে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে। তারা বলছেন, পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রি বেড়েছে, কিন্তু কেনা কমেছে। বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রির দিকেই বেশি ঝুঁকছেন। তাই লেনদেন ও সূচকে নিম্নগামী ধারা অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহে টাকার অঙ্কে লেনদেন কমেছে ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আর সব সূচক কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। টাকার অঙ্কে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৬৩৯ কোটি ১৭ লাখ ৫৯ হাজার ৭৩৩ টাকা। আর এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭৬২ কোটি ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৯ টাকা। ডিএসই’র সূত্রটি আরো বলছে, সদ্য বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস (৩০ মার্চ) এ ডিএসই’র প্রধান মূল্য সূচক (ডিএসইএক্স) ছিল ৬ হাজার ২০৬ দশমিক ৮০ পয়েন্ট।
এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে যা ছিল ৬ হাজার ২১৫ দশমিক ৩০ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে সূচক কমেছে ৮ দশমিক ৫১ পয়েন্ট। অর্থাৎ ০ দশমিক ১৪ শতাংশ কমেছে সূচক।
ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ১ হাজার ৩৪৯ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট। এর আগের সপ্তাহে যা ছিল ১ হাজার ৩৫৩ দশমিক ২৫ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে সূচক কমেছে ৩ দশমিক ৯২ পয়েন্ট। অর্থাৎ ০ দশমিক ২৯ শতাংশ কমেছে সূচক। ডিএসই ৩০ সূচক ছিল ২ হাজার ২০৯ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট। এর আগের সপ্তাহে যা ছিল ২ হাজার ২ হাজার ২১৮ দশমিক ০২ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে সূচক কমেছে ৮ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট। অর্থাৎ ০ দশমিক ৩৯ শতাংশ কমেছে সূচক।
এদিকে ডিএসিই সূত্রে আরও জানা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহে শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন ছিলো ৭ লাখ ৬২ হাজার ৩৬৬ কোটি ৩১ লাখ ২০ হাজার ৪৩১ টাকা। আর এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে যা ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৪১০ টাকা ৯৩ লাখ ২১ হাজার ৪০৯ টাকা। অর্থাৎ বাজার মূলধন বেড়েছে ৯৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ৯৯ হাজার ২২ টাকা। অর্থাৎ ০ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে বাজার মূলধন।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘রমজান মাস হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা ভেবেচিন্তে বিনিয়োগ করছনে। তারা খুব কম বিনিয়োগ করছেন। তাছাড়া মাসের শেষ সপ্তাহ হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের হাতে টাকা কম রয়েছে। ফলে সদ্য বিদায়ী সপ্তাহে বাজারে নেতিবাচক প্রবনতা দেখা দিয়েছে। তবে আগামীতে বাজার ভালো হবে। আগামী ৯ এপ্রিল বন্ডে বিনিয়োগে এক্সপোজার লিমিটের বিষয়টি সুরাহা হয়ে যাবে। এবং স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড থেকেও বাজারে বিনিয়োগ হচ্ছে এবং আগামীতে আরো হবে। ফলে সব মিলিয়ে আগামী দিনগুলোতে পুঁজিাবাজারে লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সূচকও ভালো হবে।’
এদিকে, সদ্যবিদায়ী সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)-এ টাকার অঙ্কে মোট লেনদেন হয়েছে ১১২ কোটি ৬৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৪০ টাকা। এর আগের সপ্তাহে যা ছিল ৬৪ কোটি ১৪ লাখ ৬৭ হাজার ৮৮৪ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৪৮ কোটি ৫২ লাখ ১৫ হাজার ২৫৬ টাকা। তবে লেনদেন বাড়লেও একটি সূচক ছাড়া সিএইসতে সব সূচক কমেছে।
সিএএসপিআই সূচক বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ১৮ হাজার ২৮৮ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে যা ছিল ১৮ হাজার ৩৭৪ পয়েন্ট। এক্ষেত্রে সূচক কমেছে ০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। সিএসই৩০ সূচক বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ১৩ হাজার ৩৪১ পয়েন্ট। এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে যা ছিল ১৩ হাজার ৩৬৪ পয়েন্ট। অর্থাৎ এক্ষেত্রে সূচক কমেছে ০ দশমিক ১৬ পয়েন্ট।
এছাড়া, সদ্যবিদায়ী সপ্তাহে সিএসসিএক্স সূচক কমেছে ০ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট, সিএসই৫০ সূচক কমেছে ০ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক কমেছে ০ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট। তবে সিএসইএসএমইএক্স বিদায়ী সপ্তাহে বেড়েছে ০ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট।
ডিএসই’র পরিচালক শাকিল রিজভী ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘রমজান শুরু হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বাই করার চেয়ে সেল বেশি করছে। অর্থাৎ বাজারে সেল প্রেশার বৃদ্ধি পেয়েছে। বিনিয়োগকারীরা টাকা উঠিয়ে নিচ্ছে বাজার থেকে। বিনিয়োগ কমে গেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সূচক ও লেনদেনে।’
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আমি বরাবরেই বলেছি পুঁজিবাজারের সূচক-লেনদেন হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়ে কমিশনের কোনো হাত নেই। কেন কমেছে, সে ব্যাপারটিও আমরা বলতে পারবো না। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নিজস্ব চিন্তাভাবনা থেকে বিনিয়োগ করে থাকেন।’
ঢাকা বিজনেস/এনই/