২৯ জুন ২০২৪, শনিবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

মাহেন্দ্রা বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার খবর ‘ভুয়া’

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ২১ মার্চ, ২০২৩, ০৬:০৩ পিএম
মাহেন্দ্রা বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার খবর ‘ভুয়া’


বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা লিমিটেড ব্যবসা গুটিয়ে যায়নি বলে জানিয়েছেন  সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন,  এই কোম্পানির  সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান  ‘মাহিন্দ্রা বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড’-এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা এও বলছেন, সম্প্রতি দেশের প্রথম সারি থেকে শুরু করে বেশ কিছু গণমাধ্যম ‘বাংলাদেশে মাহিন্দ্রার ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে’বলে যে খবর প্রকাশ করেছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা ব্যবসার ধরন পরিবর্তনের জন্য মূল কোম্পানিকে ঠিক রেখে ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ‘মাহিন্দ্রা বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড’(এমবিপিএল)  নামে একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি চালু করে। শুরু থেকে এই সাবসিডিয়ারি কোম্পানির কোনো আলাদা অফিস ছিল না। বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত কোম্পানিটি মূলত কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ ছিল। মূল কোম্পানির লক্ষ্য ছিল সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মাধ্যমে ব্যবসার ধরন পরিবর্তন করা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মাহিন্দ্রা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। বর্তমানে যেভাবে মাহিন্দ্রা ব্যবসা পরিচালনা করছে বাংলাদেশে, সেভাবেই পরিচালিত হবে। তাই সাবসিডিয়ারি কোম্পানিটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

কর্তৃপক্ষ মনে করে, যে কোম্পানির প্র্যাকটিক্যল কার্যক্রম শুরু থেকেই ছিল না,  তাকে শুধু কাগজে-কলমে টিকিয়ে রাখা উচিত নয়। এছাড়া, শুধু কাগজে-কলমে রাখলেও কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম), ইজিএম ঠিকই করতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। আর এসব সভা করতে গিয়ে প্যারেন্টস কোম্পানি মাহিন্দ্রাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। পাশাপাশি কার্যক্রম পরিচালিত না হলেও নিয়ম ও আইন মেনে চলতে হতো সাবসিডিয়ারি কোম্পানিকে।  

মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রার নীতি-নির্ধারকরা আরও বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানি সুনামের সঙ্গে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করছে। বাংলাদেশে তাদের গাড়ির ডিস্ট্রিবিউটর রেনকনসহ ৩টি গ্রুপ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান মূলত পরিবেশক হিসেবে বাংলাদেশে মাহিন্দ্রা গাড়ি বাজারজাত করে। এ ব্যবসায় কোনো পরিবর্তন আসছে না। 

মাহিন্দ্রার ডিস্ট্রিবিউটর র‌্যানকন অটোস’র কালেকশন বিভাগের কর্মকর্তা মো. ফিরোজ হোসেন ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘দেশে আমরা মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রার পরিবেশক হিসেবে কাজ করছি। মাহিন্দ্রার সঙ্গে আমাদের ব্যবসা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের সঙ্গে তাদের ব্যবসায় কোনো পরিবর্তন আসছে না। দেশব্যাপী মাহিন্দ্রার গাড়ি আমরা বিক্রি করি। মাহিন্দ্রার কমার্শিয়াল প্রাইভেট কার, বাস, ট্রাক্টর দেশব্যাপী সরবরাহ করি। বাংলাদেশে মাহিন্দ্রার অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রির ব্যবসা অতীতের মতো এখনো অব্যাহত আছে। আমাদের সঙ্গে মাহিন্দ্রার কোনো সমস্যা নেই।’

মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা লিমিটেডের ম্যানেজার মো. মোকাদ্দেসুর রহমান ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘করোনার লকডাউন, বিজনেস মডেল পরিবর্তন, গ্রুপ পলিসি পরিবর্তনের কারণে সাবসিডিয়ারি কোম্পানিটি বন্ধ করে দিয়েছি। বিভিন্ন গণমাধ্যম নেগেটিভভাবে এই খবরটি প্রচার করেছে। অনেক গণমাধ্যম মাহিন্দ্রাকে প্রেজেন্ট করেছে। মাহিন্দ্রা বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডকে প্রেজেন্ট করেনি। আমরা আমাদের বিজনেসের মডেল পরিবর্তন করতে চেয়েছিলাম। যে কারণে সাবসিডিয়ারি কোম্পানিটি খুলেছিলাম। আর বাংলাদেশে মূল মাহিন্দ্রার অফিস আছে। বাংলাদেশে এর কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’

মো. মোকাদ্দেসুর রহমান আরও বলেন, ‘মূল মাহিন্দ্রা চলে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ আসেনি। মূল মাহিন্দ্রা বাংলাদেশে ছিল, আছে, থাকবে। আর সাবসিডিয়ারি কোম্পানিটিকে শুধু কাগজে-কলমে টিকে রাখা খুব ক্ষতিকর। কারণ বার্ষিক রিপোর্টে যখন একটি কোম্পানিকে শুধু কাগজে-কলমে দেখানো হচ্ছিল, সেটি আমাদের জন্য খুব বিরূপ প্রভাব ফেলছিল। যে কারণে আমরা সাবসিডিয়ারি কোম্পানিটি ক্লোজ করে দিয়েছি। সাবসিডিয়ারি কোম্পানিটির ইনিশিয়াল অনুমোদিত মূলধন ছিল ৫০ কোটি টাকা। এর পরিশোধিত মূলধন ছিল ৪ কোটি ২০ লাখ ১০০ টাকা। এই পুরো অর্থই মূল কোম্পানি মাহিন্দ্রার।’ 

মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা লিমিটেডের ম্যানেজার বলেন,‘অপারেশনাল কিছু ব্যয় ছাড়া মাহিন্দ্রার তেমন ক্ষতি হয়নি। ভবিষ্যতে বর্তমান সময়ের চেয়ে আরও বড় পরিসরে বাজারে আসবে মাহিন্দ্রা।  এখনো মাহিন্দ্রা ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করছে। নতুন কোনো পরিকল্পনা না আসা পর্যন্ত এভাবেই চলবে মাহিন্দ্রার কার্যক্রম। আমাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ডিস্ট্রিবিউটররা ইন্ডিয়া থেকে সরাসরি গাড়ি নিয়ে বাংলাদেশে ডিস্ট্রিবিউট করেন।’ 

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন