১৮ মে ২০২৪, শনিবার



৩ মাসেও হয়নি ফসলরক্ষা বাঁধ, শঙ্কায় কৃষকরা

তানভীর আহমেদ, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) || ১৩ মার্চ, ২০২৩, ০৪:৩৩ পিএম
৩ মাসেও হয়নি ফসলরক্ষা বাঁধ, শঙ্কায় কৃষকরা


নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হয়নি সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ। কাজের বিনিময়ে টাকার (কাবিটা) আওতায় গেলো বছরের ১৫ ডিসেম্বর নির্মাণ কাজ শুরু করে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব বাঁধ তৈরি শতভাগ শেষ করার কথা ছিল। অথচ মাটিয়ান হাওরের দুইটি প্রকল্পে এখনো মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়নি। এদিকে কাজ শেষ হওয়ার আগেই একটি বাঁধের এক-দেড়শো ফুট মাটি ধসে পড়েছে নদীতে। সময়মতো বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় বাঁধ মজবুত হবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয় কৃষকরা। ফলে মাটিয়ান হাওরের ফসল আগাম বন্যার পানিতে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্রুতই শেষ হবে বাঁধ নির্মাণ কাজ। 

উপজেলার মাটিয়ান হাওরের এসব বাঁধে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৬৯ ও ৭০ নম্বর প্রকল্পে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। তবে ৬৯ নং প্রকল্পে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই বাঁধের এক-দেড়শো ফুট মাটি ধসে পড়েছে। এসব বাঁধে মাটি ফেলার পর চাপা দেওয়া, বাঁধের মাটি সমান করে দূর্বাঘাস লাগানো ও মাটি ধসে যাওয়া ঠেকাতে বাঁধের পাশে কার্পেটিং করতে হয়। সব মিলিয়ে শতভাগ কাজ শেষ করতে এই প্রকল্পে আরও দুই সপ্তাহের মতো সময় লাগবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছরে তাহিরপুর উপজেলায় ১১২টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে ৮৫ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত করা হবে। এতে প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, হাওরের গুরুত্বপূর্ণ অনেক বাঁধের কাজে ঢিলেমি লক্ষ করা গেছে। বাঁধের কাজে ঢিলেমিতে অসন্তুষ্ট ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’-এর নেতারাও। তারা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বরাবরই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করে না। ফলে এই নিয়ে লাখ লাখ কৃষক উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কে থাকে। সেইসঙ্গে ঝুঁকিতে থাকে হাওরাঞ্চলের একমাত্র বোরো ফসল।

এদিকে, শুক্রবার (৩মার্চ) সকাল ১১টায় ফসলরক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজে অনিয়ম ও কাজ চলমান না থাকায় মহালিয়া হাওরের ১৬ ও ১৯ নম্বর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি ফজলুল হক ও মোসাহিদকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে  আটক করা হয়েছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান রনি’র পরিচালনায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশে আটক করা হয়। পরে বাঁধের কাজ শেষ করবেন মর্মে মুচলেকা দেন আটকরা। দুইজনের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে দুই হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। ঐদিন রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা নিজ কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা ও মুচলেকার এ রায় দেন।

হাওর পাড়ের জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা আহমেদ কবির বলেন, ‘৬৯ নম্বর প্রকল্পে এখনও পঞ্চাশ ভাগ মাটির কাজ শেষ হয়নি। যা হাওরের ফসল রক্ষার জন্য খুবই বিপজ্জনক।’

উপজেলার মাতিয়ান হাওরের কৃষক শামীম ইসলাম বলেন, ‘এখনো বাঁধের কাজ শেষ হয়নি, আমরা যারা কৃষক আছি আমাদের ঘুম নেই, মনে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। কখন যে কী হয়ে যায় আল্লাহ ভালো জানেন। যত দ্রুত সম্ভব, বাঁধের কাজ শেষ করা প্রয়োজন। বৃষ্টিপাতের দিন আসছে, বৃষ্টি হলে তো পরে বাঁধ মজবুত হবে না। ফসলরক্ষা করার কথা মাথায় রেখে দ্রুত বাঁধের কাজ শেষ করার দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বোরো ফসল রক্ষা করার জন্য প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে, তারপরেও কেন সময়মতো কাজ শেষ হয়নি? আমরা বলবো এর জন্য প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দায়ী। ফসলের কোনো ক্ষতি হলে দায়ভার এসব কর্মকর্তাদের নিতে হবে।’

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেন শতভাগ কাজ শেষ করতে পারেননি এমন প্রশ্ন করা হলে মাটিয়ান হাওরের ৬৯ নম্বর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, ‘বাঁধের এক-দেড়শো ফুট মাটি ধসে পড়ায় এ সমস্যা হয়েছে। তবে দ্রুত সবকাজ শেষ হয়ে যাবে।’

উপজেলা ফসল রক্ষা বাঁধ বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) শাখা কর্মকর্তা শওকত উজ্জামান বলেন, ‘মাটিয়ান হাওরের পুটিমারা এলাকায় ২টি প্রকল্প ছাড়া সব প্রকল্পের মাটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুতই এই দুইটি প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজও শেষ হয়ে যাবে।’

আহমেদ/এম



আরো পড়ুন