২৮ জুন ২০২৪, শুক্রবার



দিনে ১৪ ঘণ্টা কাজ করে পান ১৭০ টাকা

তোফায়েল হোসেন জাকির, গাইবান্ধা || ০৯ মার্চ, ২০২৩, ০৩:৩৩ পিএম
দিনে ১৪ ঘণ্টা কাজ করে পান ১৭০ টাকা


শ্রীমতি ঊষারাণী (৬১)। অল্প বয়সে হারিয়েছেন স্বামীকে। আলোকিত জীবনে নেমে আসে অন্ধকারের ছায়া। জীবনযুদ্ধে ছুটছিলেন জীবিকার সন্ধানে। এরই মধ্যে যোগ দেন একটি মিষ্টির দোকানে। ফুটপাতের এ দোকানেই কয়েক যুগ ধরে গুড়ের জিলাপির কারিগর হিসেবে কাজ করছেন। সেখানে টানা ১৪ ঘণ্টা কাজ করে মজুরি পাচ্ছেন ১৭০ টাকা। 

নারী দিবসে দেখা যায় ঊষারাণীর সংগ্রামী জীবন। গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর বাজারের ভাই ভাই জিলাপি স্টোরে চুলায় লাকড়ি জ্বালিয়ে আপন খেয়াল আর হস্তের তালে গুড়ের জিলাপি বানাচ্ছিলেন তিনি।

জানা যায়, গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের খামার বাগচি গ্রামের মৃত জগনাথ চন্দ্রের মেয়ে শ্রীমতি ঊষারাণী। তার বয়স যখন ১৯ বছর, তখন বিয়ে হয় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হাতিয়া গ্রামের সুবল চন্দ্রের সঙ্গে। বিয়ের এক বছর পরই কোলজুড়ে জন্ম নেয় ফুটফুটে একটি কন্যাসন্তান। সুখের সংসার কাটছিল। এরই মধ্যে মারা যান স্বামী সুবল চন্দ্র। কোলের শিশু সন্তান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় তাকে। নেই স্বামীর আর্থিক স্বচ্ছলতা। একেবারই  থমকে যায় জীবন-জীবিকা। 

বাধ্য হয়ে আবারও বসবাস শুরু করেন বাবার বাড়িতে। বাবা জগনাথ চন্দ্রও দিন এনে দিন খান। এমতাবস্থায় জীকার সন্ধানে কোলের শিশুকে নিয়ে ছুটতে হয় এদিক-সেদিক। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে সন্তানটি। একপর্যায়ে সাদুল্লাপুর বাজারের ভাই ভাই জিলাপি স্টোরে আশরাফুল ইসলামের একটি ফুটপাতের মিষ্টির দোকানে কাজ নেন। ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প এখান থেকেই শুরু হয়। সেই সময়ে মজুরি ছিল তার ৩ টাকা। প্রায় ৪১ বছর ধরে একই দোকানে কাজ করে চলেছেন তিনি। 

বর্তমানের মজুরি পান ১৭০ টাকা। এরমধ্যেই তার একমাত্র মেয়ে শিল্পী রাণীকে অনেক কষ্টে বিয়ে দিয়েছেন। থাকার টিনসেড ঘরটিও জরাজীর্ণ অবস্থায়। সারাদিন পরিশ্রম করে ঘরে ভালোভাবে ঘুমাবেন, সেটিও সম্ভব হয় না তার। ঝুকিপুর্ণ ঘরে ঝড়-বৃষ্টির আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে। এভাবে তরুণ বয়স থেকে স্বামীহারা হয়ে এখন বৃদ্ধা বয়স পর্যন্ত জীবন সংগ্রামে লেগে আছেন ঊষারাণী।

মিষ্টির দোকানের বর্তমান মালিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দোকানে জিলাপির কারিগর হিসেবে ৪১ বছর ধরে কাজ করে চলেছেন ঊষারাণী। দিনমজুরি হিসেবে আগে পেয়েছিলেন ৩ টাকা, এখন বেতন দেওয়া হয় ১৭০ টাকা। এ দিয়ে জীবন চলছে তার।’

অসহায় শ্রীমতি ঊষারাণী বলেন, ‘একটি সন্তান রেখে আমার স্বামী মারা গেছেন ৪১ বছর আগে। সেই থেকে একই দোকানে জিলাপি বানানোর কাজ করছি। এখানে সকাল ৮ থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করে দৈনিক মজুরি পাই ১৭০ টাকা। অথচ পুরুষ শ্রমিকের কাজের মজুরি দেওয়া হয় ৪০০ টাকা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাপে ৫ শতক জমি দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৩ শকত জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বাকি ২ শতক জমিতে একটি টিনের ঘর তুলে কোনোমতে বসবাস করছি। আমাকে যদি সরকারিভাবে একটি পাকা ঘর দিতেন, হয়তো শেষ বয়সে আরাম-আয়েশে রাতযাপন করতে পারতাম।’ 

কামারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহফুজার রহমান রাশেদ বলেন, ‘ঊষারাণীর ব্যাপারটি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে তাকে সহযোগিতা করা যেতে পারে।’

 ঢাকা বিজনেস/এম



আরো পড়ুন