২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



ক্যাম্পাস
প্রিন্ট

পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায়...

আব্দুল্লাহ আল মাহবুব শাফি, নোবিপ্রবি || ০৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩, ০১:৩২ পিএম
পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায়...


নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জমকালো আয়োজনের মধ্যদিয়ে শিক্ষা বিভাগের ১৩তম ব্যাচের ফেয়ারওয়েল “প্রারব্ধ” অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

যেখানে শেষ, সেখান থেকেই নতুন কিছুর শুরু ৷ তবুও শেষটা কাঁদিয়ে যায়, শেষবেলাটা সবার হৃদয়কে আবেগাপ্লুত করে তোলে। বেদনার নীল রঙে আচ্ছাদিত করে তোলে প্রাণ। শেষবেলাটা তাই রঙিন করে তুলতে কালার ফেস্টের আয়োজন। ফ্ল্যাশমবের দারুণ ছন্দের শেষেজ যেন আবিরের দমকা হাওয়া শিক্ষার্থীদের রাঙিয়ে তুললো। কিছু বোঝার আগেই ছেলেদের গায়ের টি-শার্টটি উধাও হয়ে গেলো। যেন ঈদ নেমে এসেছিল নোবিপ্রবির বুকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগের ১৩ তম ব্যাচের বিদায় উপলক্ষে ১-২ ফেব্রুয়ারি ২ দিনব্যাপী র‌্যাগ-ডের (শিক্ষা সমাপনী) আয়োজন করে একই বিভাগের ১৪ ব‌্যাচের শিক্ষার্থীরা। 


নিজেদের শেষ বেলায় নীড়ে ফেরা পাখি হয়ে নতুনদের জায়গা করে দিতেই র‍্যাগ ডে'র নাম ‘প্রারব্ধ’ দেয় আয়োজক ব‌্যাচ। সঙ্গে ‘ভাইয়ে কড়া’ ট্যাগলাইনে র‌্যাগ ডের পুরো সময়টাই ক্যাম্পাস মাতিয়ে রাখা। কাউন্টডাউন, পোস্টারিং, শিক্ষার্থীদের নাচ- গানের প্র‍্যাক্টিস, গ্রাফিতি অঙ্কন, ডেকোরেশন, টি-শার্ট এতকিছুর মাঝে ঈদ ঈদ আমেজ আসতে বাধ্য।

বিদায়ের পূর্ব মুহূর্তগুলোকে মনের পর্দায় অমলিন করে রাখতে প্রারব্ধের নানা আয়োজন। বিদায়ী ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ভাষায়, ‘নানা রঙের নানা মানুষগুলো মিলে একদিন তৈরি হয়ে যায় একটা ব্যাচ। সেই নানা রঙে সাড়ম্বরের সঙ্গে তৈরি হওয়া ব্যাচ, হাজারো গল্প-স্মৃতি সংকলনের মাধ্যমে কী করে যেন একটা নতুন অস্তিত্ব হয়ে যায়। আর জমানো সব গল্পকে স্মৃতিপটে ধারণ করে বেলা শেষে বিদায়ের প্রস্তুতি নিতে হয়।’

কালার ফেস্টের দিন সকালে বিদায়ী ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে হাজির। এর কিছুক্ষণ পরেই দেওয়া হয় সাদা টি- শার্ট। একটু পরেই যে টি-শার্টের আর অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না। শুধু র‌্যাগ ব্যাচই নয়, ক্যাম্পাসের জুনিয়র ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও হাজির সিনিয়র ভাই-আপুদের এই উৎসবে নিজেকে রাঙিয়ে নিতে। অল্প কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয়ে যায় ‘কালার ফেস্ট’। বিশ্ববিদ্যালয়  প্রাঙ্গণ সাজে হরেক রকমের রঙের মেলায়। হাজার পাওয়ারের রঙের ছোপ যেন বার বার মনে করিয়ে দিতে চায় চারটি বছরের স্মৃতিগুলো, যা চাইলেই মুছে ফেলা সম্ভব নয়। অনেকে মিলে একজনকে ঘাড়ে করে তুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পরই তাকে আবিষ্কার করা হয় মাটিতে লুটোপুটি খেতে। এর সঙ্গে ডিজে, হেড ব্যাং আর নাচানাচি তো আছেই। 

দ্বিতীয় দিন, ‘প্রারব্ধ’ এর শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস অডিটোরিয়ামে শিক্ষা সমাপনী উপলক্ষে আলোচনা সভার মাধ্যমে। প্রধান অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম শিক্ষার্থীদের জীবন গঠনের দিক তুলে ধরে নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। এসময় র‍্যাগ ব্যাচের সবার হাতে ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর, শিক্ষা বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ড. বিপ্লব মল্লিক, সহকারী অধ্যাপক ওয়ালিউর রহমান আকন্দ, সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ মো. সিয়াম, সহকারী অধ্যাপক নওরিন ইয়াসমিন, সহকারী অধ্যাপক ফাতেমা বেগম পপি প্রমুখ।

দুপুরে খাবারের পর্ব শেষে বিকেল থেকে অডিটোরিয়ামে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সিটি, প্রেজেন্টেশন, অ্যাসাইনমেন্ট, সেমিস্টার ফাইনালকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বিকেল হতেই একে একে জড়ো হতে থাকে সবাই ক্যম্পাসের অডিটোরিয়াম প্রাঙ্গণে। পুরো অডিটোরিয়াম প্রাঙ্গণ লোকে লোকারণ্য। রাত সাড়ে ১০টায় মঞ্চে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় ব্যান্ড সংগীতের দল ‘ভয়েজার’।

চলার পথে চারটি বছরের সাথী ছিল যারা, আর কি কখনো একসঙ্গে পাশে দাঁড়াবেন তারা?  কেউ জানেন না উত্তর। বুকভর্তি শূন্যতা নিয়েই ক্ষান্ত থাকেন সবাই।

নোবিপ্রবির শিক্ষা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মুসরাত জাহান মারিয়া বলেন, ‘সবসময় নোবিপ্রবির র‌্যাগ ডের গল্প শুনে এসেছি। এবার প্রত্যক্ষভাবে উপভোগ করলাম। যতটা আশা করেছিলাম তার চাইতে অনেক বেশি মজা করেছি ব্যাচমেট আর সিনিয়রদের সঙ্গে।’

আয়োজক ব্যাচের তথা শিক্ষা বিভাগের ১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী তাসনিম অরিন বলেন, ‘ডিপার্টমেন্টের প্রথম ব্যাচের জন্য বিদায়ের আয়োজন করতে পারা ১৪ ব্যাচের জন্য সৌভাগ্য। আমাদের চেষ্টা ছিল দিনটি যাতে সবার কাছে আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকে। ভাইয়া-আপুদের জন্য অনেক শুভকামনা রইলো।’

১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আনন্দ, কান্না দুই অনুভূতির মিশ্রণে একটি দিন কাটালাম। ভাইয়া আপুদের ভালো কিছু দেওয়ার সবার চেষ্টাই অনুষ্ঠানটিকে অসাধারণ করে তুলেছে। সবসময় ভালো থাকবেন আপনারা।’


যাদের জন্য এই আয়োজন সেই ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাকসুদা মীম বলেন, ‘২০১৮ এর জানুয়ারির তিন তারিখ থেকে একসঙ্গে আমরা। হাজারো স্মৃতি জড়িয়ে আছে। একসঙ্গে পরীক্ষা দেওয়া, চড়ুইভাতি, বাংলাবাজারের পেঁয়াজু কিংবা সেলিম টঙের চা, রাজনৈতিক আলোচনা কিংবা ছোট ছোট বিষয়ের খুনসুটি এগুলা ভুলবার নয়। বিদায় অবশ্যই পীড়া দেয়, তবে গত দুইদিন সবার সঙ্গে এত আনন্দ করেছি যে বিদায় বলে মনেই হচ্ছিল না। শিক্ষা বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচকে ভালোবাসা ছাড়া কিছুই দেওয়ার নেই ,এত সুন্দর আয়োজন করার জন্য।’

ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠানের সভাপতি ও নোবিপ্রবির শিক্ষা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. বিপ্লব মল্লিক বলেন, ‘তোমরা যারা এই ক্যাম্পাস থেকে বের হচ্ছো, শিক্ষা বিষয়ক গবেষণাতে তোমরা আরও বেশি অবদান রাখার চেষ্টা করবে। তোমাদের হাত ধরেই সূচিত হবে অনন্য এক বাংলাদেশ। তোমাদের সবার মঙ্গল কামনা করি।’ 

ঢাকা বিজনেস/এইচ 




আরো পড়ুন