২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার



হিলিতে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌয়ালরা

আনোয়ার হোসেন বুলু, হিলি (দিনাজপুর) || ০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩, ১০:০২ এএম
হিলিতে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌয়ালরা


দিনাজপুরের হিলিতে সরিষার ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌয়ালরা। উপজেলার বিভিন্ন সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন তারা। মৌয়ালরা জানান, এতে আর্থিকভাবে তারা লাভবান হচ্ছেন, বেকারত্বও দূর হচ্ছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, একদিকে মৌয়ালরা মধু বিক্রি করে যেমন আয় করছেন, অন্যদিকে ক্ষেতে মধু চাষ করায় সরিষার ফলনও বাড়ছে।

মৌয়ালরা জানান, তারা সরিষা ক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বাক্স ফেলে রাখেন। একেকটি বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি ছয় থেকে সাতটি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়। বাক্সের ভেতর রাখা হয় একটি রানি মৌমাছি। রানি থাকায় অন্য মৌমাছিরা আসতে থাকে ওই বাক্সে। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মৌয়ালরা এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। এতে মৌয়ালরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে তাদের দূর হচ্ছে বেকারত্ব। এসব মধু স্থানীয়ভাবে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন তারা। 


হিলির ছাতনী গ্রামের সড়কের পাশে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন পাঁচবিবি উপজেলার ভালুকগাড়ী গ্রামের ছামিউল ইসলাম। তিনি সরিষা ফুল থেকে মধু আহরণের পদ্ধতি সম্পর্কে বলেন, মধু সংগ্রহের জন্য স্টিল ও কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে বাক্স তৈরি করা হয়। বাক্সে উপরের অংশটা কালো রঙের পলিথিন ও চট দিয়ে মোড়ানো থাকে। ভেতরে কাঠের তৈরি ৭টি ফ্রেমের সঙ্গে মোম দিয়ে বানানো বিশেষ কায়দায় এক ধরনের সিট লাগানো থাকে। বাক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। ভেতরে দেওয়া হয় রানি মৌঁমাছি। যাকে ঘিরে আনাগোনা করে হাজারো পুরুষ মৌমাছির দল। রানি মৌমাছির আকর্ষণে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে পুরুষ মৌমাছিরা। একটি রানি মৌঁমাছির বিপরীতে প্রায় ১ থেকে দেড় হাজারের মতো পুরুষ মৌঁমাছি থাকে একেকটি বাক্সে। 

মৌয়াল আব্দুর রহিম বলেন, আমরা সরিষা ক্ষেত থেকে বছরে চার মাস মধু সংগ্রহ করে থাকি। বাকি আট মাস কৃত্রিম পদ্ধতিতে চিনি খাইয়ে মৌমাছিদের পুষিয়ে রাখতে হয়। ডিসেম্বর মাস থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সরিষা ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করার উপযুক্ত সময়। 

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ কেজি মধু পাওয়া যায়। আমি এই মাঠে ৮০টি বাক্স ফেলে রেখেছি। প্রতি কেজি মধু বিক্রি করছি ৪০০ টাকা দরে। 


হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. মমতাজ সুলতানা ঢাকা বিজনেসকে বলেন, এবার হিলিতে সরিষার আবাদ বেড়েছে। চাষিরা সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ১ টি পৌরসভাসহ ৩টি ইউনিয়নে ২৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগ সরিষা চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। 

ড. সুলতানা আরও বলেন, সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির চাষ হলে সরিষার ফলন ১০ গুণ বেড়ে যায়। এতে সরিষার ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সরিষা ক্ষেত থেকে বিনা খরচে মধু সংগ্রহও লাভজনক ব্যবসা। এরফলে একদিকে মৌয়ালরা মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে সরিয়া ক্ষেতে মধু চাষ করায় সরিষার ফলনও বাড়ছে।

ঢাকা বিজনেস/এইচ



আরো পড়ুন