সড়ক দুর্ঘটনার জন্য আইন-শৃ্ঙ্খলা বাহিনীর উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার জন্য জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকির অভাবই দায়ী।’ রোববার (১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
নিচসার চেয়ারম্যান বলেন, ‘আইন করে দিয়ে বসে থাকলে সড়ক নিরাপদ হবে না। মানুষ সড়ক আইন মানছে কি-না, প্রথম থেকেই তদারকি করতে হবে।’
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘ফ্লাইওভারে লেখা আছে ৬০ কিলোমিটার গতিতে চলবে গাড়ি। কিন্তু সেখানে অনেক গাড়ি ১০০ কিলোর বেশি গতিতে চলে। কিন্তু এর কোনো তদারকি নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। অথচ উচিত, এসব সড়ক চালুর পর থেকেই মানুষকে আইন মানতে অভ্যস্ত করা।’
কাঞ্চন বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতা বহুমাত্রিক হওয়ায় সরকারের একার পক্ষে তা নিরসন করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং কার্যকর উদ্যোগ। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকার ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহন আইন করেছে। কিন্তু এই আইনে কিছু কার্যকর দিক থাকলেও এর সীমাবদ্ধতা রয়েছে প্রচুর।’
আইনের সমালোচনা করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আইনে গতিসীমা লঙ্ঘনে শাস্তির বিধান বর্ণিত থাকলেও গতিসীমা নির্ধারণ হয়নি। সড়ক দুর্ঘটনার আচরণগত ৫টি মূল ঝুঁকি যেমন অতিরিক্ত গতি, স্টান্ডার্ড হেলমেট ও সিটবেল্ট ব্যবহার না করা, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, শিশুদের জন্য নিরাপদ আসনের অনুপস্থিতি বিবেচনায় রেখে সার্বিকভাবে সেইফ সিস্টেম এপ্রোচের আলোকে যথাযথ আইন ও বিধিমালা বাস্তবায়িত হলে সড়ক নিরাপদ হয়ে উঠবে।’
নিসচার চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় বাংলাদেশ রোড সেইফটি প্রকল্পে যে বরাদ্দ রয়েছে তা পুরোপুরি সেইফ সিস্টেম এপ্রোচের কাজে ব্যবহার করা। যেন সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের আলোকে সড়কে মানুষের জীবনের মৃত্যুঝুঁকি কমে। পাশাপাশি সড়কে মৃত্যু কমাতে নতুন আইনি কাঠামো প্রণয়নও এখন সময়ের দাবি।’
পথচারী তথা সড়ক ব্যবহারকারীরা প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘একটি ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়ন করে মানুষের জীবন বাঁচানোর দাবি শুধু আমাদের নয়, এটি সর্বোচ্চ মহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাই অনুধাবন করেন। সরকারের পাশাপাশি জনগণকে সড়ক ব্যবহারে আরও শতর্ক হতে হবে।’
এদিকে, জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।
নিসচার কেন্দ্রীয় ও শাখা পর্যায়ের গৃহীত কর্মসূচিগুলো হলো- ১ অক্টোবর কেন্দ্রীয় কমিটির সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সারা দেশে মাসব্যাপী সড়কের ব্যবহার সংক্রান্ত সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের উদ্বোধন। ২ অক্টোবর সারা দেশে সড়ক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম। ৩ ও ৪ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে ট্রাফিক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন এবং সারা দেশে এ কার্যক্রম। ৫ অক্টোবর সারা দেশে সড়ক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম। ৭ অক্টোবর সারা দেশে সড়ক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম।
৮ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর কাকরাইলের ট্রাফিক মোড়ে ট্রাফিক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন এবং সারা দেশে এ কার্যক্রম। ৯ অক্টোবর সারা দেশে সড়ক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম। ১০ অক্টোবর নিসচার ফেনী জেলা কমিটি আয়োজিত চালক প্রশিক্ষণ কর্মশালা। ১১ অক্টোবর সারা দেশে সড়ক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম। ১২ অক্টোবর নিসচার রাজশাহী জেলা শাখা আয়োজিত প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) ২০০ প্রাইমারি স্কুলের প্রশিক্ষণরত শিক্ষকদের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তামূলক কর্মশালা।
১৪ অক্টোবর সারা দেশে সড়ক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম। ১৫ অক্টোবর যানবাহনের গতিসীমা (যানবাহন, রাস্তা ও পারিপার্শ্বিক আস্থা বিবেচনায়) নির্ধারণ সংক্রান্ত গোলটেবিল বৈঠক। ১৬-২১ অক্টোবর সারা দেশে সড়ক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম। ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালন। ২৩ অক্টোবর দেশব্যাপী স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময়। ২৪ অক্টোবর সারা দেশে সড়ক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম। ২৫ অক্টোবর নিসচার শরীয়তপুর জেলা শাখা আয়োজিত জেলার ৩০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩০০ জন প্রধান শিক্ষক এবং জেলা প্রশাসন ও সুধী সমাজের সঙ্গে মতবিনিময় সভা।
২৬ অক্টোবর সারা দেশে সড়ক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম। ২৮ ও ২৯ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর কাকরাইলের ট্রাফিক মোড়ে ট্রাফিক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন এবং সারা দেশে একই কার্যক্রম। ৩০ অক্টোবর সারা দেশে সড়ক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম। ৩১ অক্টোবর নিসচার চট্টগ্রাম মহানগর শাখার আয়োজনে চালক প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং মাসব্যাপী কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নিসচার চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘গত ৩০ বছর ধরে নিরাপদ সড়কের জন্য যে আন্দোলন আমরা করছি, তারই ধারাবাহিকতায় সরকারের অনেক কার্যকর উদ্যোগ আমাদের কর্মেরই ফসল। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে সড়ক নিরাপত্তার জন্য সর্বস্তরের জনসচেতনতা যেমন প্রয়োজন তেমনি তৃণমূল পর্যায়ে থেকে এবং শিক্ষার মাধ্যমে এর বিস্তার ঘটাতে হবে।’
ঢাকা বিজনেস/মাহি/এনই