সেনজেন। শব্দটি অনেকের কাছেই পরিচিত। ইউরোপের ২৯ দেশ নিয়ে সেনজেন অঞ্চল গঠিত। ওই দেশগুলোর যে-কোনো একটিতে প্রবেশ করলেই ভ্রমণ করা যায় ২৯ দেশ। করা যায় কাজও। ওই দেশগুলোর মুদ্রা অভিন্ন, যার নাম ইউরো। উচ্চ আয়ের অঞ্চল হিসেবে পুরো সেনজেন অঞ্চল সবার আগ্রহের কেন্দ্রে।
বাংলাদেশিরা সেনজেন বললেও এর ইংরেজি বানান এরকম- Schengen. যার সঠিক উচ্চারণ শেঙ্গেন বা শেংগেন।
সেনজেন বা শেঙ্গেন নামটা কিভাবে এলো জেনে নেওয়া যাক।
১৯৮৫ সালের কথা। লুক্সেমবার্গের শেঙ্গেন শহরে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। লুক্সেমবার্গ হচ্ছে সেই দেশ, যে দেশের জনগণের মাথাপিছু গড় আয় বিশ্বের সর্বোচ্চ। যার পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ মার্কিন ডলার। চুক্তির ধারণাটি ছিল একীভূত ইউরোপের। চুক্তিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অভিন্ন যাতায়াত ব্যবস্থার প্রচলন করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। পরে তাতে অভিন্ন মুদ্রার ধারণাটিও যুক্ত ও বাস্তবায়িত হয়। ওই শহরের নাম অনুসারে চুক্তিভুক্ত দেশগুলোকে শেঙ্গেন কান্ট্রি বলা হয়।
শেঙ্গেনভুক্ত দেশগুলোর যে-কোনো একটিতে প্রবেশের অনুমতি পেলে বাকি দেশগুলোতে প্রবেশে কোনো বাধা নেই। কেউ যদি বিমানে বা জাহাজে এই দেশগুলোর একটির ইমিগ্রেশন পাস করে দেশটিতে প্রবেশ করে, তাহলে অন্য ২৮ টি দেশে প্রবেশে আর কোনো ইমিগ্রেশন ফেস করতে হবে না। এসব দেশের নাগরিকেরা বা রেসিডেন্ট পারমিট প্রাপ্তরা অন্য দেশে বসবাস বা চাকরিও করতে পারে। বলা চলে এখানকার অধিবাসীদের জন্য সীমান্ত উন্মুক্ত।
একজন ভিজিটর ভিসাপ্রাপ্তি সাপেক্ষে টানা ৯০ দিন এসব অঞ্চলে থাকতে পারে। এসব দেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম। প্রত্যেকটির রয়েছে রাজধানী। রয়েছে নিজস্ব ভাষা আছে। মুদ্রা একই। যাকে বলে ইউরো। তবে কমবেশি সব দেশেই ইংরেজি ভাষার প্রচলন রয়েছে।
তবে ইউরোপের মোট দেশ ৫০টি। কিন্তু শেঙ্গেনভুক্ত নয় এমন ইউরোপীয় দেশে প্রবেশে আলাদা ভিসা প্রয়োজন হয়। যেমন আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, স্কটল্যান্ড, রাশিয়া ইত্যাদি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও বিচারনীতি প্রায় একই রকম হওয়ায় আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে এই দেশগুলোর সিংহভাগই একটি সাধারণ ভিসানীতি মেনে চলে। ১৯৮৫ সালের শেঙ্গেন চুক্তি এবং ১৯৯০ সালের শেঙ্গেন কনভেনশন অনুযায়ী অঞ্চলটির আনুষ্ঠানিক নামকরণ করা হয়। এই দুটি চুক্তিই শেঙ্গেন শহরে স্বাক্ষতির হয়।
শেঙ্গেন অঞ্চলের দেশগুলো হচ্ছে, অস্ট্রিয়া, আইসল্যান্ড, ইতালি, এস্তোনিয়া, গ্রিস, চেক রিপাবলিক, জার্মানি, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, বেলজিয়াম, মালটা, লুক্সেমবার্গ, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, স্পেন, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, হাঙ্গেরি, রুমানিয়া, লিক্টেনস্টাইন ও ক্রোয়েশিয়া।
এছাড়া ইউরোপীয় তিনটি ছোট্ট রাষ্ট্র মোনাকো, সান ম্যারিনো এবং ভ্যাটিকান সিটির সঙ্গে তাদের পাশ্ববর্তী দেশগুলোর সীমান্ত প্রায় উন্মুক্ত। শেঙ্গেনভুক্ত দেশগুলোর সীমান্ত ছাড়া তাদের চলাচলের কোনো উপায় নেই। এজন্য এই তিনটি রাষ্ট্রকেও শেঙ্গেনভুক্ত হিসেবেই গণ্য করা হয়। সাইপ্রাস ও তুরস্ক এই দুটি দেশও শেঙ্গেনভুক্ত দেশ হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
শেঙ্গেনভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মানুষজন কোনো চেকিং ছাড়াই ওইসব দেশের বর্ডার অতিক্রম করতে পারে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এই দেশগুলির বিচার বিভাগ এবং পুলিশ একসঙ্গে কাজ করে। তাদের শেঙ্গেন ইনফরমেশন সিস্টেম নামে একটি আলাদা ডেটাবেস রয়েছে।
ভূমধ্যসাগরের দ্বীপ দেশ মালটা ১৯৬৪ সালে দেশটি স্বাধীন হয়। তার আগে এটি শাসন করতো ব্রিটেন। ১৯৭৪ সালে এটি রিপাবলিক মালটা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ২০০৪ সালে মালটা শেঙ্গেন বা শেনজেনভুক্ত হয়। এর মুদ্রা ইউরো। প্রধান ভাষা ইংরেজি। স্থানীয়রা ইংরেজির পাশাপাশি মালটিজ ভাষাতেও কথা বলেন।