০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার



ফোর লেন সড়কে ফোর লেন মরণফাঁদ

মো. আজহার উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া || ০৭ অক্টোবর, ২০২৪, ০৫:১০ পিএম
ফোর লেন সড়কে ফোর লেন মরণফাঁদ


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ–আখাউড়া প্রকল্পে ফোর লেন রাস্তার কাজ পায় ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ফোরলেন সড়কের কাজ ফেলে চলে যান ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আশুগঞ্জ আখাউড়া প্রকল্পের কয়েকটি স্থানে রাস্তার বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে। মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েই সড়কটিতে চলছে যাত্রীবাহী যানবাহন। রাস্তার মাঝখানে গর্ত পানি জমায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটন।  

এই ফোরলেন সড়ক দিয়ে ঢাকা, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং সিলেট-চট্টগ্রাম চলাচল করে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার যানবাহন। আশুগঞ্জ থেকে সুলতানপুর পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বাস-ট্রাক-সিএনজি রাস্তার গর্তে পড়ে উলটে পড়ছে প্রতিদিন। দীর্ঘ লম্বা জ্যামে আটকা পড়ে পাড়ি দিতে হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট পথে যাতায়াতের হাজার হাজার মানুষের এই চরম ভোগান্তি কবে শেষ হবে? এমন প্রশ্ন স্থানীয়সহ যাত্রীদের দুর্ঘটনাসহ নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে,আশুগঞ্জ থেকে ধরখার পর্যন্ত নির্মাণাধীন মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে  বিভিন্ন স্থানে বড় বড় খানাখন্দের কারণে যান চলাচলে বাধা পোহাতে হচ্ছে। বিশ্বরোড মোড়ে প্রতিদিনই তীব্র যানজট লেগে থাকছে। আবার বিভিন্ন স্থানে বাস ট্রাক উল্টে পড়ে আছে লেগে আছে দীর্ঘ জ্যামজট। শহরের ফুলবাড়িয়া থেকে পুনিয়াউট পর্যন্ত ওভারপাসটির পিলারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নিচের মহাসড়কে খানাখন্দের কারণে এই সড়ক ব্যবহার না করে শহরের ভেতর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করছে। ফলে জনদুর্ভোগ নিত্যদিনের।

সড়ক নিয়মিত যাতায়াতকারী ও গাড়িচালকরা জানান, দীর্ঘদিন কাজ হওয়ায় এ মতো মহাসড়কের আশুগঞ্জ থেকে সুলতানপুর পর্যন্ত কয়েকটি  স্থানে গর্তের সৃষ্টি গর্তে পানি জমাট হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না গাড়িগুলো দুর্ঘটনা ঘটছে চোখের সামনে সব সময় ভয় কাজ করে এই জায়গাগুলোতে আসলে। শিগগিরই সড়কের দেবে যাওয়া অংশ ও সৃষ্টি হওয়া গর্ত মেরামত করা না হলে এ সড়কধরে যানবাহন চলাচলে দুর্ঘটনা বেড়েই  যাবে। রাতে শহরের ভিতর দিয়ে যানবাহন যাতায়াত করতাম। ফ্লাইওভার এর ভারী যানবাহন বাস ট্রাক যাতায়াত বন্ধের জন্য বেরিকেট দিলেও তা ভেঙে যেতে হচ্ছে। সড়কের দ্রুত মেরামত ও কাজগুলো সম্পন্ন করার অনুরোধ করছি। 

ভারতীয় ঋণ সহায়তা ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৫ সালের ৩০ জুন। শুরু থেকে নানা কারণে প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যায়।

জানা গেছে, গত ২০১৭ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদনের পর ভারতীয় নমনীয় ঋণ এলওসির অধীনে ২০১৮ সালে তিনটি প্যাকেজে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত দু’লেন থেকে মহাসড়কটি ফোরলেনে উন্নয়ন কাজ শুরু করে ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। প্রকল্পটির কাজ শুরুর পর ২০১৯ এবং ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে প্রকল্পটির কাজ অনেকটাই থমকে যায়। পরে বালু সঙ্কটের কারণ দেখিয়ে আরো ছয় মাস দেরি করে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে ২০২২ সালে প্রকল্পটির কাজ পুরোদমে শুরু হয়। এর মধ্যে প্যাকেজ-১-এর অধীনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জের গোল চত্বর থেকে বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত একপাশের দুই লেনের কাজ মোটামুটি শেষ হয়েছে। প্যাকেজ-২-এর অধীনে বিশ্বরোড থেকে ধরখার পর্যন্ত এক পাশের কাজ অনেকাংশই শেষ হয়েছে।

আখাউড়া-আশুগঞ্জ ফোরলেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. শামীম আহমেদ জানান, আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ফোরলেন প্রকল্পটি তিনটি প্যাকেজে বাস্তবায়ন হচ্ছিল। তিনটি প্যাকেজেরই ঠিকাদার ছিলেন ভারতের এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ভারতীয়রা তাদের হাইকমিশনে নিরাপত্তার কথা বলে সবাই দেশে ফিরে গেছে। তারা কবে ফিরবে এ ব্যাপারে কিছুই জানায়নি। শ্রমিকরা চলে যাওয়ার পর থেকে আমাদের প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি বন্ধ আছে। কবে চালু হবে আমরা তা এখন বলতে পারছি না।

মো. শামীম আহমেদ আরও জানান, আমাদের প্যাকেজ-১-এর আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত মহাসড়কের ৬২ শতাংশ এবং বিশ্বরোড থেকে ধরখার বাজার পর্যন্ত ৫২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। পুরো কাজ যেহেতু ভারতীয় ঠিকাদারের অধীনে ছিল, তাই রাস্তার বর্তমানে মেরামতের দায়িত্বও তাদেরই। যেহেতু তারা নেই, তাই রাস্তা মেরামত করার মতো জনবল বা যন্ত্রপাতি আমাদের হাতে নেই। আমরা রাজস্ব খাত থেকে টাকা দিয়ে মানুষের ভোগান্তি কমানোর জন্য চেষ্টা করছি।

গত (২৭ সেপ্টেম্বর) শুক্রবার দুপুরে সড়কটি পরিদর্শনে আসেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক। তিনি জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নির্মাণাধীন ফোরলেন সড়কের কাজ কিছুদিনের মধ্যে পুনরায় শুরু হতে পারে। কিছুদিনের মধ্যে ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন ফিরে আসবে বলে জানান তিনি।



আরো পড়ুন