২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



ক্যাম্পাস
প্রিন্ট

যে কারণে জাবি ছাড়ছে পরিযায়ী পাখিরা

আরিফুজ্জামান উজ্জল, জাবি || ১৪ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৬:৩১ পিএম
যে কারণে জাবি ছাড়ছে পরিযায়ী পাখিরা ছবি: অরিত্র সাত্তার


বিগত বছরগুলোর চেয়ে এ বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আসা পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমেছে। শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি জলাশয়ে পাখি আসলেও এখন শুধু একটি জলাশয়ে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের অভ্যন্তরের জলাশয়টি সাধারণের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত বলে সেখানে পরিযায়ী পাখি আছে। ক্যাম্পাসে দর্শনার্থীর চাপ বাড়ায় ও বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের উৎপাতে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমেছে বলে জানিয়েছেন পাখি বিশেষজ্ঞরা।

পাখি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জলাশয়ের পাশে দোকানপাটে ভিড়, গাড়ির হর্ন, দর্শনার্থীদের কোলাহলের কারণে পরিযায়ী পাখি চলে গেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আতশবাজি ও পটকা ফুটানো এবং সময়মতো জলাশয় পরিষ্কার না করা ও সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের গাফিলতিকেও দায়ী করেছেন তারা।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শীতের শুরুতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট-বড় প্রায় একডজন জলাশয়ের মধ্যে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনের জলাশয়, পরিবহন চত্বরের পেছনের জলাশয়, সুইমিংপুল সংলগ্ন জয়পাড়া জলাশয় ও ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের অভ্যন্তরের জলাশয়ে অতিথি পাখি আসে। এর মধ্যে, ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের অভ্যন্তরের লেকটি সাধারণের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত এবং অন্য জলাশয়গুলো দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। 

শীতের শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরের পাশের জলাশয়সহ চারটি জলাশয় পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখর ছিল। তবে কিছুদিন পরেই তিনটি জলাশয় থেকে পরিযায়ী পাখিরা চলে গেছে। জলাশয়ের একেবারে কোলঘেঁষে থাকা দোকানপাটের কোলাহল, দর্শনার্থীদের উৎপাত, আবাসস্থল সংকট এবং পার্শ্ববর্তী সড়কের যানবাহনের শব্দে পাখিরা চলে গেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পাখি বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রতি বছর শীতের শুরুতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিযায়ী পাখি এসে থাকে। সাধারণত তীব্র শীত থেকে বাঁচতে হিমালয়ের পাশের অঞ্চল থেকে এখানে পরিযায়ী পাখি আসে। দর্শনার্থীদের উৎপাত কম থাকার কারণে বিগত দুই থেকে তিন বছর ক্যাম্পাসে আসা পরিযায়ী পাখির সংখ্যা তুলনায় বেশি ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় দর্শনার্থীদের ভিড় কম থাকায় পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বেড়েছিল। তবে এ বছর শীতের শুরুতে অনেক পাখি আসলেও দর্শনার্থীদের উৎপাতে আগেভাগেই ক্যাম্পাস ছেড়েছে পরিযায়ী পাখিরা।


পাখি বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘গত দুই-তিন বছর দর্শনার্থীর উৎপাত কম থাকায় অতিথি পাখি বেশি এসেছিল। তবে এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনার্থীদের যাতায়াত বেশি ছিল। ফলে তাদের উৎপাতে পরিযায়ী পাখি কমতে পারে। এবার ক্যাম্পাসের জলাশয়গুলোতে ছোট সরালি ও বড় সরালি পাখি দেখা গিয়েছে।’

বণ্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান বলেন, ‘উক্ত্যক্ত হওয়ায় পাখি চলে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাত্রিকালীন কিছু অনুষ্ঠানে আতশবাজি ও পটকা ফুটানো এবং সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবহারে পাখিরা বিরক্ত হয়েছে বলে মনে করছি।’ তবে এ বছর ক্যাম্পাসের জলাশয়গুলোতে ছোট সরালি ও বড় সরালির পাশাপশি আরও এক প্রজাতির পাখি দেখা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে পরিযায়ী পাখির নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনের জলাশয় ও পরিবহন চত্বরের পেছনের জলাশয়সংলগ্ন এলাকায় গাড়ি পার্কিং নিয়ন্ত্রণ, জলাশয়ের পাশে দোকানপাটে ভিড় কমানো ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আতশবাজি ও পটকা না ফুটানোর ওপর জোর দিয়েছেন এই দুই অধ্যাপক।

অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, ‘প্রতিবছরই পরিবহন চত্বরের পাশের জলাশয়ে অনেক বেশি পাখি আসে। তবে জলাশয়ের পাড়ের সাথেই গড়ে উঠেছে দোকানপাট। দোকানের পেছনের দিকে মানুষের ভিড় থাকে সবসময়। এই পরিযায়ী পাখিরা অল্পতেই ভয় পায়। তাই কোলাহল দেখে একরকম আতঙ্ক নিয়েই তারা চলে গিয়েছে।’


অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান বলেন, ‘পাখির জন্য নিরাপদ পরিবেশ রাখতে গাড়ি পার্কিং কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রাত্রিকালীন অনুষ্ঠানে আতশবাজি ও পটকা ফুটানো এবং সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবহার সীমিত করতে হবে। পাশাপাশি দর্শনার্থীরা যাতে পরিযায়ী পাখিদের উৎপাত না করে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’

পরিযায়ী পাখির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি জলাশয় লিজমুক্ত রাখা হয় বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, ‘পাখিদের জন্য জলাশয় প্রস্তুত, রক্ষণাবেক্ষণ ও সচেতনতামূলক ব্যানার-ফেস্টুন তৈরি প্রভৃতি ক্ষেত্রে বছরে লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়। পরিযায়ী পাখি বসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি জলাশয় লিজ দেওয়া হয় না। এছাড়া পাখিদের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে প্রতি বছর পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনের জলাশয় ও পরিবহন চত্বরের পেছনের জলাশয়ের কচুরিপানা ও আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়।’

ঢাকা বিজনেস/এইচ 



আরো পড়ুন