প্রত্যেক শিশুর কিছু ভালো অভ্যাস থাকে, আবার খারাপ বা বদভ্যাস থাকে। এই অভ্যাসগুলো সামাজিকভাবে মেনে নেয়া যায় না। শিশুদের এমন কিছু নেতিবাচক আচরণ বা বদভ্যাস আছে যা কখনও হতাশা বা রাগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চলুন জেনে নেয়া যাক এমন পাঁচটি বদভ্যাস সম্পর্কে।
১. ভুল স্বীকার না করা: শিশুরা ভুল থেকেই শিখবে। ভুল করে করেই বেড়ে উঠবে। তবে কিছু কিছু সময় ভুল করলে সেটা তারা স্বীকার করতে চায় না। তাই সময় থাকতেই শিশুকে শুধরে দিতে হবে, তার মনে ভুল স্বীকার করার সৎ সাহস তৈরি করতে হবে। তারা সাধারণত লজ্জা বা শাস্তির ভয়ে ভুল করে তা অস্বীকার করে। তাই এমন পরিবেশ তৈরি করুন, যাতে ভুল করার পর তাকে লজ্জা না দেয়া হয়, শাস্তির মুখোমুখি না হতে হয়। ভুল করার পর হাসাহাসিসহ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া না দেখালে ভুল করলেও সে স্বীকার করবে। এতে তার মধ্যে দায়িত্ব নেয়ার গুণ তৈরি হবে।
২. বিলম্ব: শিশুদের কোনো কাজ দিলে তারা আলসেমি করে। কাজ করলেও তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করে না। এমনটা হতে পারে শিশুর স্কুল থেকে দেয়া বাড়ির কাজ অথবা গৃহস্থালির টুকিটাকি কাজেও। ছোটবেলায় এমন করলেও বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে, এটা ভাবার সুযোগ কম। বরং এটা তার অভ্যাসে পরিণত হতে পারে, যা পরে শোধরানো কঠিন হয়। সাধারণত যেসব কাজে শিশু উৎসাহ পায় না বা আকর্ষণ বোধ করে না, সেসব কাজে সে বিলম্ব করে। কাজটি তার কাছে পর্বতসম কঠিন ও বড় মনে হলেও সে অনাগ্রহী হতে পারে। এমন অবস্থায় কাজটির ইতিবাচক দিক তুলে ধরে শিশুকে আগ্রহী করে তুলুন। অসময়ের দশ ফোঁড় সম্পর্কে তাকে ধারণা দিন। বড় ও কঠিন কাজের ক্ষেত্রে শিশুকে কাজ ছোট ছোট ভাগ করে করতে সাহায্য করুন। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারলে তার প্রশংসা করুন।
৩. অন্যের মতামত বিবেচনা না করা: শিশুরা আত্মকেন্দ্রিক হতে পারে। কোনো একটা বিষয়ে অন্যের মতামত থাকতে পারে, সেটা সে না-ও বুঝতে পারে। এ কারণে সে ভাইবোন, খেলার সঙ্গী, এমনকি বড়দের সঙ্গেও অকারণ তর্ক করতে পারে। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণে তাকে সবার সঙ্গে মিশতে দিন। নানামুখী সম্পর্কের চর্চা করার সুযোগও দিতে হবে। তাকে ভালো শ্রোতা হিসেবে গড়ে তুলুন। অন্যের বিষয়ে সমমর্মী হওয়ার গুরুত্ব বোঝান। পরিবারের যেকোনো বিষয়ে সবার মতামত নেয়ার সময় শিশুরও মতামত নিন। তার মতামতেরও যে গুরুত্ব আছে, তা বোঝান। তখন অন্যের মতামত নেয়ার গুরুত্বও সে বুঝতে পারবে।
৪. পরচর্চা: বিভিন্নভাবে শিশুরা অন্যের সমালোচনা করা শিখতে পারে। স্কুলের বন্ধুবান্ধব, বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যম, এমনকি পরিবার থেকেও। অন্যকে নিয়ে নেতিবাচক কথাবার্তা শুনলে যে সম্পর্কের ক্ষতি হয়, শিশু তা বুঝতে পারে না। পরচর্চার কারণে অন্যের প্রতি সুন্দর অনুভূতি নষ্ট হয়ে যায়। সমালোচনা নয়, বরং শিশুর সামনে অনুপস্থিত কারও প্রশংসা করুন।
৫. স্বাস্থ্যবিধিতে শিথিলতা: শিশুদের পরিচ্ছন্নতা ছোটবেলা থেকেই শেখাতে হয়। না হলে বড় হয়ে শিশু স্বাস্থ্যবিধি কম মানতে পারে, শিথিলতা দেখাতে পারে। তখন তা বড় স্বাস্থ্যসমস্যা তৈরি করতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রশিক্ষণ দিতে শিশুকে ঠিকঠাকভাবে শেখাতে হবে, কীভাবে হাত ধুতে হয়, ব্রাশ করতে হয়, নখ কাটতে হয় কিংবা টয়লেট ব্যবহার করতে হয়। না হলে এসব ছোটখাটো কাজ ভবিষ্যতে বড় স্বাস্থ্যসমস্যার কারণ হতে পারে। ছোটবেলায় এসব কাজকে শিশুর জন্য আনন্দদায়ক করতে হবে।