১৮ মে ২০২৪, শনিবার



জ্বালানি-কৃষিসামগ্রীর বাড়তি দামে দুশ্চিন্তায় চাষিরা

তোফায়েল হোসেন জাকির, গাইবান্ধা || ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৭:৩১ পিএম
জ্বালানি-কৃষিসামগ্রীর বাড়তি দামে দুশ্চিন্তায় চাষিরা


চলতি বোরো মৌসুমে গাইবান্ধায় শুরু হয়েছে চারা রোপণের কাজ। এবার মৌসুমের শুরুতে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তারা বলছেন, সম্প্রতি বিদ্যুৎ, ডিজেল, সার ও কীটনাশকের দাম বেড়েছে। ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর বোরো আবাদে শত কোটি টাকার বেশি খরচ হওয়ার আশঙ্কাও করছেন তারা। আর কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষকের কিছুটা খরচ বাড়লেও লোকসান হবে না। 

সরেজমিনে গাইবান্ধার বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়, কৃষকরা বোরো চাষে ব্যস্ত রয়েছেন। শীতকে উপেক্ষা করে ইতোমধ্যে কাদামাটিতে রোপণ করছেন চারা। অন্যান্য বছরে এই চাষাবাদের সময় তাদের মুখে হাসি দেখা গেলেও এ মলিন মুখ। সম্প্রতি বিদ্যুৎ, ডিজেল, সার-কীটনাশক ও শ্রমিকসহ অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত খরচে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

গাইবান্ধা জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর বোরো মৌসুমে ১ লাখ ২৭ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছিল। এ বছর ১ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ৪৫ ভাগ। লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া ওইসব কৃষকের জমিতে সেচ দিতে বিদ্যুৎচালিত গভীর সেচযন্ত্র ২৩৯টি, অগভীর ৩ হাজার ৫০টি, ডিজেলচালিত অগভীর ২ হাজার ৯৩২টি, এলএলপি বিদ্যুৎ ১৭ ও সোলার সেচযন্ত্র রয়েছে ৩৩টি। এসব যন্ত্র দিয়ে বোরো চাষিদের সেচের চাহিদা মেটানো হবে।

কৃষক জহির উদ্দিন বলেন, ‘গত বোরো মৌসুমে ১ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করছিলাম। এতে সর্বমোট খরচ হয়েছিল ৮২ হাজার ৫০০ টাকা। এ বছর তা হেক্টর প্রতি ৯০ হাজার টাকার বেশি খরচ হতে পারে। ফলে চলতি মৌসুমে বোরো ধান চাষের অতিরিক্ত খরচ নিয়ে চিন্তায় আছি। গত বছর বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র মালিককে হেক্টর প্রতি সেচভাড়া দিয়েছিলাম ১২ হাজার ৩০০ টাকা। কিন্তু এ বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়া সেটি মেশিন মালিক ১৭ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করেছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু বিদ্যুতের দামই নয়, সম্প্রতি বীজ, সার-কীটনাশক শ্রমিকের দামও বেড়েছে অনেকটাই। এজন্য সবমিলে এ বছরে হেক্টর প্রতি অতিরিক্ত প্রায় সাড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।’ 

আরেক কৃষক জলিল উদ্দিন বলেন, ‘প্রত্যেক বছরে বোরো ফসল ঘরে নিয়ে আমার পরিবারের চাহিদা পুরণ করি। কিন্তু এ বছর হতাশায় পড়েছি। বোরো চাষের সব উপকরণের দাম বেড়েছে। সেইসঙ্গে সার সংকট, বিদ্যুতের লোডশেডিং ও প্রাকৃতি দুর্যোগের প্রভাব পড়লে লোকসানের হিসাব কষতে হবে।’

বিদ্যুৎচালিত অগভীর সেচযন্ত্রের মালিক জামাত আলী বলেন, ‘গত বোরো মৌসুমে গৃহস্থদের কাছ থেকে বিঘা প্রতি ১ হাজার ৬৫০ টাকা নেওয়া হয়েছে। এ বছরের বিদ্যুৎ ও যন্ত্রাংশের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের কাছ থেকে সেচ ভাড়াও বেশি নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখনো বিদ্যুতের নতুন বিল হাতে পাওয়া যায়নি।’

গাইবান্ধা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তানজিমুল হাসান বলেন, ‘সেচ কার্যে কৃষকের কিছুটা খরচ বাড়লেও তাদের লোকসান হবে না। তাদের ফলন বাড়াতে এবং খরচ কমাতে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।’ 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বোরো চাষে কৃষকদের লাভবান করতে ইতোমধ্যে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু জায়গায় সমলয় পদ্ধিতে চাষাবাদ শুরু করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা বোরো ধান ঘরে তুলে অনেকটাই লাভবান হবেন।’

ঢাকা বিজনেস/এইচ



আরো পড়ুন