২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



বিশেষ প্রতিবেদন
প্রিন্ট

চুয়াডাঙ্গার খেজুর গুড়, যাচ্ছে বিদেশে

মিজানুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা || ৩১ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৫:৩১ পিএম
চুয়াডাঙ্গার খেজুর গুড়, যাচ্ছে বিদেশে গ্রাফিক্স: ঢাকা বিজনেস


শীত এলেই জমে উঠে চুয়াডাঙ্গা জেলার ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জ বাজারের খেজুর গুড়ের হাট।  শীত মৌসুমে গাছিরা খেজুর গাছের রস থেকে গুড় উৎপাদন করেন। এসব গুড় বিক্রির জন্য প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার ও সোমবার সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ হাইস্কুল মাঠে গুড়ের ভাঁড় নিয়ে হাজির হন চাষিরা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গুড় ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন। 

চুয়াডাঙ্গার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-সূত্রে জানা গেছে, এই জেলায় রয়েছে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার খেজুর গাছ। এসব গাছ থেকে রস থেকে ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন  গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।



সরোজগঞ্জের গুড়ের হাট থেকে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার ও সোমবার ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক খেজুর গুড় দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও প্রতিবছর খেজুর গাছের সংখ্যা কমার কারণে গুড় উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। চাহিদার তুলনায় গুড় উৎপাদন কম হওয়ায় বিগত বছরের তুলনায় চলতি বছর খেজুর গুড়ের দাম বেড়েছে। সুনাম থাকায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে এ জেলার গুড়।

স্থানীয় কয়েকজন গুড়-বিক্রেতা জানান, খেজুর গাছ কাটা, খেজুর গাছে ভাঁড় বাধা এবং সেই ভাঁড় থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করা অনেক সময় সাপেক্ষ। একইসঙ্গে খুব কষ্টেরও কাজ। যে পরিমাণ কষ্ট হয় গুড় উৎপাদনে সে পরিমাণ এখন আর লাভ হয় না। কিছু অসাধু গুড় ব্যবসায়ী ও চাষি অধিক লাভের আশায় গুড়ে চিনি মেশান। বিভিন্ন পন্থায় ভেজাল করে কম দামে গুড় বিক্রি করেন। সঠিক দাম না পেয়ে অনেকে এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।



গুড় কিনতে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘এই গুড়ের হাটের সুনাম দেশব্যাপী। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আসেন ভালো গুড়ের আশায়। তবে অনেকে এখন গুড়ে ভেজাল করছেন। যার  ফলে বাইরের জেলায় সুনাম ক্ষুন্ণ হয়ে চাহিদা কমে যাচ্ছে। গুড় যাচাই-বাছাই করে কেনাও অনেক কষ্ট স্বাধ্য হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া, এবছর গুড়ের আমদানি কম থাকায় দামও বেশি। এই বছর ১০/১২ কেজি ওজনের এক ভাঁড় গুড় বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়।’

পাবনা জেলার গুড় ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ৪০ বছর ধরে সরোজগঞ্জের এই হাটে প্রতি মৌসুমে গুড়ের ব্যবসা করি। এই হাট থেকে গুড় কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করি। এই হাটে আগে যে গুড় পাওয়া যেতো, সে মানের গুড় এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না। গুড়ের সঠিক মান নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এই হাটের ঐতিহ্য হারাবে।’

পাশের জেলা ঝিনাইদহ থেকে আসা গুড় ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাইকারি গুড় বিক্রি করে থাকি। এখানে কিছু পরিচিত গুড় উৎপাদনকারি চাষি আছেন। তারা আমাকে চিনিমুক্ত গুড় দেন। চিনিমুক্ত গুড়ের কারণে আমার গুড়ের অনেক চাহিদা। ভালো দামে বিক্রিও করতে পারছি।’



সরোজগঞ্জ গুড়ের হাটের ইজারাদার লিলুয়ার রহমান বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার খেজুরগুড়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ভেজালমুক্ত সুস্বাদু গুড়। সারাদেশেই চুয়াডাঙ্গার খেজুর গুড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এই হাট থেকে খেজুর গুড় দেশের বিভিন্ন জেলা ও দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে এহাটে অন্তত কোটি টাকার গুড় বেচাকেনা হয়ে থাকে। আমরা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নির্বিঘ্নে হাট পরিচালনা করি।’

চুয়াডাঙ্গা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই বাজার থেকে চাষিরা গুড় খুব সহজেই ভালো দামে বিক্রয় করতে পারেন। চুয়াডাঙ্গার গুড় অত্যন্ত সুস্বাদু। তাই সারাদেশ থেকেই পাইকারি গুড় ব্যবসায়ী এখানে থেকে গুড় কিনে নিয়ে যান। কৃষকদের উৎপাদিত গুড়ের বাজারজাত করার বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করে থাকি। কোনো প্রকার সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক সমাধান করে দেই।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন