পিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি পেলেন লিটন দাস। বাউন্ডারি দিয়ে ১৭১ বলে ১০৩ রান করেন লিটন। এর আগে গুরুত্বপূর্ণ ৭৮ রান করেন অল রাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ২৪৫ রান। টাইগাররা পাকিস্তানের চেয়ে পিছিয়ে আছে মাত্র ২৯ রানে। লিটন অপরাজিত আছেন ১২৪ রানে।
এর আগে রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওপর একটা ভূমিকম্প হয়ে গেছে। তাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে দলের টপ অর্ডার। দলীয় রান ১৪ থেকে ২৬- এই ১২ রানের মধ্যেই ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়লো একে এক ছয় ব্যাটসম্যান। দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনটা ছিল টাইগারদের জন্য ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতা।
যদিও ধ্বংসস্তূপ থেকে দলকে টেনে তুলছেন দুই টেল এন্ডার; মেহেদী হাসান মিরাজ ও লিটন দাস। তাতে যেমন ফলো অন এড়ানো গেছে, তেমনি প্রথম ইনিংসে দুই দলের ব্যবধান কমছে।
গতকাল ২৭৪ রানে পাকিস্তানকে অল আউট করে শেষ বেলায় ব্যাটিংয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। করেছিল বিনা উইকেটে ১০ রান। ৬ষ্ঠ ওভারের শেষ বলে দলীয় ১৪ রানে ফিরে যান জাকির হাসান। এ উদ্বোধনী ব্যাটার ১৬ বলে করতে পেরেছেন ১ রান। আরেক উদ্বোধনী ব্যাটার সাদমান ফিরে যান দলীয় ১৯ রানে। তার সংগ্রহ ১০। দলীয় ২০ রানে আউট হন অধিনায়ক শান্ত, করেছেন ৪ রান। ওই ২০ রানের মাথায়ই ব্যক্তিগত ১ রান করে ফেরেন মুমিনুল। এরপর মুশফিক ও সাকিব দুজনেই সাজঘরে ফেরেন দলীয় ২৬ রানের মাথায়। তাদের সংগ্রহ যথাক্রমে ৩ এবং ২।
লিটন ও মিরাজ দুজনেই দেখে-শুনে খেলে দলকে টেনে তুলছিলেন। তারা দুজনে লাঞ্চে যান দলকে ৭৫ রানে রেখে।
তবে প্রথম দিনটি কিন্তু খুবই ভালো গিয়েছিল বাংলাদেশের জন্য। রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে স্বাগতিকদের ১০ উইকেটে হারানোর পর হাওয়ায় উড়ছিল টিম টাইগার। বলা চলে প্রথম টেস্টের চেয়েও সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল দ্বিতীয় টেস্টের শুরুর দিনে।
প্রথম দিনে ২৭৪ রানে পাকিস্তানকে অল আউট করে দিয়েছিল বাংলাদেশ। এদিন জ্বলে উঠেছিলেন টাইগার বোলাররা। ৫ উইকেট পেয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
বৃষ্টির কারণে ম্যাচের প্রথম দিন শুক্রবার টস হয়নি, হয়নি খেলাও। শনিবার সকালে প্রথম টেস্টের মতোই টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। দিনের প্রথম ওভারের শেষ বলেই উইকেট পান এই টেস্টে নতুন আসা পেসার তাসকিন আহমেদ। পাকিস্তানের রান তখন শূন্য। ডাক মারেন উদ্বোধনী ব্যাটার আব্দুল্লাহ শফিক।
শান মাসুদ আউট হন দলীয় ১০৭ রানে। তার ব্যক্তিগত সংগ্রহ ৫৭। ১২২ রানে পড়ে তৃতীয় উইকেট। উদ্বোধনী ব্যাটার সাইম আইয়ুব করেন ৫৮ রান। চতুর্থ উইকেট পড়ে ১৫১ রানে, অধিনায়ক শান মাসুদ ফিরেন ৫৭ করে। বাবর আজম আউট হন ১৭৯ রানে, তিনি করতে পারেন ৩১ রান। এরপর কিছুটা প্রতিরোধ গড়েছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। কিন্তু তিনিও ফিরে যান দলীয় ২১১ রানে, তখন তার ব্যক্তিগত সংগ্রহ ২৯। সপ্তম উইকেট পড়ে ২৩৭ রানে, ১২ করে সাজঘরে ফেরেন খুররম শাহজাদ। পাকিস্তানের রান যখন ২৪৬, তখন আউট হন পেসার মোহাম্মদ আলী, যার সংগ্রহ মাত্র ২ রান। তবে অল রাউন্ডার আগা সালমান ছিলেন দুর্দান্ত। তিনি এক প্রান্ত ধরে খেলছিলেন। ৯৫ বলে ৫৪ রান করে তিনি ফিরে যান দলীয় ২৭৪ রানে। পরের ব্যাটসম্যান আবরার আহমেদ ফেরেন ওই ২৭৪ রানেই। শূণ্য রানে অপরাজিত ছিলেন মির হামজা।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সফলতম স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। তিনি পেয়েছেন ৫ উইকেট। কম যাননি তাসকিনও। তিনিও ছিলেন দুর্দান্ত, পেয়েছেন ৩ উইকেট। নাহিদ রানা এবং সাকিব আল হাসান পেয়েছেন একটি করে উইকেট। উইকেশূন্য থেকেছেন কেবল হাসান মাহমুদ।
এই টেস্টের সামনে আর মাত্র ২ দিন। শেষ দিনে বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তবে পিচ দেখে মনে হচ্ছে ভিষণ স্পোর্টি। এখানে পেসাররা যেমন ভালো করছেন, তেমিন বাজিমাত করছেন স্পিনাররাও। আগামি ২ দিনের মধ্যে ফলাফল চলে আসতে পারে।
তবে খেলাটি টেস্ট, ক্ষণে ক্ষনে যার রঙ বদলায়। আশার কথা হলো, এই টেস্ট ড্র হলেও সিরিজ বাংলাদেশে। টাইগার ভক্তদের প্রত্যাশা- আরেকটা জয় নিয়ে, ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরুক নতুন বাংলাদেশ!