১৮ মে ২০২৪, শনিবার



নরসিংদীতে বোরোর বাম্পার ফলনের স্বপ্ন চাষিদের

এইচ মাহমুদ, নরসিংদী || ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৪:৩১ পিএম
নরসিংদীতে বোরোর বাম্পার ফলনের স্বপ্ন চাষিদের


নরসিংদীতে বোরা চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ‍্যা পর্যন্ত মাঠে মাঠে বীজতলা থেকে চারা তোলা, রোপণে ব‍্যস্ত থাকতে দেখা গেছে তাদের। চাষিরা এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমি। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৪৯ মেট্রিক টন।

চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জেলার ৬ উপজেলার মধ্যে নরসিংদীর সদর উপজেলায় ৮ হাজার ৫২০ হেক্টর, পলাশ উপজেলায় ৪ হাজার ২৮১ হেক্টর, শিবপুর উপজেলায় ১০ হাজার ১৬৭ হেক্টর, মনোহরদী উপজেলায় ১১ হাজার ১৪৯ হেক্টর, বেলাব উপজেলায় ৫ হাজার ৮৪১ হেক্টর ও রায়পুরা ১৬ হাজার ৮৮২ হেক্টর।

এ পর্যন্ত মোট ২৫ হাজার ৪৯২ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। এই হিসেবে মোট লক্ষ্যমাত্রার শতকরা ৪৫ ভাগ চাষাবাদ হয়েছে। বোরো ধান রোপণের মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি জমিতে বোরো ধান চাষের পাশাপাশি বাম্পার ফলনের আশা করছে জেলা কৃষি বিভাগ।

চলতি বোরো মৌসমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও ভালো ফলন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন স্থানীয় কৃষকরা। গত বছর ভালো ফলন ও দাম পেয়ে আরও বেশি উৎসাহ নিয়ে বোরো চাষ করছেন কৃষকেরা। ফলে চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলনের আশা করছে নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যান্ত্রিক কৃষি যন্ত্র ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার দিয়ে চলছে জমি চাষ ও মই দেওয়ার কাজ । কোথাও কোথাও গভীর নলকূপ, ডোবা ও নদীতে পাম্প স্থাপন করে জমিতে সেচ দেওয়া হচ্ছে। তবে চলতি বছরে বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকায় সেচ পাম্পের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন জেলার অনেক কৃষক।

কাকডাকা ভোরে ঘন কুয়াশাকে উপেক্ষা করে শরীরে হালকা শীতের পোশাক জড়িয়ে, মাথায় গরম কাপড় পড়ে বীজতলা থেকে ধানের চারাগাছ তুলতে ব্যস্ত রয়েছেন শ্রমিকেরা। কেউ জমিতে হাল চাষ করছেন, কেউ জমির আইলে কোদাল দিয়ে কোপাচ্ছেন। কেউ আবার জৈবসার দিতে ব্যস্ত। কেউ আবার সেচের জন্য ড্রেন নির্মাণ বা পাম্পের জন্য ঘর তৈরি করছেন। অনেকে তৈরি জমিতে পানি সেচ দিয়ে ভিজিয়ে রাখছেন। কেউ আবার বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলে রোপণের জন্য মাথায় করে জমিতে নিয়ে যাচ্ছেন । সবমিলিয়ে বোরো ধান রোপণের যেন ব্যস্ততার শেষ নেই। নরসিংদীর সর্বত্রই বোরো চাষাবাদের উৎসব বিরাজ করছেন।

নরসিংদী সদর উপজেলার মহিষাশুরা এলাকার বোরো চাষি জামাল উদ্দিন বলেন, ‘গত বছর বোরো চাষ করে দাম ভালো পেয়েছিলাম। এবারও সেই আশায় সাড়ে সাত বিঘা জমি বোরো ধান রোপণের জন্য প্রস্তুত করেছি। দুই তিন দিনের মধ্যেই ধান রোপণের কাজ শেষ করতে পারবো।’

একই উপজেলার গণেরগাও এলাকার বোরো চাষি জয়নাল মিয়া বলেন, ‘গত মৌসুমে উফসী ও হাইব্রিড জাতের বোরো রোপণ করে ধানের ভালো ফলন পেয়েছিলাম। বাজার দর ভালো থাকায় মোটামুটি লাভের মুখ দেখেছিলাম। এবছর শ্রমিকের মজুরি অনেক বেশি। তাই স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলেই বোরো ধান রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করছি।’

নাগরিয়া কান্দি এলাকার ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘বোরো মেসৈুমের শুরুতে কোল্ড ইনজুরির কারণে বীজতলার অনেক চারা নষ্ট হয়ে গেছে। কোল্ড ইনজুরি থেকে চারা রক্ষার্থে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে বীজতলার চারা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখেছিলাম। এখন রোপণ করা জন্যে বীজতলা থেকে চারা তোলা শুরু করেছি।’

করিমপুর এলাকার বর্গাচাষি শুক্কুর আলী বলেন, ‘গত বছর ৮ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপণ করে বেশ লাভের মুখ দেখেছিলাম। জমি চাষাবাদ খরচ ও সারের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় এই বছর মাত্র ৩ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করছি।’ তিনি বলেন, ‘আমার নিজের কোনো জমি না থাকায় অন্যের জমি চাষ করেই কোনো রকমে খেয়ে পরে বেঁচে আছি। শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী চরের ফসলী জমির মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে আবাদযোগ্য জমি কমে যাচ্ছে। এছাড়া শ্রমিকের মজুরি ও কৃষিসামগ্রীর দাম লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকায় কৃষিকাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছি।’

ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে এ অঞ্চলে কাজ করতে আসা কৃষি শ্রমিক হেমায়েত উল্লাহ বলেন, ‘করোনার কারণে সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম আমার বড় ছেলেকে হারিয়ে ফেলেছি। তার মৃত্যুতে আমাদের পরিবারে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। তাই পরিবারের সবার মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দিতে এই এলাকায় বোরো ধান রোপণ করতে এসেছি। এখানে আমাদের এলাকার তুলনায় পারিশ্রমিক অনেক বেশি পাওয়া যায়। ধান রোপণ করে একেকজন শ্রমিক থাকা খাওয়া ছাড়াও দৈনিক ৪ থেকে ৫ শত টাকা মজুরি পাই। এতে কোনো রকম সংসার চলে যায়।’

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক, কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা ড. মাহবুবুর রশিদ বলেন, ‘ধানের ফলন ও দাম ভালো। তাই ধানচাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা। নরসিংদী জেলায় বিরি ধান ৮৮, ৮৯, ৯২ ও বঙ্গবন্ধু ১০০-এ প্রজাতির ধানের আবাদ বেশি হয়। বোরো হাইব্রিড ও স্থানীয় প্রজাতির বোরোর আবাদও হচ্ছে। এবারও  লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ বাম্পার ফলনের আশা করছি।

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন