২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



ঈদে লাখো পযর্টক বরণে প্রস্তুত কক্সবাজার

তাফহীমুল আনাম, কক্সবাজার || ০৯ এপ্রিল, ২০২৪, ০৩:০৪ পিএম
ঈদে লাখো পযর্টক বরণে প্রস্তুত কক্সবাজার


ঈদুল ফিতরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পহেলা বৈশাখের লম্বা ছুটি। তাই বাংলাদেশের সবচেয়ে পর্যটন আকর্ষণ কক্সবাজার রমজান মাসের মন্দার পর পর্যটকদের স্বাগত জানাতে মুখিয়ে আছে। এই টানা ছুটিতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে ভিড় করবে লাখো পর্যটক। তাদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত কক্সবাজার। এরই মধ্যে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউজের ৯০ শতাংশ রুম অগ্রিম বুকিং হয়েছে। পর্যটকদের আনন্দে যেন ভাটা না পড়ে তাদের বাড়তি আনন্দ দিতে থাকছে নানা আয়োজন আর চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) কক্সবাজার শহরের সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন পর্যটন এলাকাগুলোতে গিয়ে দেখা যায় পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকলের নানান ব্যস্ততা।

ব্যস্ততা বেড়েছে সৈকত পাড়ের শামুক-ঝিনুক, আচার, শুটকি ও বার্মিজ পণ্যের দোকানে। এরইমধ্যে দোকানগুলোতে শুরু হয়েছে নতুন সাজ, থাকছে বাহারি পণ্য। এছাড়া হোটেল-মোটেলগুলোতেও আনা হয়েছে নতুনত্বের ছোঁয়া। লম্বা ছুটিতে এবার চাঙা হবে পর্যটন ব্যবসা এমনই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

হোটেল-মোটেলগুলোতে ৯০ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়েছে জানিয়েছেন কক্সবাজার হোটেল- মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার। তিনি বলেন, ‘পর্যটন নগরীর প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ রুম ইতোমধ্যেই বুকিং হয়ে গেছে। আমরা আশা করছি, ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে প্রায় আড়াই লাখ লোকের সমাগম হবে। পর্যটকদের স্বাগত জানাতে আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ।’

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি তোফায়েল আহমেদ ভিন্নমত দিয়ে ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘ঈদের পর প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ পর্যটক আসবে বলে আশা করছি। অনেক হোটেল পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে। কক্সবাজারে প্রচুর রেস্তোরাঁ থাকায় পর্যটকদের অতিরিক্ত সমাগম তাদের খাবারের সংকটে ফেলবে না।’ 

তোফায়েল পর্যটকদের বিনোদনের সুবিধা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘কক্সবাজার পর্যটকদের জন্য কিছু রাইডস, মেরিন ড্রাইভ ট্যুর এবং প্যারাসেইলিং বাদে নামমাত্র বিনোদনমূলক ব্যবস্থা আছে।’ শিল্পে বিনোদন সুবিধা বাড়াতে একটি পৃথক পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। 

এদিকে, কক্সবাজারে পর্যটকদের আনার জন্য ঈদের পর ১০ দিনের জন্য চট্টগ্রাম ও ঢাকার মধ্যে বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে তূর্ণা এক্সপ্রেস ও মহানগর এবং চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটের মেঘনা এক্সপ্রেসও ওই দশদিন কক্সবাজারে আসতে পারে বলে স্টেশন মাস্টার গোলাম রব্বানী জানিয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জানায়, পর্যটকদের যে-কোনো ধরনের হয়রানি রোধে ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি মোবাইল টিম দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া নিয়োজিত থাকবে পুলিশের বাড়তি ফোর্স।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘নতুন সাজে সেজেছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। এর একদিকে ঈদের রঙ অন্যদিকে পহেলা বৈশাখের রঙ। কক্সবাজারে আগত পর্যটকরা ভিন্নমাত্রা পাবে এবার। যেহেতু সৈকতের কিটকট, জেট স্কি, বিচ বাইক এবং টিউব সবগুলো নতুন রঙে সাজানো হয়েছে, সেহেতু নতুন মাত্রায় উপভোগ করতে পারবেন

পর্যটকরা। অন্যদিকে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ফটো-ফ্রেমও করা হয়েছে। সৈকতের সব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। পর্যটকদের যাতে কোনোভাবেই হয়রানি করা না হয়, এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে সবাইকে। কেউ যদি কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায়। অপ্রতীতিকর ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তায় যা যা করা দরকার, তার কোনো ঘাটতি ট্যুরিস্ট পুলিশ রাখেনি। সব ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আমরা আরও কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। সেগুলো হলো: সমুদ্র সৈকত থেকে ট্যুরিস্ট পুলিশের জরুরি সেবা পেতে বাটন স্থাপন করা হয়েছে। যেটি প্রেস করলেই পৌঁছে যাবে ট্যুরিস্ট পুলিশ। অথবা ইন্টারকমে ১০০-তে কল করা যাবে। এছাড়া ০131015899৫ নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ করা যাবে। ০১৩২০১৬০০০০ নম্বরে কল করলেই মিলবে জরুরি সেবা। মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে গেলে ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যটকদের জন্য চার্জ দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ 



আরো পড়ুন