২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



লাখো মানুষের দুর্দশা ঘোচাতে পারে একটি সেতু

আজহার উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া || ২৩ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৫:৩১ পিএম
লাখো মানুষের দুর্দশা ঘোচাতে পারে একটি সেতু


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল এলাকায় ছেত্রা নদী পার হতে দুটি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের বাসিন্দারা প্রতিবছর বৃহৎ বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন। একটি পাকা সেতু নির্মাণের অপেক্ষায় ওইসব গ্রামের লাখো মানুষ। প্রায় ৫০ বছর ধরে অপেক্ষা করছেন তারা। ভুক্তভোগীরা জানান, আদৌ সেখানে কোনো পাকা সেতু নির্মাণ হবে কি না, তা জানেন না তারা। এলজিইডি বলছে, সেতু নির্মাণের প্রস্তাব ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। প্রক্রিয়া শেষে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। 

স্থানীয়রা জানান, শুষ্ক মৌসুমে সাঁকোতে পারাপার সম্ভব হলেও বর্ষাকালে তাদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। বাসিন্দারা বর্ষাকালে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে নৌকা ব্যবহার করেন, শুষ্ক মৌসুমে তাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম বাঁশের সাঁকো, যা প্রায় ৯০০ ফুট লম্বা এবং ছয় ফুট চওড়া। শুধু একটি সেতুর অভাবে ওই এলাকার মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছেন।

ভোগান্তি পোহানো গ্রামগুলোর হচ্ছে- অরুয়াইল ইউনিয়নের রাণীদিয়া, কাকুরিয়া, রাজাপুর, অরুয়াইল, বাদে-অরুয়াইল, বারপাইকা, বুনিয়ারটেক, ধামাউড়া, দুবাজাইল এবং পাকশিমুল ইউনিয়নের পাকশিমুল, ফতেহপুর, পরমানন্দপুর, হরিপুর, সাতবাড়িয়া ও বরইচারা।

জানা যায়, বিভিন্ন গ্রামের মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে ১৯৯৭ সালে বাঁশের এই সাঁকোটি প্রথমে নির্মাণ করেছিলেন। এরপর থেকে তারা প্রতিবছর বর্ষা এলে পুরনো সাঁকোটি তুলে নেন এবং শুষ্ক মৌসুমে আবারও সাঁকো স্থাপন করেন। বর্ষাকালে গ্রামের মানুষ ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নদী পারাপারে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। 

রাণীদিয়া উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বশির আহমেদ বলেন, ‘সাধারণত স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রী এবং রোগীরা, বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের এই পরিস্থিতির কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নিতে হয়। 

সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর পূর্ব প্রান্তে অরুয়াইল বাজার, দুটি উচ্চ বিদ্যালয়, কয়েকটি মাদ্রাসা, দুটি কলেজ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, ব্যাংকসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস রয়েছে। এই বাঁশের সাঁকো ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার কোনো বিকল্প পথ নেই ১৫ গ্রামের মানুষের।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ওই এলাকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। হাওরবেষ্টিত, কৃষি নির্ভর এই গ্রামগুলোতে উৎপাদিত ধানসহ বিভিন্ন ফসলাদি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। 


অরুয়াইল আব্দুস সাত্তার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মুখলেছুর রহমান বলেন, ‘পাকা সেতু নির্মাণের জন্য আমরা বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে আবেদন জানিয়েছি কিন্তু তা এখনো পূরণ হয়নি। অনেক রাজনৈতিক নেতা নির্বাচনের আগে আমাদের দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু নির্বাচনের পর তারা তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কথা ভাবেননি।’ 

স্থানীয় রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা ও দেউবাাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছালাতুর রহমান সবুজ বলেন, ‘প্রায় ২৫ বছর আগে সাঁকোটি গ্রামবাসী নির্মাণ করেছিলেন। গ্রামের মানুষ প্রতিবছর সাঁকোটি মেরামত করতে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী চাঁদা দেন এবং মেরামতে খরচ হয় প্রায় ৪ লাখ টাকা।’

অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘ছেত্রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা তো দূরের কথা দেশ স্বাধীনের ৫০ বছরেও এই এলাকার মানুষ পুরনো বাঁশের সাঁকো মেরামতের জন্য কখনোই সরকারিভাবে কোনো আর্থিক সহায়তা পাননি। বর্ষাকালে গ্রামের সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের নদী পারাপারে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এজন্য নদীর ওপর একটি সেতুর দাবি জানাচ্ছি।’ 

এ বিষয়ে এলজিইডির সরাইল উপজেলার মাঠ পর্যায়ের আবাসিক প্রকৌশলী আব্দুল হালিম বলেন, ‘১০০ মিটারের চেয়ে বড় আকারের সেতু নির্মাণের জন্য আলাদা প্রকল্প প্রয়োজন। এই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাব তৈরি করে সফট কপি ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে এটা প্রক্রিয়া শেষে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।’

ঢাকা বিজনেস/এইচ



আরো পড়ুন