পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে টাঙ্গাইলে বেড়েছে হাতে ভাজার মুড়ির চাহিদা। মুড়ির চাহিদা সারাবছর থাকলেও রোজার সময় বিক্রি বেড়ে যায় কয়েক গুণে। এতে মুড়ি তৈরির কারিগররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে মুড়ি তৈরির উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত মুড়ি প্রস্তুতকারীরা। সংকট উত্তরণে স্থানীয়ভাবে মুড়ি বিক্রির জন্য একটি বাজারের দাবি তাদের।
জানা গেছে, জেলার কালিহাতী উপজেলায় নারান্দিয়া ইউনিয়নে দুটি গ্রামে মুড়ি প্রস্তুত করছে মুড়ি কারিগররা। এখানকার উৎপাদিত মুড়ির সুনাম বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে রয়েছে। তাই এই মুড়ি জেলার চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী সিরাজগঞ্জ,রাজশাহী, পাবনা, জামালপুর মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলায় চলে যাচ্ছে। মুড়ি উৎপাদনের সঙ্গে নারান্দিয়ার ইউনিয়নের মানুষ অনেক আগে থেকেই জড়িত। একশ্রেণীর মানুষ সর্বদাই হাতেভাজা মুড়ি খেয়ে থাকেন। হাতে ভেজে মুড়ি তৈরি ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন বহু পরিবার। বিশেষ করে মোদক সম্প্রদায়।
স্থানীয় মুড়ি কারিগর জলিল বলেন, ‘খড়ি ২৫০ টাকা মণ, ধান ১ হাজার ৩০০ টাকা মণ। ধান সেদ্ধ করে রোদে শুকানোর পর মেশিনে মাড়াই করে মুড়ি ভাজার জন্যে চাল তৈরি করা হয়। সেই চাল দিয়ে লবণ জলের মিশ্রণে আগুনে তাপ সহ্য করে বিশুদ্ধ মুড়ি ভাজতে অনেক পরিশ্রম হয়। কিন্তু লাভ বেশি টেকে না। পরিশ্রমের দাম ওঠে না।’
খালেদা বলেন, ‘ভোর হতে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত এক টানা মুড়ি ভাজি। আবার দুপুর ২ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মুড়ি ভাজি। আগুনের তাপে দুটি হাতে কয়েক জায়গাতে কালো চিহ্ন হয়েছে। এই চিহ্নর দিকে তাকাইতে সময় নেই। কারণ আমার ছেলে মেযেদের মুখে ভাত দিতে এবং তাদের পোড়াশোনা করাতে উর্পাজন করতে হবেই। এটি আমাদের আরও ভালো লাগতো, যদি আমাদের বাড়ির পাশে যে বাজার আছে, সেখানে বড় পরিসরে মুড়ি বিক্রির বাজার হতো। কারণ এখানে আমরা সরাসরি বাজারে তুলে নিজেরাই বিক্রি করতে পারবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘সকাল থেকেই বাড়ি বাড়ি পাইকার ঘোরাঘুরি করে মুড়ি কেনার জন্য। পাইকাররা যে দামে কিনবে, তার চেয়ে বেশি দামে আমরা শহরের বিভিন্ন জায়গাতে বেশি দামে বিক্রি করতে পারি।’
বন্যা কর্মকার বলেন, ‘গরিব মানুষ এই কাজ কইরা অনেক দিন ধরে খাই। সরকারের কাছে আমরা সাহায্য চাই। আমরা বংশ পরম্পরায় এই মুড়ি ভাজা ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সব কিছুর দাম বেশি। সরকার যদি আমাদের সুদমুক্ত ঋণ দিতো, তাহলে আমরা টিকে থাকতে পারতাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই বছর আমার কাছে কোনো টাকা ছিল না। আমার বোন শুক্লা কর্মকার দুই মণ ধানের চালান দিয়েছিল। দিনরাত পরিশ্রম করে সংসার চালিয়ে ৮ মণ ধানের চালান বানিয়েছি। আমার নানি মুড়ি ভেজে আমার মাসহ মাসিদের বড় করেছে। আমার মা তার শ্বশুর বাড়ি থেকে এসে এই মুড়ি ভাজার কাজে লিপ্ত হয়। সেখান থেকেই ছোট অবস্থায়ই মুড়ি ভেজে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। আমাদের অন্য কোনো পেশা বা অন্য কোনো উপাজনের পথ নেই।’
হাসি বলেন, ‘লাভ বেশির ভাগই চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। রমজান মাসে দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা মুড়ি কিনে জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় বিক্রি করেন। এছাড়া, জেলার বাইরে নিয়ে যান। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো থাকায় পার্শ্ববর্তী জেলায় নারান্দিয়ার মুড়ি সরবারহ হয়। আরও বলেন রমজান শেষে আমাদের ব্যবসা ভালো না থাকায় কষ্টে দিনপাত করতে হয়।’
নারান্দিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শফি উদ্দীন বলেন, ‘রমজানে প্রায় কয়েক লাখ টাকার মুড়ি প্রতিদিন হাতে ভেজে তৈরির হলেও বছরের অন্য সময়ে অর্ধেকে নেমে আসে। কয়েক শতাধিক শ্রমিক এবং ৫০০ থেকে ৭০০ পরিবার প্রত্যক্ষভাবে ও বিপুল সংখ্যক মানুষ পরোক্ষভাবে মুড়ি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। ফলে রমজানে কাজের চাপে দম ফেলার সময় পায় না মুড়ি উৎপাদনকারীরা। তাদের জন্য স্থানীয় একটি জায়গায় বাজারের জন্য চেষ্টা চলছে।’
এই ব্যাপারে কালিহাতী উপজেলার নির্বাহী অফিসার শাহাদাত হুসেইন বলেন, ‘ওখানে ছোট একটি বাজার আছে। তারা যদি মনে করেন সেখানে জায়গার সমস্য তাহলে সেটিও দেখবো। এছাড়া, তাদের সহযোগিতার জন্য উপজেলা থেকে কয়েকটি অফিস আছে, যেমন যুবউন্নয়ন,মহিলা সংস্থা ও সমাজ সেবাসহ কয়েকটি অফিস হতে সহজ শর্তে তাদের ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।’
ঢাকা বিজনেস/এনই/